প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
আমাদের বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম চলচ্চিত্র সম্ভবত বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিগত প্রায় এক দশক ধরে চলচ্চিত্রের দেউটি নিভু নিভু করছিল। করোনা মাহামারী যেন তা এক ফুৎকারে নিভিয়ে দিচ্ছে। এক-দুই বছর পর পর এক-দুটি সিনেমা তাতে কিছুটা ফুয়েল দিলেও, তার শিখাটি ঊর্ধ্বমুখী হয়নি। এর মূল কারণ হিসেবে যে বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে তা হচ্ছে, এক. দর্শক চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নির্মাতাদের সিনেমা নির্মাণ করতে না পারা। দর্শকের জানা গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা। যেসব সিনেমা নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই মুম্বাই বা তেলেগু সিনেমার দুর্বল সংস্করণ এবং যা ইতোমধ্যে দর্শক হিন্দি চ্যানেলগুলোতে দেখে ফেলেছে। দুই. সিনেমা হলের উপযুক্ত পরিবেশের অভাব এবং সংখ্যা কমে যাওয়া। আমাদের সিনেমা শিল্পের দৈন্যদশার কারণ হিসেবে এ দুটিকেই মোটা দাগে চিহ্নিত করা যায়। এছাড়া আরও অনেক সমস্যা রয়েছে। সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের শেষ দিক পর্যন্ত আমাদের সিনেমা শিল্পটি যে বিনোদনের একটি বিশাল শিল্প কারখানায় পরিণত হয়েছিল, পরবর্তীতে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা তা যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারেনি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এর উন্নতি-অগ্রগতির দিকে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে প্রায় দুই দশক ধরে ক্ষয়ে যেতে যেতে আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ভাবা যায়, আমাদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে এক সময় প্রায় দেড় হাজার সিনেমা হল ছিল! আর এ সংখ্যাটি এখন ৮০টিতে এসে নেমেছে! এ এক অকল্পনীয় ব্যাপার। এই ব্যর্থতার দায় কেবল মাত্র সিনেমা খাত সংশ্লিষ্টদের ওপরই বর্তায়। প্রযোজক, পরিচালক, হল মালিকÑএই তিন শ্রেণীই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যে কোনো দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিষয়টি এই তিন শ্রেণীর সমন্বিত পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের চলচ্চিত্রের এই তিন শ্রেণীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, চিন্তা-ভাবনা, সমন্বয় এবং এ অনুযায়ী উদ্যোগ না নেয়ার কারণেই চলচ্চিত্র শিল্প বিলুপ্তির দিকে ধাবিত। আমরা দেখেছি, বছরের পর বছর ধরে তাদের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ চলেছে। এখনও তা রয়েছে। এর ফলে যা হয়েছে, যে যার মতো করে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকেছে। হল মালিকরা সিনেমা চালিয়ে লাভবান হতে না পেরে তা বন্ধ করে দিয়ে মার্কেট বা কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের দিকে ঝুঁকেছে। কোনো কোনো সিনেমা হল মালিক হল টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় পুরনো সিনেমা আমদানি করে চালিয়েছে। তাতেও কোনো ফল হয়নি। অগত্যা যা হওয়ার তাই হয়েছে এবং হচ্ছে। সিনেমা হল বন্ধ করে অন্য ব্যবসায় ঝুঁকেছে। এর মধ্যেও আশার আলো হচ্ছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং এ সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে। তবে আধুনিক এসব সিনেমা হলে বেশিরভাগই হলিউডের নতুন সিনেমা চালানো হয়। এসব সিনেমা অত্যন্ত চড়ামূল্যে দর্শককে দেখতে হয়। যখন একই দিনে বাংলাদেশসহ বিশ্বে যেসব হলিউডের সিনেমা মুক্তি পায়, দেখা যায়, সেসব সিনেমার টিকিট মূল্য সাত-আটশ’ কিংবা তার চেয়েও বেশি এবং তা সামর্থ্যবান দর্শক দেখছেও। সাধারণ দর্শকের পক্ষে এসব সিনেমা দেখা অসম্ভব। মাঝে মাঝে দেশের সিনেমা চালালেও, মানের কারণে হল দর্শকশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে সিনেপ্লেক্সগুলো হলিউডের সিনেমাই বেশি চালায় এবং তারা ব্যবসাও করছে। এ কারণে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সারা দেশে শতাধিক সিনেপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ধানমন্ডি, মহাখালি, উত্তরা, মিরপুরসহ দেশের অন্যান্য জায়গায়ও বেশ কয়েকটি সিনেপ্লেক্স চালু ও নির্মাণ করছে। নিশ্চয়ই তারা বিদেশি সিনেমা চালিয়ে সাফল্য পাচ্ছে বলেই কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়, আমাদের দেশের সিনেমা অপাংক্তেয় হয়ে গেছে। এসব সিনেপ্লেক্সে চালানোর মতো সিনেমা নির্মিত হয় না। তার অর্থ হচ্ছে, একটা সময় আমাদের সিনেমা বিলুপ্ত হবে এবং হলিউড ও মুম্বাই বা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সিনেমা আমাদের বাজার দখল করবে। আমাদের সিনেমার ঠাঁই হবে টেলিভিশন চ্যানেলে। সেখানে বারবার পুরনো সিনেমা দেখতে পারব এবং দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্মৃতিচারণ করব, আমাদের দেশেও এক সময় সিনেমা নির্মিত হতো! বলা বাহুল্য, আমাদের নির্মাতাদের পক্ষে এখন দর্শক চাহিদা সম্পন্ন বিশ্বমানের সিনেমা নির্মাণের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তাদের যদি একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকা দিয়ে বলা হয়, একটি আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা নির্মাণ করে দেন, তাহলে তারা কি পারবে? পারবে না। কারণ তাদের অনেকে বুঝতেই পারবে না সিনেমার কোথায় কোথায় কিভাবে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। হ্যাঁ, ব্যয় করতে পারবে, তবে তা পর্দায় বোঝা যাবে না যে এটি একটি ১০০ কোটি টাকা বাজেটের সিনেমা। এর কারণ হচ্ছে, তারা তাদের গৎ বাঁধা ধারা বা ফর্মুলেটেড সিস্টেম থেকে বের হতে পারেনি বা বের হয়ে এ ধরনের সিনেমা নির্মান করেননি। তাহলে উপায় কি? উপায় হচ্ছে, নির্মাতাদের সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা করতে হবে। তাদের চিন্তাধারা বদলাতে হবে। সিনেমার গল্পের ভিন্নতা এবং এর নির্মাণ কৌশলের আধুনিকতা দিয়ে লগ্নিকারক বা প্রযোজককে কনভিন্স বা আকৃষ্ট করতে হবে। প্রযোজক যদি কনভিন্সড হন, তবে নিশ্চয়ই তিনি অর্থ লগ্নি করতে উৎসাহী হবেন। প্রশ্ন আসতে পারে, সিনেমাটি চালাবে কোথায়? ব্যবসা করার মতো সিনেমা হল কি আছে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, যদি সিনেমাটি মানসম্পন্ন হয় তবে বিদ্যমান সিনেমা হল এবং সিনেপ্লেক্সে চালিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব। কারণ আমরা দেখেছি, যে সিনেমা ব্যবসা করবে না বলে আগেই ধরে নেয়া হয়েছিল, সে সিনেমা ঢাকার বাইরে এক-দুইটি সিনেমা হলে মুক্তি দিয়ে ব্যাপক সাফল্য পায়। এই সাফল্যের ঢেউ শহরগুলোতে এসে লাগে। শহরের সিনেমা হলগুলোও তা চালানো শুরু করে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, বেদের মেয়ে জোসনা এবং খাইরুন সুন্দরী। সিনেমা দুটি যখন ঢাকার বাইরে দুয়েকটি হলে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, তখন সেখানে দর্শকের যে জোয়ার শুরু হয়, তা দেশের সব সিনেমা হলগুলোতে গিয়ে পড়ে। কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করে, যা কারো ধারনায় ছিল না। বিষয় হচ্ছে, দর্শকের মনমতো সময়োপযোগী সিনেমা নির্মাণ করা হলে তা তারা দেখে এবং সাড়া দেয়। আমাদের নির্মাতাদেরও সময়োপযোগী চিন্তা এবং এ অনুযায়ী সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। এখন বিশ্বজুড়ে বিষয়ভিত্তিক সিনেমার ট্রেন্ড চলছে। অর্থাৎ সমসাময়িক আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মাতার মন ও মননশীলতার সংমিশ্রণে সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। সাইকো-থ্রিলার বিষয় নিয়েও অনেক আলোচিত সিনেমা নির্মিত হচ্ছে এবং সেগুলোর গল্পে মর্মস্পর্শী বক্তব্য থাকে। এসব সিনেমা নির্মাণে খুব বেশি বাজেটের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন শুধু মেধা ও চিন্তার প্রকাশ। আমাদের যেহেতু বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণের সক্ষমতার অভাব রয়েছে, তাই নির্মাতাদের উচিত হবে, আমাদের সামাজিক, পারিবারিক প্রেক্ষাপটে যুথবদ্ধ গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণে মনোযোগী হওয়া। এই যে করোনার মহামারী চলছে এবং এতে যে মানুষের কত আনন্দ-বেদনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাফল্য রয়েছে, এ নিয়েই গল্প নির্ভর অসংখ্য সিনেমা নির্মাণ সম্ভব। এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, করোনার অবসান হলে বিশ্বের বড় বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো করোনার গল্প নিয়েই সিনেমা নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আমাদের নির্মাতাদেরও এখন এমন চিন্তাভাবনা করা দরকার। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভাল সিনেমা নির্মিত হলে সিনেমা হল মালিকরাও তা প্রদর্শনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ নজির বিগত বছরগুলোতে ঈদের সিনেমা মুক্তির সময় দেখা গেছে। সে সময় ঈদের সিনেমা চালানোর জন্য বন্ধ সিনেমা হলও খুলে চালানো হয়েছে। কাজেই ভালো সিনেমা হলে তা প্রদর্শনের সমস্যা হবে না। কম সিনেমা হল দিয়েও সপ্তাহের পর সপ্তাহ সিনেমা চালিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব। এখানে প্রয়োজন সিনেমা সংশ্লিষ্ট প্রযোজক, পরিচালক ও হল মালিকদের চিন্তার বিকাশ এবং উদ্যোগ। তা নাহলে, সিনেমার যে দুর্দশা চলছে এবং করোনায় যে থাবা বসিয়েছে, তাতে আমাদের দেশ থেকে যদি চলচ্চিত্র বিশেষ করে মূল ধারার চলচ্চিত্র বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।