পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ছে, তাতে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই। সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই করোনাভাইরাস রোগের চিকিৎসার সামান্যতম ব্যবস্থা নেই। সাধারণ রোগ চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই। করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মানুষ মরছে। এর উপসর্গ নিয়েও একইভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। উপযুক্ত পরীক্ষা, নিয়মিত চিকিৎসা কোনো কিছুই হচ্ছে না। করোনাভাইরাস রোগীই হোক অথবা অন্য যে কোনো রোগীই হোক, অবহেলা, উপেক্ষা ও অসহযোগিতার কারণে তাদের অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে। কোনো সভ্য দেশের একজন রোগী হাসপাতালের পর হাসপাতালে ঘুরে অবশেষে অনিবার্য করুণ পরিণতি বরণ করে নেন, এটা কল্পনাও করা যায় না। অথচ আমাদের দেশে সাম্প্রতিককালে এরকম বহু ঘটনাই ঘটেছে। সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। গৌতম আইচ সরকার নামের খাদ্যমন্ত্রণালয়ের এই অতিরিক্ত সচিব কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে মারা গেছেন। তার মেয়ে একজন ডাক্তার। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনাভাইরাস রোগের উপসর্গ না থাকলেও তাকে বাধ্য হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষে রক্ষা হয়নি। তিনি তার বাবাকে নিয়ে যেসব হাসপাতালে ধর্ণা দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, পত্রপত্রিকায় তার বিবরণ ছাপা হয়েছে। ল্যাবএইডে কিডনি ডায়ালোসিস করা হলেও সেখানে তাকে আইসিইউ সাপোর্টের জন্য ভর্তি করা হয়নি। সেখান থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ভর্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় নেয়া হয় মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেলে। ইউনিভার্সেলের ডাক্তাররা পরীক্ষার জন্য স্কয়ারে নিতে পরামর্শ দেন। অতঃপর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, স্কয়ার ও সোহরাওয়ার্দী কার্ডিয়াকে নেয়া হলেও ভর্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় মিরপুর রিজেন্ট হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেও একই অবস্থা এবং সব শেষে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটি সিট ম্যানেজ করা সম্ভবপর হয়, যদিও তা কোনো কাজে আসেনি। সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং একজন ডাক্তারে বাবার চিকিৎসার ক্ষেত্রে যদি এই অবস্থা হয়, তবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কী হতে পারে, সহজেই অনুমেয়।
অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত ছিলেন, তার ন্যূনতম প্রমাণ মেলেনি। তার ডাক্তার মেয়েও কোথাও ক্ষুণাক্ষরে বলেননি যে, তার বাবার মধ্যে করোনার ‘উপসর্গ’ পর্যন্ত ছিল। তার কিডনিসহ অন্যান্য রোগ-ব্যাধি ছিল। কোরোনার চিকিৎসায় প্রতিষেধকের অভাব থাকলেও এসব রোগব্যাধির চিকিৎসায় ওষুধপত্রের অভাব নেই। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, করোনাবাদে অন্যান্য রোগব্যাধির কোনো চিকিৎসাও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে হচ্ছে না। সরকারি কিছু হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো হাসপাতালের ক্ষেত্রে করোনা ও সাধারণ রোগীর চিকিৎসা চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো হাসপাতালেই করোনা বা সাধারণ রোগের চিকিৎসা হচ্ছে না। হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি না হতে পারার যেমন বহু নজির রয়েছে, তেমনি ভর্তির পর রোগীর অবহেলা-অযত্মে মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়। দেশে সরকারি-বেসরকারি বড় হাসপাতালের যেমন কমতি নেই তেমনি ছোট-মাঝারি আকারের হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যাও কম নয়। ডায়াগনস্টিক সেন্টার তো রীতিমত মুদী দোকানের মতো। এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশই এখন বন্ধ। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো খোঁজ-খবর নেই। কোনো দেশের স্বাস্থ্যখাতের এরূপ করুণ অবস্থা হতে পারে, তা ধারণাও করা যায় না।
বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যখাতের প্রকৃত চিত্র করোনা বিশেষভাবে উন্মোচিত করে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত এবং সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়া সত্ত্বেও ওইসব দেশে কিন্তু করোনা মোকাবেলায় যথেষ্ট দক্ষতা ও পারক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারেনি। অন্যান্য উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ প্রথমদিকে একটু বেকায়দায় পড়লেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে। ফলে তাদের পক্ষে করোনা মোকাবেলা সম্ভবপর হয়েছে। আমাদের দেশে শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাড়াতে হবে, ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে, যতটা সম্ভব গৃহে অবস্থান ও সঙ্গনিরোধ মেনে চলতে হবে। এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি তেমন একটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্সদের প্রতি মানুষের এক ধরনের অনীহা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। আবার তারাও রোগীদের প্রতি নিদারুণ অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা প্রদর্শন করছে। মোটের ওপর, চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরতা দ্রুত কমে আসছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রশ্ন হলো, তাহলে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং বড় বড় হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন কী?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।