Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনাভাইরাসের কবলে পতিত সারাবিশ্বের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা আমাদের কর্তব্য

মোহাম্মদ আবদুল গফুর | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা উল্টালেই একই সংবাদ করোনায় আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন একই খবর দেখতে দেখতে মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিল। ... কোন কোন দেশের সুসংবাদ এলেও বাংলাদেশে যেন কিছুতেই করোনা সম্পর্কে কোন সুসংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষে বাংলাদেশের জনগণের সৌভাগ্য ধীরগতিতে হলেও আসছে বলে মনে হচ্ছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের দেশের কোনো কোনো গবেষক বলেছেন মে মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে করোনা ৯৯ ভাগ এবং জুলাই মাসে পুরোপুরি এ ভাইরাস চলে যাবে। তার মানে এই নয় যে, মে মাসের পর বাংলাদেশে আর কোন করোনা রোগ থাকবে না। এটা নি:সন্দেহে একটা সুসংবাদ হলেও, সেটা কোন স্থায়ী ঘটনা নয়। গতকাল বাংলাদেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় যেসব খবর বেরিয়েছে তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৮৩ জনের। বিশ্বের বিভিন্ন করোনা-আক্রান্ত দেশের তুলনায় এটা খুবই ক্ষুদ্র ও নগণ্য বিষয়। তবে আমাদের দেশের তুলনায় তা আমাদের জন্য বড় বিপদ।
আমাদের দেশ সম্পর্কে অনেক গবেষক বলেছেন, এ বছরের মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শূন্যে নেমে যেতে পারে। এমন ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে বৈশ্বিক পরিস্থিতির আলোকে। গত মঙ্গলবার বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যে খবর দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ঐ দিন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগী ৩৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫৫২, আর এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৮৩ জনের। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে অল্প সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত হলেও, বাংলাদেশের নাগরিকরা অনেকে প্রবাস থেকে দেশে ফিরছেন এবং তারা অনেকেই নিজেদের অজান্তেই করোনার জীবানু নিয়ে এসে তাদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধব এবং আপনজনদের দেহে জীবানু ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
সুতরাং পরিস্থিতিকে কিছুতেই ছোট করে দেখার উপায় নেই। মনে রাখতে হবে। করোনাভাইরাস নামের এ ভয়াবহ রোগ প্রথমে বাংলাদেশে দেখা দেয়নি, এটা প্রকাশ হয়েছিল চীনে। তবে ইদানিং চীন এ তথ্যও অস্বীকার করতে চেষ্টা করছে। চীন দোষ চাপাতে চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রর ঘাড়ে। এনিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরস্পর ভীষন বিতর্ক চলছে। যদিও আমরা এতদিন শুনে আসছি যে চীনেই করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোন দেশে এ প্রাণঘাতী রোগ প্রথম দেখা দেয় তা নিয়ে বিতর্ক এখন অনেকটা অর্থহীন। কারণ একবার এটা যেখানে ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশে^ এখন এর প্রকোপ যেকোনো দেশেই দেখা দিতে পারে। কারণ যেসব দেশে এ রোগ প্রথম দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেসব দেশে এক পর্যায়ে এ রোগ শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল। কিন্তু সেসব দেশেও পুনরায় এখন মারাত্মক রোগ আবার দেখা দিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ যে আবার সে রোগ ফিরে আসবে না তা বলা যায় না। সুতরাং আমাদের সব সময় এ রোগের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেটাই হবে বাস্তব কর্তব্য।
তবে এটা মনে রাখতে হবে, শুধু মাত্র সাবধানতা অবলম্বন করাটাই যথেষ্ট নয়। পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে আমরা জানতে পারি, সর্ব শক্তিমান আল্লাহতায়ালার দেয়া জীবন বিধানকে অবহেলা করে নিজেদের খেয়ালখুশী অনুসারে চলে পাপাচারে ও অত্যাচার লিপ্ত হয়ে পড়লে, তখন আল্লাহতায়ালা তাদের উপর এমনসব গজব পাঠাবে- যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না।
আমরা পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে জানতে পারি, অতীতে আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান অমান্য করে দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন নবী রাসূলের সময়ই আল্লাহ গজব নাজেল করেছেন। এসব গজব কখনও হয়েছে বন্যার মাধ্যমে, যেমন হয়েছিল হজরত নূহ নবী (আ:)-এর যুগে। আল্লাহর বিধান আমান্য করে দুনিয়ায় অশান্তি ও অন্যায় অনাচার, জুলুম নির্যাতন চালানোর ফলে আমাদের গজব অবতীর্ণ হয় অন্যান্য আকারে।
হজরত মুসা (আ:)-এর যুগে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিল। সে প্রচুর ধন-সম্পত্তির মালিক হয়েছিল, কিন্তু কোন দরিদ্র ব্যক্তিকে সে সাহায্য দিত না। তাঁর এই অতিরিক্ত অর্থ থেকে আল্লাহর পথে এবং দরিদ্রের মাঝে ব্যয় না কারর কারণে আল্লাহর গজব নাজেল হয়েছিল। সে ও তার সমস্ত ধনসম্পদ মাটির সঙ্গে প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত জীবন বিধান অমান্য করার মাধ্যমে সমাজে অশান্তির অনাচার ও জুলুম নির্যাতন করার কারণে অন্যায় অনাচারে লিপ্ত লোকদের উপর এমন সব ধরনের গজব নাজেল করেন যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। এসব নজিরের মধ্যে এমনও রয়েছে, জুলুম নির্যাতনকারীরা তাদের নড়াচড়াও করার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। পবিত্র আল কোরআনে এমন বহু ধরনের গজবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আরেকটা কথা ও উল্লেখ করার প্রয়োজন রয়েছে। মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছিলেন এই পৃথিবীতে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসাবে। মানুষকে দুনিয়াতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে সৃষ্টি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রথমে ফেরেশতাদের কাছে। তাঁরা (ফেরেশতারা)-এর পূর্বে সৃষ্টি জিন জাতির ইতিহাসের অবতারনা করে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন মানুষও বুঝি আবার জিন সম্প্রদায়ের মত দুনিয়াতে ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয়ে বিপদের মধ্যে রক্তপাতে লিপ্ত হয়ে পড়বে। আল্লাহতায়ালা তাদেরকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, মানুষদের এমন জ্ঞান দেয়া হবে, যার ফলে তাঁরা পূর্বকৃত জিন জাতির মত নিজদের মধ্যে রক্তারক্তির ঘটনা ঘটাবে না। এরপর আল্লাহর সৃষ্টি আদিপিতা হযরত আদমকে সম্মানসূচক সেজদা দিতে ফেরেশতাদের নির্দেশ দেন। সকল ফেরেশতা আল্লাহর বিধান মোতাবেক আদি মানব হযরত আদমকে (আ:) সেজদা দিলেও জিন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ইবলিশ তাকে সেজদা দিল না। আল্লাহ তাকে এই অবাধ্যতার কারণ জিজ্ঞাস করলে সে (ইবলিশ) উত্তর দিল, আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে আর তাঁকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। সুতরাং তাঁর চাইতে আমি শ্রেষ্ঠ বিধায় আমি তাঁকে সেজদা দেব না।
ইবলিশের এই দাম্ভিকতার কারণে সে আল্লাহর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে কাফের হয়ে গেল। অত:পর আল্লাহ হজরত আদমকে তাঁর সঙ্গিনীসহ বেহেশতে বসবাস করতে নির্দেশ দিলেন এবং তাঁকে একটি বিশেষ বৃক্ষের ফল ভক্ষণের ব্যাপারে নিষেধ করে দিলেন। এরপর থেকে ইবলিশের এবং তার বংশধরদের প্রধান কাজই হয়ে দাঁড়াল আদমের এবং তাঁর বংশধরদের মধ্যে নানাভাবে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করে আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে তাদের প্ররোচিত করা। ইবলিশ আদমকে এই বলে আল্লাহর বিধান অমান্য করতে প্ররোচিত করলো যে, হযরত আদম যদি ঐ নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ কর তবে সে চিরজীবী হবে। অত:পর তার প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে আদি মানব আদম (আ:) নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করলো ফলে আদম উলঙ্গ হয়ে পড়লো এবং বেহেশতের গাছপালার পাতা দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকার কাজে ব্রতী হলেন। আল্লাহর হুকুম অমান্য করায় আদি মানব হযরত আদম আল্লাহর অসন্তোষের কারণ হয়ে পড়লে আল্লাহর নিকট অনুতাপসূচক প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করেন।
দুনিয়ার বিশ্বাসীরা আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনা মোতাবেক অদ্যাবধি তাদের নিজেদের জীবনের সকল ত্রু টি বিচ্যুতি থেকে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করার জন্য প্রার্থণা করে চলেছেন। এখানে সেই প্রার্থনা মোনাজাতের এবং তাতে তার বাংলা অর্থ নীচে দেয়া হল :
রাব্বানা জালামনা আনফুছানা ওয়া ইন লাম তাগফের লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাছেরিন। (বাংলা অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা নিজদের উপর উপর জুলুম করেছি এবং আপনি যদি আমাদের ক্ষমা করেন এবং দয়া না করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বো। আপনি আমাদেরকে দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করুন। )
আল্লাহর বিধান জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা এবং অতীতের মত করোনাভাইরাসের গজব থেকে আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা হোক আমাদের প্রধান কাজ। আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন