পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা শুধু যে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে তা নয়, করোনার জন্য বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিশ্বের হাজার হাজার শহর লকডাউনে চলে গিয়েছে। বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক যোগাযোগ মাধ্যম। কোটি কোটি যানবাহনের গতি থামিয়ে মানুষকে করেছে ঘরবন্দি। এইসব নেতিবাচক দিকগুলো সত্যিই মানুষের মনকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।
করোনাভাইরাসের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, যার প্রভাব পরিবেশে লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশ্বের হাজার হাজার শহর লকডাউনে থাকায় ব্যস্ততম জায়গাগুলো এবং পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলকারখানা ও যানবাহন বন্ধ হওয়াতে বিদুৎ, গ্যাস ও তেলের জ্বালানি হ্রাস পেয়েছে এবং চাহিদা কমেছে, যার ফলে বায়ু ও পানি দূষণ কমতে শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা যে ক্ষেত্রগুলির মধ্যে একটি বড় পার্থক্য দেখছেন তার মধ্যে একটি হলো বাতাসের গুণমান। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পিটার ডেকার্লো নিউজউইকে বলেছেন, ‘উপগ্রহের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করায় বায়ু দূষণের মাত্রা অনেকগুলো ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি দেখিয়েছে, যা করোনাভাইরাসের কারণে বিধিনিষেধমূলক কোয়ারানটাইনগুলোর জন্য হয়ে চলেছে।’ চীন, ইতালি যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে শিল্প কারখানা, বিমানচালনা এবং পরিবহনের অন্যান্য ধরনের যানবাহন বন্ধ বলে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু উপগ্রহের দ্বারা পর্যবেক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে যে, মহামারীটি ইতোমধ্যে সেই অঞ্চলগুলিতে বায়ু দূষণের ব্যাপক হ্রাস ঘটাচ্ছে। চীনে, নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি থেকে প্রাপ্ত উপগ্রহের চিত্রগুলি বেশিরভাগ দেশের লকডাউনে যাওয়ার পরে চলতি বছরের শুরুর দিকে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড দূষণের উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞ আউটলেট কার্বন ব্রিফের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চীনে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। একই রকম প্রভাব উত্তর ইতালিতেও দেখা গেছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ট্র্যাফিকের স্তর ৩৫ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ৫-১০ শতাংশ হ্রাসের কথা জানিয়েছেন। নাসার একজন বায়ুর গুণমান গবেষক, গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো কোনও নির্দিষ্ট ইভেন্টের জন্য এত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে এমন নাটকীয় ড্রপ-অফ দেখতে পেয়েছি।’
বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরও ইতোমধ্যে শিল্পকারখানা এবং পরিবহনের অন্যান্য ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় পরিবেশে এর প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশের শহরগুলো থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নির্গমন অনেকাংশে কমেছে। এবারের তুলনায় তাপমাত্রা গত বছর ২ ডিগ্রি বেশি ছিল।
সাগর, নদী ও কৃত্রিম লেকগুলোতে জাহাজ, লঞ্চ, নৌকা ইত্যাদির চলাচল হ্রাস পাওয়াতে পানি দূষণও কমতে শুরু করেছে। নদী ও লেকের পানি অনেকাংশে স¦চ্ছ হয়েছে, যা জলজ প্রাণির জন্য সুবিধাজনক। তাছাড়া ইঞ্জিনচালিত নৌকা থেকে জ্বালানি তেলের মাধ্যমে পানি দূষিত হচ্ছে না। আরও একটি কারণ, যা কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন বৃদ্ধিকে কমিয়ে দিতে পারে তা হলো, তেলের চাহিদা কম। বিজ্ঞানীদের মতে, নদী ও খালগুলোর দূষণ হ্রাস পেলে সাগরেও এর প্রভাব পড়বে।
বিশ্বব্যাপী কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাগুলি বন্য জীবনের উপর প্রভাব ফেলছে বলে মনে হচ্ছে, যেহেতু মানুষ ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের বাড়িতে সীমাবদ্ধ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, জাপানে, জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নারা পার্কে বসবাসকারী সিকা হরিণগুলি চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আগত দর্শকদের উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরে খাদ্যের সন্ধানে শহরাঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। সাধারণত, পর্যটকরা হরিণকে খাওয়ানোর জন্য বিশেষ নাস্তা কিনে নিয়ে যেতেন এবং অনেক প্রাণী এইগুলি খেতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ডলফিনের বিচরণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বৃক্ষ নিধনও অনেকাংশে কমতে শুরু করেছে। বিশ্বের অনেক দেশ বন্য প্রাণীর ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, শতকরা ৭০ ভাগ সংক্রামক রোগ বন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে আসে, যার মধ্যে করোনাও রয়েছে।
জলবায়ুর এই পরিবর্তন বায়ু, পানি, মাটি ও বন্য প্রাণীর জন্য ইতিবাচক দিক। তবে পরিবেশগত সুবিধাগুলি স্বল্পস্থায়ী হতে পারে। করোনা কোনো কোনো দেশে কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া সব দেশেই স্বাভাবিক জীবনধারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে, লকডাউন প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সব কিছু পুনরায় চালু করা হচ্ছে। কিছু দিন পর সারাবিশ্ব এই দুর্যোগ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এ প্রত্যাশা করি। হতেও পারে পরিবেশই ক্রুদ্ধ হয়ে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। তাই মানব স্বাস্থ্যের মতো পরিবেশের সুস্থতার কথাও মনে রাখতে হবে। পরিবেশকে আমরা যেমনটা দেব, অনুরূপভাবে পরিবেশ থেকেও আমরা তেমনটি ফেরত পাব। নিতান্তই আমাদের প্রয়োজনে পরিবেশ সুন্দর রাখতে ভালো কিছু করা উচিত।
যেহেতু করোনা আমাদের দেশেও বিস্তার করছে, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা প্রতিরোধ করতে হবে। সচেতনতাই এখন একমাত্র হাতিয়ার। পরিবার ও দেশের স্বার্থে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সেই সাথে সতর্ক থাকতে হবে পরিবারকেও। করোনা প্রতিরোধে আমরা বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়ার নির্দেশনা পাই। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুয়া (২০ সেকেন্ড) সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকা। শিষ্ঠাচার মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। বাইরে যাওয়ার পর মাস্ক ব্যবহার করা। নির্দিষ্ট সময় পর পর পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে এমন খাদ্য বেশি খাওয়া জরুরি। ফল ও পুষ্টিকর খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
করোনা প্রতিরোধ করতে দেশের যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হয়ে পরিবারসহ সমাজের বাকি মানুষদের সচেতনতা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। সামাজিক মাধ্যমগুলোকে আতঙ্ক ছড়ানোর কাজে না লাগিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোও রাখতে পারে বিশেষ অবদান। কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে সমাজের মানুষের কাছে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে পরিবেশের দিকে আমাদের লক্ষ রাখতে পারে। সুস্থ পরিবেশ মানব জীবনের জন্য অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।