পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের যে দেশ যত বেশি শক্তিশালী বলে পরিচিত, সে দেশই সব চাইতে বেশি অসহায় করোনার কাছে। পাঠকবৃন্দ, এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আপনারা আমার সাথে একমত হবেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন ও পতনের পর এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি। সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এই অদ্ভুত করোনা রোগের আক্রমণ ঘটেছে সর্বাধিক। অথচ এই রোগ প্রথম যুক্তরাষ্ট্র দেখা দেয়নি। দেখা দিয়েছিল সুদূর এশিয়ার চীনে। চীনে প্রথম দেখা গেলেও অল্প দিনের মধ্যেই এই রোগ প্রথমে ইউরোপ এবং আরো পরে বিশাল মহাসাগর পাড়ি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তার লাভ করে। মৃত ও আক্রান্তদের সংখ্যার দিক দিয়ে এখনো ইউরোপ-আমেরিকাই শীর্ষে। সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সংবাদের বদৌলতে পাঠকবৃন্দ জানতে পেরেছেন যে, সউদী রাজ পরিবারেরও ১৫০ সদস্য করোনাভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন।
এসব সংবাদ থেকে যে সত্যটি বেরিয়ে আসে তা হলো, যারা যত বেশি ক্ষমতাশালী তারাই ততবেশি করোনার সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। এর অর্থ কী? করোনাভাইরাস তবে কি বিশ্ব স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের গজব? পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহতায়ালা শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের গজব নাজেলের বহু তথ্য দিয়েছেন বিভিন্ন সূরায়। যারা আল্লাহ-প্রদত্ত সাম্য-ভ্রাতৃত্বের বিধিবিধানের যতটা বিরোধিতা করে আল্লাহ তাদের উপর ততটাই গজব নাজেল করেন। পবিত্র কোরআনে এই ধরনের বহু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ঘটনা থেকে সংশ্লিষ্ট জনেরা শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের আত্মসংশোধন করে তুলবে, এটাই সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা। কিন্তু মানুষ পার্থিব জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন আত্মতুষ্টিতে ভোগে যে, তারা মনে করে, তাদের এই অন্যায় করার শক্তি বুঝি কখনও নষ্ট হবে না। এ দুনিয়ায় তারা যা-ইচ্ছা তাই করতে করতে এই মনোভঙ্গি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তারা পরকালে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এর ফলে তারা তাদের অন্যায় বাড়াবাড়ির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে পরকালে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
এবার আমরা বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে আমরা কি শিক্ষা পাচ্ছি সে সম্পর্কে আলোচনা করে আজকের এ লেখার ইতি টানব। পবিত্র কোরআনে অনেক সূরায়ই এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আমি স্থান-স্বল্পতার কারণে শুধু একটি সূরার একটি আয়াত উদ্ধৃত করে তার মধ্যেই আজকের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব। আয়াতটি সূরা রুম-এর ৪১ নং আয়াত, যাতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়াইয়া পড়ে যাহার ফলে ইহাদিগকে কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাহাতে উহারা ফিরিয়া আসে।’
পবিত্র কোরআন শরীফের এ সাবধান বাণীর আলোকে যদি আমরা আজকের বিশ^পরিস্থিতির দিকে তাকাই তাহলে দেখব, এই সাবধান বাণী শুধু সেইসব দেশের জন্যই প্রযোজ্য নয়, যেসব দেশে শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। এ সতর্কবাণী সেসব দেশ সম্পর্কেও প্রযোজ্য যারা পুঁজিবাদী বা সামৃাজ্যবাদী দেশ হিসাবে পরিচিত না হয়েও বাস্তবতার নিরিখে জালেম বা অত্যাচারী শক্তি হিসাবে পরিচিত।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, করোনাভাইরাস নামের রোগটি দেখা দেয় চীনে, যে দেশ এখন সমগ্র বিশ্বে একমাত্র একদলীয় কমিউনিস্ট শাসনের অধীন।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বোস করি, আজকের বিশ্বে যে যেসব কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য ও শোষণ ও কুশাসন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তার মধ্যে রয়েছে ইসলামের সাম্য-ভ্রাতৃত্বের আদর্শে অবিশ্বাস ও তার সুপরিকল্পিত বিরোধিতা। এব্যাপারে পুঁজিবাদী বিশ্বের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের মৌলিক মতপার্থক্য নেই।
এখানে আরেকটি বিষয়ে আলোকপাত করেই আমরা আজকের আলোচনার ইতি টানব। আজকের বিশ্বপরিস্থিতির মানবতাবিরোধী রূপের পরিবর্তনে সুশাসকদের কি কোনই দায়দায়িত্ব নেই? এ প্রশ্নের জবাবে বাস্তবতার নিরিখে আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, এ ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের শাসকদের দায়দায়িত্ব রয়েছে। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শাসনব্যবস্থাই ইসলামের-সাম্য-ভ্রাতৃত্বের আদর্শের অনুসারী নয়। তাদের কেউ রাজতন্ত্রের অনুসারী আবার কেউ গণতন্ত্রের নামে দলতন্ত্রের অনুসারী, যার কোনটার সাথে ইসলামের প্রকৃত আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক থাকার কথাও নয়।
সুতরাং যতদিন পর্যন্ত ইসলামের প্রাথমিক যুগের খোলাফায়ে রাশেদের আদর্শের মর্মানুসারে ইসলামের হারিয়ে যাওয়া সাম্য-ভ্রাতৃত্বের আদর্শে আমরা পুনরায় সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনরুদ্ধার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো, ততদিন আমাদের ইহলৌকিক পারলৌকিক সাফল্যের কোনো সম্ভাবনা নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।