পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণীকে বোঝায়। যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেক সময় যা সাধারণ সর্দি-কাশির ন্যায় মনে হয়। এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনোভাইরাস, কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯। অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা ঊর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মতো কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কার হয়নি।
করোনাভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের নিদুভাইরাস বর্গের করোনাভিরিডি গোত্রের অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য। তারা পজিটিভ সেন্স একক সূত্রবিশিষ্ট আবরণীবদ্ধ বা এনভেলপড ভাইরাস। তাদের নিউক্লিওক্যাপসিড সর্পিলাকৃতির। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ কিলো বেসপেয়ার-এর মধ্যে হয়ে থাকে, যা এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে সর্ববৃহৎ।
করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন ভাষার করোনা থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ ‘মুকুট’। কারণ দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেক্ট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির আবরণ থেকে গদা-আকৃতির প্রোটিনের কাঁটাগুলির কারণে এটিকে অনেকটা মুকুটের মতো দেখায়। ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে, যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা-এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এ প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। ভাইরাসটি ডাইমরফিজম রূপ প্রকাশ করে। ধারণা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করে।
করোনাভাইরাসের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই ভাইরাসটি ৬০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম দেখা যায়। সাধারণ সর্দি-হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই’ এবং ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩’ নামে নামকরণ করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরো বেশ কিছু প্রজাতি পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ সালে ‘এসএআরএস-সিওভি’, ২০০৪ সালে ‘এইচসিওভি এনএল৬৩’, ২০০৫ সালে ‘এইচকেইউ১’, ২০১২ সালে ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সাল চীনে এসএআরএস-সিওভি-২’ পাওয়া যায়। যা বর্তমানে নোভেল করোনাভাইরাস নামেই পরিচিত। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসকষ্টের গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয়।
এই নোভেল করোনাভাইরাসের জীবাণু সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও ক্ষমতার আধিপত্যবাদের গন্ধ পাওয়া যায়। কেউ কেউ এটাকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। আবার অনেকে বলেছেন, করোনা কোনো ভাইরাস নয়, এটা আল্লাহর গজব, আমাদের কর্ম ফল।
গত ৯ এপ্রিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীরা করোনা জীবাণু অস্ত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে হামলা চালাতে পারে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সুরক্ষার ও শান্তির ক্ষেত্রে এ ভাইরাস হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা যেমন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে, তেমনি এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষমতাও ক্ষুণ্ণ হতে পারে।’ অর্থাৎ জাতিসংঘ ভাবছে এ জীবাণু অস্ত্রের প্রয়োগের ফলে বিশ্ব ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
আল্লাহকে যদি আমরা সার্বভৌম শক্তি হিসেবে না মানি, ইচ্ছামত কুরআনের হুকুম লংঘন করি এবং নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা না করি, যথেচ্ছ অন্যায়, অবিচার, সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার, দুর্নীতি করতে থাকি, বিশ্বনেতারা/রাষ্ট্রের নেতারা যথেচ্ছ মিথ্যাচার করতে থাকে তবে আল্লাহর শাস্তি অনিবার্য। বিশ্বব্যাপী মানুষজাতি বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এবং সবচে বড় কথা এই পাপগুলিকে তারা সভ্যতার সূচক হিসাবে বুঝাতে চাইছে। কওমে লুতের ধ্বংস যে পাপে হয়েছে সেই সমকামিতাকে স্বীকৃতি দিয়ে সমলিঙ্গের বিয়ের আইনগত বৈধতা দিয়েছে অনেক দেশ। নারী পুরুষের উন্মুক্ত যৌনতা এখন আধুনিকতা নামে স্বীকৃত। সমাজের নিকৃষ্টতম শ্রেণির মানুষগুলি এখন নেতৃত্বে। সত্য কথা প্রকাশ করাটা প্রায় অসম্ভব। সুদ এবং ঘুষ বিশ্বব্যাপী ব্যবসার অবশ্য পালনীয় নিয়ামক। নারীদের উন্মুক্ত পোশাককে সভ্যতার মাপকাঠি মানা হচ্ছে। বিচারক সবচে বড় পক্ষপাতদুষ্ট। ধর্মীয় অনুশাসন তিরোহিত। ধর্ম মানাটা এখন অপসংস্কৃতিই শুধু নয় অনেক ক্ষেত্রে অপরাধও।
এ পেক্ষাপটে বলা যায়, করোনা কোনো ভাইরাস নয়। আল্লাহর গজব। যা আমাদের কর্মফল। অন্যভাবে দেখলে বলতে হয়, আমেরিকা ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি। প্রথমে আমেরিকা তার সৈন্যদের মাধ্যমে চীনের উহানে এ জীবাণু অস্ত্র ছড়িয়েছে। তার পর তা ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়েছে। যাহোক, করোনার প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীতে যা যা ঘটবে বলে বিশেষজ্ঞগণ ধারণা করেছেন তা হলো: ১. বিশ্বায়ন বা বিশ্ব ব্যবস্থা যেভাবে মুক্ত বাজার অর্থনীতির ভিত্তিতে সংহতি, সহমর্মিতা, সমবেদনা ও দূরদৃষ্টির মাধ্যমে গড়ে উঠছিল তা যে আসলে লোভ, প্রতারণা ও ক্রুদ্ধ প্রতিযোগিতামূলক ছিল তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। ফলে বিশ্বায়ন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ২. ভবিষ্যৎ উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা দোকানদারদের হাত থেকে চলে যাবে অনলাইন বা ইকমার্স ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ৩. যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে। ৪. ডলার হয়তো আর বিশ্ব ব্যবসার ভিত্তি হিসেবে থাকবে না। ৫. বিশ্বের কর্তৃত্বের কাঠামোগত পরিবর্তন হবে। আঞ্চলিক শক্তিগুলোর নতুন মেরুকরণ হবে। ৬. বিশ্বের কেন্দ্রে যে বাণিজ্যিক যুদ্ধ ছিল এখন তা রাজনৈতিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। ৭. মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন হবে। সর্বোপরি কেউ যদি আল্লাহতায়ালকে সর্বশক্তিমান হিসেবে না মানে তবে তার বা তাদের এভাবেই ধ্বংস হবে ইনশাল্লাহ।
লেখক: চেয়ারম্যান, ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।