Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ও সমন্বয়হীনতা

| প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫৩ পিএম

দেশে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। খুব সীমিত পরীক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার এবং প্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে মৃতের সংখ্যা একশ অতিক্রম করেছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যেসব ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর উপর ভরসা করে জাতি এই মহাদুর্যোগ অতিক্রমের প্রত্যাশা করছে, সেসব ডাক্তার ও নার্সের অনেকে এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশন ও চিকিৎসাধীনে যেতে বাধ্য হয়েছে। ডাক্তার ও নার্সসহ ইতোমধ্যে কয়েকশ স্বাস্থ্যকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পেছনে তাদের সুরক্ষা সামগ্রীর মানহীনতা এবং মাননিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা ও ব্যর্থতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যুর হার শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগের বেশি না হলেও ইতোমধ্যে একজন সুখ্যাত ডাক্তার সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন। ডাক্তার মঈনের অসুস্থ হয়ে পড়া এবং ইন্তেকালের ধারাবাহিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে করোনা চিকিৎসা তো বটেই, আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায়। যেখানে নিবেদিতপ্রাণ প্রতিভাবান একজন ডাক্তারকেই হাসপাতালে অবহেলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, সেখানে সাধারণ রোগীদের কী অবস্থা, তা সহজেই অনুমেয়। দেশে করোনা রোগী ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আগামীদিনগুলোতে এ সংখ্যা হাজারে হাজারে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় দেশে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবার মান ও সমন্বয়হীনতা মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা ও প্যানিক সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণ রোগীদের হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চিকিৎসা না পাওয়া এবং করোনা রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার যে সব খবর পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কলঙ্কজনক অশনি সংকেত।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবায় হযবরল অবস্থার চিত্র দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণ ক্রমে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক সতর্কতা এবং সরকারের জাতীয় উদ্যোগের আওতায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা বিশেষায়িত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও সেসব হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা এবং ডাক্তার-নার্সদের অনুপস্থিতি ও রোগীর চরম অবহেলার শিকার হওয়ার ঘটনাবলী দেখে সন্দেহভাজন রোগীরা নিজেদের পরীক্ষা এবং চিকিৎসার আওতায় যেতে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। এভাবেই অসংখ্য রোগী করোনার উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে অথবা মুমূর্র্ষু অবস্থায় হাসপাতালে এসে মৃত্যুবরণ করছে। সন্দেহভাজন রোগীদের বিলম্বিত পরীক্ষা এবং পরীক্ষার ফলাফল পেতে সময়ক্ষেপণের কারণে আরো অসংখ্য মানুষ সে সব রোগীদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হলেও তারা তা জানতে বা বুঝতেও পারছে না। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে করোনা আক্রান্ত বেশ কয়েকজন রোগীর বিশেষায়িত হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের চরম অবহেলার শিকার হওয়ার পরও বেঁচে যাওয়া ও চরম কষ্ট-দুর্ভোগের অভিজ্ঞতার বর্ণনা পাওয়া যায়। মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে করোনা রোগীর সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত থাকার পরও রোগীরা দিনে দু’একবারও ডাক্তার-নার্সদের দেখা পাননি বলে জানিয়েছেন। আর এখন মানহীন মাস্ক এবং পিপিই’র কারণে শতাধিক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমান রোগীরা আদৌ কোনো সেবা এবং সুচিকিৎসা পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে দেশে এখনো অনেক ভালো ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ পেলে তারা এই মহামারীতে রোগীদের সেবা ও সুচিকিৎসা দিতে পিছ পা হবেন না বলে আমাদের বিশ্বাস। দেশের স্বাস্থ্যসেবা এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, সমন্বয়হীনতা দীর্ঘদিনের। এখন করোনাভাইরাস মহামারীর জাতীয় ও বৈশ্বিক দুর্যোগে দেশের সব মানুষের দৃষ্টি দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার দিকে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাজেট সঙ্কুচিত করে হাজার হাজার কোটি টাকার যোগান দেয়া হচ্ছে করোনাভাইরাস মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খাতে। লকডাউন প্রত্যাহার করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করতে হলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুসারে প্রথমেই দ্রুততম সময়ে লাখ লাখ মানুষকে করোনাভাইরাস টেস্টের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আক্রান্ত রোগীদের সঠিক কোয়ারেন্টাইন ও উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নতুন সংক্রমণ রোধের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় চলমান বিশৃঙ্খলা ও সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রোগী ও তাদের আত্মীয় পরিজনদেরও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। করোনা রোগীরা সম্ভাব্য উপসর্গ ও তথ্য গোপন করলে তা সবার জন্যই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে সব ধরনের হাসপাতালেই ডাক্তার ও নার্সদের জন্য করোনাভাইরাস নিরোধী পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। মানহীন পিপিই সরবরাহের কারণে ইতোমধ্যেই বেশকিছু ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভুল স্বীকার করে দায়মুক্তি চেয়েছে। তবে সরবরাহকৃত এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিইর মান যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা ও দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। দেশ ও জাতির এই চরম দুর্দিনে স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা, মানহীনতা দূর করে সকলের আস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাভাইরাস মহামারীর বিপদ উত্তরণে এই চ্যালেঞ্জেও আমাদের সফল হওয়ার বিকল্প নেই।



 

Show all comments
  • jack ali ২২ এপ্রিল, ২০২০, ৫:৫১ পিএম says : 0
    Government said they stronger than coronavirus.. they why our country is affected by Coronavirus.. They are just irresponsible criminal chatterbox.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন