পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাবলী মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে স্টকহোমে এক মহাসম্মেলন বসেছিল ১৯৭২ সালে। এই সম্মেলনের পর গৃহীত হয় বিশ্ব পরিবেশ কর্মসূচী টহরঃবফ ঘধঃরড়হং ঊহারৎড়হসবহঃ চৎড়মৎধসসব. এ কর্মসূচীর আওতায় গত ৪৮ বছর যাবত আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে পরিবেশজনিত সমস্যাবলী নিরসনে তৎপরতা চলে আসছে। এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য তিনটি: (এক) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব অঞ্চলভিত্তিক পরিবেশগত সমস্যাবলী নির্ধারণ করবে। (দুই) বিভিন্ন দেশ চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাবলীর ব্যাপারে গবেষণা চালাবে। এতে সমবেতভাবে এবং পারস্পরিক সমঝোতা রেখে অংশগ্রহণ করবেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারগুলোর বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা। প্রয়োজনে তাঁরা আন্তর্জাতিক গবেষকদের সাহায্য নেবেন এবং সেই সঙ্গে এক দেশের গবেষণালব্ধ ফলাফল যাতে অন্যান্য দেশের গবেষকরা অবাধে পেতে পারেন তার ব্যবস্থা থাকবে। (তিন) গড়ে তুলতে হবে যথাযথ পরিচালন ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করবে দেশের সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যার লক্ষ্য হবে জনসাধারণের মাঝে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে উপযুক্ত মানসিকতা গড়ে তোলা।
১৯৭২ সালের পর থেকে প্রতিবছর তুলে ধরা হয় পরিবেশগত এক একটি বিষয়। কোন বছর পানিদূষণ, কোন বছর বায়ুদূষণ। কোনো বছর বা শব্দদূষণ ইত্যাদি। বিভিন্ন সভা-সমিতি এবং প্রচার মাধ্যমে সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত হয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। তারপর সব চুপচাপ। যেসব আমলার উপর পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যাবলী সমাধানের পরিচালনাভার ন্যস্ত, তাদের অনেকেই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেন কম। কাজ করেন দায়সারার মত, চাকরির তাগিদে। মুখে বলা হয়, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুদ্ধ করুন। কাজ করতে সাহায্য করুন। বাস্তবে তার প্রায় কিছুই হয় না। গবেষণার নামে আমাদের দেশে যা চলছে, তার সঙ্গে বাস্তবের যোগ কম। এক কথায়, গত ৪৮ বছরে সামগ্রিকভাবে গোটা বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যাবলীর তথ্যনির্ভর কোন ছবি এখন পর্যন্ত তুলে ধরতে পারেননি আমাদের গবেষকরা। তৈরি করতে পারেনি এমন মানসিকতা, যা দেশের নাগরিকদের পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী করে তুলতে পারে। বিদেশ থেকে ধার করা কিছু চিন্তা-ভাবনা নিয়ে তারা তাত্তি্বক বা পরীক্ষামূলক গবেষণা করেন। পরিবেশ দূষণ বেশিরভাগই আঞ্চলিক সমস্যা। গবেষণা যদি আঞ্চলিক সমস্যানির্ভর না হয়, তার প্রক্ষেপ জনসাধারণের মনে কোনো প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করতে পারে না। গড়ঃরাধঃরড়হ-এর ব্যাপারে এটা বড় রকমের একটা অন্তরায়।
কেন আঞ্চলিক? ‘শব্দ’ সমস্যার কথাই ধরুন। অনাকাক্সিক্ষত শব্দ যে ক্ষতিকর একথা অনেকেই এখন জানেন। মাইকের চিৎকার, ট্রাক অথবা গাড়ির হর্ন, কারখানার যান্ত্রিক শব্দ-এসবতো আছেই, এমন কি ঘরে যাঁদের এয়ারকন্ডিশনার বা ফ্যান চলে, তার শব্দও যে ক্ষতিকর সে তো এখন প্রমাণিত সত্য। ছোট-বড় শহরে চলে অজস্র ট্রাক, মিনিবাস, বাস, ট্যাক্সি ইত্যাদি। এক একটি হাইওয়ে দিয়ে চলে পিঁপড়ার সারির মতো দৈত্যাকার ট্রাক। এসব হাইওয়ে কখনো ছোট-বড় শহর, গ্রাম, হাসপাতাল অথবা স্কুল-কলেজের পাশ দিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে শব্দদূষণ সমস্যা অঞ্চলভিত্তিক। শব্দ মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, রক্ত সংবহন ব্যবস্থায় ত্রæটি ঘটায়। হ্রদরোগের কারণ হয়। অনিদ্রা, পেপটিক আলসার-কত কি-ই না ঘটায়। শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম প্রভৃতির কথাই ধরুন। এসব শহরে কোন অঞ্চলে দিন বা রাতের কোন সময়ে যানবাহনজনিত শব্দের মাত্রা কতটা দাঁড়ায় এ তথ্য কে দিতে পারেন? যারা ঐসব শব্দ অধ্যুষিত অঞ্চলে বাস করেন, অনাকাক্সিক্ষত শব্দের দরুন তারা কতটা শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে অসুস্থ, গবেষণা তো দূরের কথা এখনো সে সম্পর্কে ন্যূনতম সমীক্ষাও কি কেউ করে দেখেছেন? করা হয়নি। অথচ জনসাধারণকে সজাগ করে তুলতে গেলে এটা দরকার। কোন অঞ্চলের মানুষ যখন জানতে পারবে মাইকের চিৎকার এবং ট্রাক-বাসের হর্নের শব্দে কতটা তারা ক্ষতিগ্রস্ত, ব্যাপারটা সম্পর্কে নিশ্চয় তারা সজাগ হবেন, সতর্কও। আর তখনই তাদের মাঝে গড়ে উঠবে প্রতিবিধানের উদ্যোগ। শব্দের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন। নিউইয়র্ক, শিকাগো অথবা লন্ডনের সমীক্ষা শুনিয়ে এ কাজ সম্ভব হয় না। পরের ঘর পুড়লে আশপাশের বেশিরভাগ মানুষ হয় দর্শক। একমাত্র নিজের চালে আগুন ধরলে তবেই সে তৎপর হয়ে আগুন নেভাতে এগিয়ে আসে। ব্যাপারটা কতকটা সেই রকম। এটা গেল একটা দিক। সরকার থেকে আইন করা হয়েছে বিস্তর, নিয়ম-কানুনও কম নেই। বাস-ট্রাক যাতে ডিজেলের বিষাক্ত ধোঁয়া না ছড়ায় তার জন্যও আইন আছে। কিন্তু কে দেখছে সেসব? বেসরকারি বাস-ট্রাক চালকদের নৈতিক দিক দিয়ে সেসব আইন শোনানোর কোন যুক্তি নেই। পুলিশের কানের পাশে চলে বুক ফাটানো হর্নের শব্দ। পুলিশ নিশ্চুপ। কথায় বলে, জনসাধারণের চাপ না থাকলে আইন কাজ করে না। বছর বিশেক আগে পরিবেশ দূষণ নিয়ে মার্কিন দেশের মানুষ যখন সজাগ হয়ে উঠেছিল তখন সে কি শোরগোল! এ সজাগতার পেছনে কাজ করেছিল সেখানকার প্রচার মাধ্যমগুলো। তারপর এগিয়ে আসে সেখানকার বেসরকারি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের নেতৃত্ব দেন সে দেশের বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজসেবী এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। রীতিমতো আন্দোলন চলে দেশ জুড়ে। কারখানার জঞ্জাল যাতে নদী, হ্রদ এবং সমুদ্রে না নিক্ষেপ করা হয় তার জন্য চলে প্রতিবাদ মিছিল! ট্রাক-বাস অন্যান্য গাড়ি যাতে পথে পেট্রোল এবং ডিজেলের ধোঁয়া না ছড়ায় তার জন্য প্রতিবাদ। কারখানার চিমনিগুলোর উদগীরিত ধোঁয়া যাতে জনস্বাস্থ্য, পশুস্বাস্থ্য এবং ফসলের ক্ষতি না করে, সে ব্যাপারেও সোচ্চার হল সবাই। মোটকথা, পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে দেশের প্রতিটি মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ে নামে।
তার ফলও মেলে অচিরেই। সরকার কড়া আইন প্রণয়ন। দৃঢ় হাতে আইন রক্ষার কাজ শুরু হয়। এখন সে দেশের প্রায় শহরই জঞ্জালমুক্ত। পরিবেশ জঞ্জালমুক্ত রাখার ব্যাপারে সেখানে সবাই এখন তৎপর। মূল সমস্যা কোথায়? ঢাকার ব্যাপারটা একটা দৃষ্টান্ত মাত্র। গোড়াতেই বলেছি, পরিবেশ বিষয়ক সমস্যাগুলো আঞ্চলিক ভিত্তিতে প্রথম নির্ণয় করা দরকার। যেমন ধরুন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চলে মানুষের চাপ বাড়ছে যেমন তেমনি গ্রামাঞ্চলেও গড়ে উঠছে ছোট-বড় উপনগরী। দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ এসব বসতি অঞ্চল স্থাপনের পেছনে কোন পরিকল্পনা থাকে না। মানুষ সেখানে জমি কেনে। যে যার সঙ্গতি এবং পরিকল্পনা মত ঘর বাঁধতে শুরু করে। গোড়ায় সেসব জায়গায় অবশ্য কোন সমস্যা থাকে না। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে সেখানে গড়ে উঠে অজস্র ঘর-বাড়ি। অথচ সেখানে থাকে না সুপরিকল্পিত পথঘাট, নালা-নর্দমার ব্যবস্থা। ফলে ঐসব অঞ্চল কিছুকালের মাঝেই দূষিত এলাকায় পর্যবসিত হয়। একই হাল গ্রামগুলোর বসতি এলাকাতেও।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে আরো নানা কারণে। অন্যতম কারণ চাষবাস। অধিক ফলনশীল ফসল ফলাতে গিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে নাইট্রোজেন সার, ফসফেট সার ইত্যাদি। নাইট্রোজেন সারের কিছু অংশ থেকে তৈরি হয় নাইট্রোজেনের অক্সাইড। এই অক্সাইড যে ঊর্ধ্বাকাশের ওজোন স্তরের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে ওজোন স্তর হাল্কা করে দিচ্ছে তার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটা আশংকার কারণ। সূর্য থেকে বিকীর্ণ হয় নানা রকম রশ্মির সঙ্গে অতিবেগুনী রশ্মিও। ওজোন স্তর এ অতিবেগুনীর বড় রকম অংশ শোষণ করে, যা অব্যাহতভাবে পৃথিবীর বুকে বর্ষিত হলে জীবজগতের ক্ষতি হতো। ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ত মানুষের জীবনে। এছাড়া জমিতে দেয়া অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার সেচ অথবা বর্ষার পানিতে ধোয়ানি হিসাবে পুকুর, হ্রদ এবং নদীতে গিয়ে পড়ে। তার ফলে যে সব জায়গায় বাড়বাড়ন্ত ঘটে জলজ গাছপালার। পানিতে অতিরিক্ত গাছপালা হলে পানি-মিশ্রিত অক্সিজেনে পড়ে টান। ঐ সব গাছপালা পচে পানিও দূষিত হয়। এর ফলে মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর জীবন দুর্বিষহ হয়। তাদের উৎপাদন কমে। এ সঙ্গে কীটনাশক ওষুধের কথাও আসে। অতিরিক্ত কীটনাশক ওষুধ মাছের পক্ষে ক্ষতিকর যেমন-পরোক্ষভাবে তা মানুষ এবং অন্যান্য স্থলজ প্রাণীর পক্ষেও ক্ষতিকর। মাছে শরীরে জমে বিষ। সেই মাছ খেয়ে মানুষ বিষক্রিয়ায় ভোগে। শস্য দানার মাঝেও জমে বিষ। সেই শস্য বিপদ ঘটায়। পশু-পাখিও বিষে আক্রান্ত হয়। এতে করে দেশের অনেক পশু-পাখি সংখ্যায় কমেছে অথবা অবলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনা দেশের ঠিক কোথায় কোথায় ঘটছে সেটা দেখা দরকার। এ ব্যাপারে বিশদ সমীক্ষার প্রয়োজন। এটা করা গেলে তবেই ঐসব বিষয়ে প্রতিবিধানের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোন কাজই হয়নি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রকমের পরিবেশগত সমস্যা দুটো। (এক) ভূমির অবক্ষয়, (দুই) বনাঞ্চলের বিলোপ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক দফতর থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলা হয়েছে, প্রতিবছর শুধু ভারতীয় নদীগুলোই বাংলাদেশে পরিবহন করে আনে ২৪০ মিলিয়ন ঘনমিটার মাটি। বাংলাদেশ সীমান্তে এসে বিপুল পরিমাণ এ মাটি ঐ সব নদী মজিয়ে দেয়। ব্যাহত করে তাদের স্বাভাবিক প্রবাহ। এর ফলে বর্ষার সময় ঐ সব অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা। এছাড়াও উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে এ উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ চাষের জমির আলগা মাটিও বর্ষায় নদী-নালায় এসে জমে। বন্যার সম্ভাবনা বাড়ায় অনেক অঞ্চলেই। যেসব অঞ্চলে এ ধরনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা দরকার। তারপর মজা নদী-নালার পলি অপসারণে হাত দিতে হবে। জমির মাটি যাতে সরাসরি নদী-নালায় গিয়ে না পড়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
টঘঊচ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৩০ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। এর ফলে প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চাষের জমি, মাছ। চাষের ক্ষেত্র প্রভৃতি। বাংলাদেশের প্রায় বিশ হাজারের মত গ্রামের দেড় কিলোমিটারের মাঝে স্থানীয়ভাবে পানির কোন ব্যবস্থা নেই। এর ফলে ঐসব গ্রামে সংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। ঢাকায় অতিরিক্ত নোংরা অঞ্চলে বাস করে শহরের ৩৩-৩৪ শতাংশ মানুষ। দুর্ভাগ্য এই, যারা ধনী তাদের পয়সা আছে। পয়সার জোরে শহর এবং গ্রামাঞ্চলে পরিবেশগত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে তাদের অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা দরিদ্র যাদের শ্রমের উপর নির্ভর করে তাদের ভোগ বিলাস, তাদের নৈমিত্তিক প্রয়োজন মেটানোর দায় যাদের উপর ন্যস্ত তাদের কল্যাণের ব্যাপারে তারা কোন লক্ষই রাখে না। বনের কাঠ কাটে দরিদ্র মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে। বনের কাঠের বড়লোক ক্রেতা কাঠ কেনে নিজের বৈভব বৃদ্ধির তাগিদে। পরিবেশের অবক্ষয়ে দুটো কারণই দায়ী।
বন সংরক্ষণ এদেশে সত্যিই বড় রকমের সমস্যা। জনসংখ্যা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান জনতার আহার যোগানোর জন্য প্রতিবছর বাড়ান হচ্ছে চাষের জমি। বন কেটে বা পুড়িয়ে। এতে করে দেশের বনাঞ্চলের বিস্তৃতি কমছে। এছাড়াও দেশের বহু অঞ্চলে মানুষ জ্বালানি এবং ঘরবাড়ি তৈরির জন্যও নির্ভর করে গাছপালার উপর। ফলে বনের কাঠ কাটা চলে অবাধে। উদ্ভিদ অপসারণের দরুন তাই দেশের বহু অঞ্চল এখন খরায় কবলিত। মরু অথবা প্রায় মরু অঞ্চলে রূপান্তরিত।
চাষের জন্য চাই পানি। খরার সময় সেচের পানির জন্য বেশিরভাগ অঞ্চলকে নির্ভর করতে হয় নলকূপের উপর। ফলে ভূগর্ভে সঞ্চিত পানির উপর চাপ পড়ছে। কোন কোন অঞ্চলে নলকূপ শুকিয়েও গেছে। কোথায় এমন পরিস্থিতি ঘটল তা খতিয়ে দেখা দরকার। কেন ঘটল ভূগর্ভস্থ বিজ্ঞানীদের তা অনুসন্ধান করা দরকার। সেই মতে দরকার ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের। এটাও আঞ্চলিক ব্যাপার।
কথা নয়, চাই কাজ। এত কিছুর পরও আমাদের শিক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কথার বানে মানুষকে না ভুলিয়ে সকলের উচিত পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আন্তরিকতার সাথে কাজ করা। বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণের সময় এসেছে। ৫ জুন যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা না হয় বরং এর যথাযথ প্রয়োগ যদি হয় আমাদের সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনে তাহলেই কল্যাণ আসবে।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (স্বর্ণপদক ১ম) প্রাপ্ত
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।