Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মদের জন্য ভারতীয়রা এতটাই বেপরোয়া!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০২০, ১১:৫৫ এএম

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। ভারতেও হানা দিয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের কারণে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে দোকানপাট বন্ধ। এরই মধ্যে লকডাউন শিথিল করায় ভারতে মদের দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে ভিড় সামলাতে লাঠি চালাতে হয়েছে পুলিশকে। গতকাল সোমবার দিনভর মদ নিয়ে বাড়াবাড়ি দেখলো ভারত। গত ৪০ দিন সমস্ত দোকান বন্ধ ছিল। সোমবার তা খুলতেই সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নামলেন মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিলেন মদের জন্য। সঙ্গে বিশৃঙ্খলা।
ভারতীয়দের মদ-পিপাসা যে কোন জায়গায় পৌঁছেছে তা ভালোভাবেই টের পাওয়া গেল। লকডাউনের কড়াকড়ি অনেকটা কমিয়ে দিয়ে সোমবার থেকে মদের দোকান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারপরই দেখা গেল এতদিন ধরে মদ খেতে না পারা লোকেরা সামাজিক দূরত্ব, করোনার হওয়া ভয় কোনও কিছুরই তোয়াক্কা না করে বিশাল লাইন লাগিয়েছেন মদের দোকানের সামনে। দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে ভিড় সামলাতে লাঠি চালাতে হয়েছে পুলিশকে।
দিল্লিতেও মদের দোকানের সামনে ছিলো ঠাসাঠাসি ভিড় এবং বিশাল লাইন। কোনও কোনও জায়গায় দোকানের তিনটি কাউন্টার থেকে মদ বিক্রি করা হচ্ছিলো। প্রতিটি কাউন্টার থেকে লাইন এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছিল কয়েক কিলোমিটার। একজনের গায়ের ওপরে অন্যজন দাঁড়িয়ে। ৪০ দিন ধরে লকডাউনে থাকার পর মদের জন্য করোনাকে আর পাত্তা দেননি মদ্যপায়ীরা। অবস্থা দেখে কিছুক্ষণের মধ্যেই দিল্লিতে মদের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা করেন, করোনার খরচ তুলতে মদের ওপর ৭০ শতাংশ শুল্ক বসানো হলো। দিল্লিতে মদ থেকে শুল্কবাবদ রাজ্য সরকারের আয় হয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এবার তার পরিমাণ বাড়বে বলে রাজ্য সরকারের আশা।
জার্মানিভিত্তিক সংবাদসংস্থা ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র দিল্লিতেই ৮৫০টি মদের দোকান আছে। তার মধ্যে কিছু দোকান সরাসরি সরকার চালায়। পুলিশের নির্দেশিকা মেনে সরকারি মদ বিক্রির দোকান সকাল নয়টা থেকেই খুলে যাবে। সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত তা খোলা থাকবে।
সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, সোমবার দিল্লিতে ১৫০টির মতো মদের দোকান খুলেছিলো। কিন্তু সেখানে এত ভিড় হয়েছিলো যে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে তা বন্ধ করে দিতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কড়া নির্দেশ আছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাশ্মীরি গেট এলাকায় একটি মদের দোকানের সামনে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। মদের দোকানের মালিকদের বলা হয়েছে, ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থা করে যেন মদ বিক্রি করা হয়।
অন্য রাজ্যের অবস্থাও কম বেশি একই। অন্ধ্র প্রদেশেও মদের দোকানের ভিড় সামলাতে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।
উত্তর প্রদেশেও মদের দোকানের সামনে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে প্রথম দিনেই রেকর্ড ১০০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। এমনিতে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ কোটির বিক্রি হয়। সোমবার কম সময়ের জন্য দোকান খুলেছিলো। তা সত্ত্বেও বিক্রির পরিমাণ প্রায় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। শুধু লখনউতেই ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে।
কলকাতাতেও মদের দোকানের সামনে বিশাল লাইন ছিলো। সেখানেও পুলিশকে একাধিক জায়গায় লাঠি চালিয়ে ভিড় সামলাতে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুপুর-বিকেলের মধ্যেই দোকানের স্টক শেয হয়ে যায়।
এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, কেউ রবিবার রাত থেকেই দোকানের সামনে। কেউ ইট পেতে লাইন রেখেছেন। জলপাইগুড়িতে তো অনেকে বৃষ্টিতে ভিজেও লাইন ছাড়েননি। সোমবার বেলা ৩টার সময় যখন মদের দোকান খুলল, রাজ্যের বহু জায়গায় লাইন ছড়িয়ে গিয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার, দূরত্ববিধির কোনো খবর নেই। লাইনে পাঁচজনের বেশি দাঁড়ানো যাবে না, এ কথা মানে কে? তবে মাস্ক ছাড়া মদ দেওয়া হবে না, এই শর্ত থাকায় লাইনে মাস্ক পরেছিলেন প্রায় সকলেই।
মদের দোকান যে সোমবার খুলবে, তার আভাস আগেই ছিল। নির্দেশ অনুযায়ী, একবার একজন শুধু দু’টো বোতলই কিনতে পারবেন। কলকাতায় দেখা যায়, অনেকে একবার বোতল কিনে কাছের ফলের দোকান থেকে কালো পলিপ্যাক কিনে নিচ্ছেন, তারপর তাতে বোতল মুড়ে কারও হাত দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। দোকান বন্ধ হয় সন্ধে ৭টার মধ্যে।
মদের দোকান খোলার বিরুদ্ধে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বাজারে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। তাঁদের অভিযোগ, লকডাউনে কাজ হারিয়ে এমনিতেই অনেক পরিবার সমস্যায় রয়েছে। এর মধ্যে মদের দোকান খুললে বহু পরিবারে অশান্তি চরমে উঠবে, মত্তদের উপদ্রবও বাড়বে। আবগারি দফতরের জেলা আধিকারিক যতন মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।’’
অর্থনীতি সচল রাখতে ভারত সরকার এখন মরিয়া। আগামী দুই মাস লোকেদের কী করে সাহায্য করা যায়, কাজ দেওয়া যায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটা বড়সড় পরিকল্পনা তৈরি করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে বিষয়টি দেখছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছ থেকে ট্রেনের টিকিট নেওয়ার পর যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে এবং লোকদের সাহায্য করতে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)



 

Show all comments
  • BULBUL ৫ মে, ২০২০, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    There is a lesson from Indian that they are drunk. They helpful for human in the world. Hate india. Hate Hate. Who follow those drunk Nation they have lost there Identification.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ