Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কলাপাড়ায় ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ লন্ডভন্ড, ৩৭৮ ঘর বিধ্বস্ত

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২০, ৭:৫৯ পিএম

ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কলাপাড়া উপজেলার বাঁধ ভাঙ্গা জনপদ লালুয়ার ১৭ গ্রাম এখনও পানিবন্দী হয়ে আছে। মানুষের বাড়িঘর এখন আর বাস উপযোগী নেই। আমফান তান্ডব থামলেও অমাবস্যার প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকালের জোয়ারে ওই জনপদ এখন পর্যন্ত ভাসছে লোনা পানিতে। চালচুলা পর্যন্ত পানিতে ভেসে গেছে। বাড়িঘর তো দুরের কথা চলাচলের রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। শত শত মানুষ এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এছাড়া চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের রাবনাবাদ পাড়ের প্রায় ২০০ মিটার রিং বেড়িবাঁধ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বাঁধঘেষা অন্তত ২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। নদীতে বাঁধসহ শত শত গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে। সেখানকার বাসীন্দা স্কুল শিক্ষক সোহেল গাজী জানান, তিনি তার জীবদ্দশায় এমন উত্তাল ঢেউ আর দেখেননি। মুহুর্তের মধ্যে বাঁধটি জলোচ্ছ্বাসে বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ধসে যাওয়া শুরু হয়।
ফরহাদ মৃধা জানান তার প্রায় চার লাখ টাকার মাছ পুকুর ডুবে ভেসে গেছে। পুকুরটিও রাবনাবাদ গিলে খেয়েছে। পাঁচটি পুকুরের মাছ, দেবপুর গ্রামের অর্ধশত কৃষকের ডাল জাতীয় শস্য লোনা পানির প্লাবনে নষ্ট হয়ে গেছে।
জহিরুল গাজী জানান, রাবনাবাদের ভাঙ্গনে কয়েকবার ঘর পাল্টেছেন। সবশেষ আমফানে ঘরের অর্ধেক ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। ঘরের সকল মালামালও রক্ষা করতে পারেননি। কাঠ মিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা চলত এ মানুষটির। এখন আবার বসতঘরটি বিধ্বস্ত হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এসব মানুষ জানান, মাত্র এক বছর আগে এই রিং বেড়িবাঁধটি যেনতেন ভাবে করা হয়েছে। এবারে নদীতে ভেসে গেল। এখন প্রত্যেক অমাবস্যা-পুর্ণিমার জোয়ারে গ্রামের সব ডুবে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন মানুষ। আমফানে জলোচ্ছ্বাস তান্ডব থেকে জেলে নৌকা রক্ষা করতে গিয়ে ওই গ্রামের মিজানুর রহমান মৃধা (৩৮) গুরুতর আহত হয়েছেন। নৌকাটি চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে।
এ ছাড়া পাঁচজুনিয়া গ্রামের মাহবুব মৃধা (৪০) তার মাকে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌছে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গাছ চাপায় গুরুতর জখম হয়েছেন। এরা দু’জনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই দুইজন আহত এবং নিহত সিপিপি কর্মী শাহআলম মীর ছাড়া কলাপাড়ায় আর কেউ হতাহতের খবর মেলেনি।
কুয়াকাটায় জলোচ্ছ্বাস তান্ডবে অন্তত ৩০টি ক্ষুদ্র দোকানির দোকানঘর ভেঙ্গে গেছে। নাচনাপাড়ার কোহিনুর বেগমের টিনশেড ঘরটি গাছ চাপা পড়ে বিধ্বস্ত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন। একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকার লোন করে ঘরটি করেছেন বলে জানালেন। একই কলোনীর আলমগীর হোসেন দেখালেন তার ঘরটির অর্ধেকটা চালসহ উড়ে গেছে ঝড়ো হাওয়ায়। হাজারো গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। অসহায় এসব মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যানুসারে কলাপাড়ায় আমফানের তান্ডবে একজন নিহত ও একজন আহতের খবর মিলেছে। এছাড়া ৩৭৮টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। যার ৩২৪টি আংশিক এবং ৫৪টি সম্পুর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তপন কুমার ঘোষ জানান এটি প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য। পুর্ণাঙ্গ তথ্য তৈরি করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষয়ক্ষতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ