মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতে গত দুই দিনে কয়েক হাজার কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। রাজস্ব খাতে বিপুল অর্থ ঢুকেছে সরকারের কোষাগারে। মদের উপর শুল্ক বসিয়ে আরও রোজগারের আশায় সরকার। করোনা-লকডাউনে যখন অর্থনীতি ধুঁকছে, তখন দুই দিনে রাজ্যগুলির হাতে বড় অঙ্কের রাজস্ব তুলে দিয়েছে মদ।
গত ২৪ মার্চ থেকে ভারতের সর্বত্র বন্ধ ছিল মদের দোকান। কিন্তু তাই বলে কি বন্ধ ছিল মদ্যপান? মোটেই না। রাজধানী দিল্লিতে চার থেকে পাঁচ গুণ দামে ব্ল্যাকে বিক্রি হয়েছে মদ। সরকারও বুঝতে পেরেছে, অর্থনীতির এই বেহাল অবস্থার মধ্যে মদ থেকে রাজ্য সরকারগুলি ভালোই রোজগার করতে পারে। সম্ভবত সেই কারণেই, মদের দোকানের বাইরে বিপুল লাইন হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যগুলি দোকান বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছে না। একটা জনপ্রিয় ডিটারজেন্টের বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন হলো- দাগ ভালো। রাজ্য সরকারগুলি মুখে বলছে না বটে, তবে ওই ট্যাগলাইন একটু বদলে দিলেই তাদের মনোভাব ধরা পড়বে-- মদ ভালো। যত বেশি মদ, তত সরকারের ঘরে টাকা। কারণ, মদ বিক্রির রাজস্ব ঢুকছে রাজ্য সরকারি কোষাগারে। কত সেই পরিমাণ?
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষে ভারতের ২৯টি রাজ্য এবং দিল্লি ও পুঁদুচেরীর মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল একত্রে মদ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করেছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় যা ১৬ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির পরিকল্পনা ছিল শুধুমাত্র মদ থেকে বছরে ১৫ হাজার কোটি রাজস্ব আদায় করা। যা রাজ্যের মোট রাজস্ব আদায়ের ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। বিভিন্ন রাজ্যের অর্থ দফতরের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থ বর্ষে উত্তরপ্রদেশ মদ বিক্রি থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করেছে ৩১ হাজার কোটি টাকা। কর্ণাটক প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মহারাষ্ট্র প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এ বছর যা আরও বাড়বে বলেই রাজ্যগুলি আশা করেছিল। কিন্তু করোনা এবং তার জেরে লকডাউনের কারণে প্রথম এক মাসে সেই অর্থ আয় করতে পারেনি রাজ্যগুলি। একত্রে রাজ্যগুলির প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। অন্য খাতেও রাজস্ব আদায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কারণ, লকডাউনের জন্য উৎপাদন ক্ষেত্র কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পেট্রল, ডিজেলের বিক্রি কমেছে। সাধারণত, পেট্রোলিয়াম থেকে সব চেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করে রাজ্যগুলি। মদ দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে। ফলে সার্বিক ভাবেই অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে।
মদের রাজস্ব মেলেনি। কিন্তু তাই বলে ব্ল্যাকে মদ বিক্রি বন্ধ হয়নি। এটা বুঝতে পেরেই বিভিন্ন রাজ্য কেন্দ্রের কাছে মদের দোকান খোলার জন্য আবেদন জানায়। গত সোমবার থেকে কেন্দ্রও সেই অনুমতি দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এর ফলে মাত্র দুই দিনেই বিপুল লাভ দেখতে শুরু করেছে রাজ্যগুলি। শুধু সোমবারেই উত্তরপ্রদেশে ১০০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। আসামের মতো ছোট রাজ্যে অঙ্কটা ৮০ কোটি টাকা। কর্ণাটকে সোমবার বিক্রি হয়েছিল ৪৫ কোটি টাকার মদ। মঙ্গলবার তা রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে, ১৯৭ কোটি টাকা। অন্ধ্রে ৬৮ কোটি টাকা। প্রথম দিন মদের চাহিদা দেখেই রাজ্যগুলি স্থির করে ফেলে এখান থেকেই অর্থনৈতিক সংকট কাটানোর প্রাথমিক রাস্তা খুঁজে বার করতে হবে। মঙ্গলবার থেকে দিল্লি মদের ওপর ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য করেছে। পশ্চিমবঙ্গ ৩০ শতাংশ, অন্ধ্র ৭৫ শতাংশ, রাজস্থান ১০ শতাংশ। প্রায় প্রতিটি রাজ্যই নিজেদের মতো করে অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছে। বলা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় এই শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে বুধবার থেকে প্রতিদিন আরও বেশি রাজস্ব ঢুকবে সরকারের কোষাগারে। করোনা মোকাবিলায় যে অর্থ ব্যবহার করা হবে। সাহায্য পাবেন গরিব মানুষ। তাই রাজ্য সরকারের কাছে, মদ ভালো।
রসিকরা বলছেন, মদ যে এ ভাবে ত্রাণকর্তা হয়ে উঠতে পারে, করোনা না এলে তা বোঝাই যেতো না। কঠিন পরিস্থিতিতে মাতালরা তাই বিশেষ সম্মান অর্জন করে ফেলেছেন। তাদের দুরছাই করার প্রশ্নই নেই। বরং তারা আরও দুই পাত্র খেলে রাজ্য সরকারগুলো খুশিই হবে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।