পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ও লকডাউন ঘোষণা করে সব মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকলেও খাদ্যের চাহিদা অব্যাহত আছে। মানুষের চলাচল কঠোরভাবে সীমিত এবং নিত্যপণ্যের কেনাবেচা অনেকটা শিথিল। ওদিকে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় দেশে খাদ্যসহ পণ্য সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর সপ্তাহ খানেক পরেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রমজান মাসে চাহিদা অনুসারে বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা ও মূল্যবৃদ্ধি স্বাধীন ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। এবার এক বিশেষ দুর্যোগময় সময়ে সমাগত রমজানে পণ্য চাহিদা অনুপাতে সরবরাহের ঘাটতি বড় ধরনের সামাজিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। দেশে ধানের বাম্পার ফলনসহ কৃষি ও খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও শুধুমাত্র অপর্যাপ্ত পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থাপনার কারণে এই সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চালের পর্যাপ্ত মজুদের পাশাপাশি সব্জি, পোল্ট্রি, মৎস্য ও দেশীয় ফল-ফলারির পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি রমজান মাসকে সামনে রেখে আমদানি করা খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য বন্দর থেকে ডেলিভারি ও বিপণনের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে হাজার হাজার টন খাদ্যপণ্য আমদানি হলেও সাধারণ ছুটি ও করোনা লকডাউনের কারণে তা খালাস ও পরিবহন করা যাচ্ছে না। রমজানের জন্য ছোলা, খেজুর, চিনি, ডাল, ভোজ্যতেল, দুধ, মসলা, বিভিন্ন ধরনের তাজা ফলসহ শিল্পের কাঁচামালের কন্টেইনারে বন্দরে জট সৃষ্টি হয়েছে। দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও রমজানের অধিক চাহিদার কারণে শীঘ্রই তা ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কিছু মানুষের প্যানিক বায়িং করেছে ও করছে। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। দেশীয় পেঁয়াজের মওসুম হওয়ায় গত সপ্তাহে খুচরা ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও গত কয়েকদিনে তা কেজিতে ১৫-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য পরিবহনের সংকটকেই এ ক্ষেত্রে বাড়তি দামের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে সংশ্লিষ্ট পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। করোনার কারণে ইতোমধ্যে সরকারি খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু হলেও রমজান উপলক্ষে চাহিদা বৃদ্ধির অজুহাতে মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ খুঁজতে পারে বাজার সিন্ডিকেট। মূল্যবৃদ্ধিকারী সিন্ডিকেট রুখতে এবং পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে এখনি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
করোনার কারণে মাস ধরে কর্মহীন কোটি কোটি মানুষের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। অথচ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরবন্দি মানুষের সুষম খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। দেশের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য, শাক-সব্জি, মৎস্য, পোল্ট্রি, ফল এবং বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যের খালাস ও পরিবহন নিশ্চিত করতে বিশেষ জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষত লকডাউনের বাধ্যবাধকতা, স্বাস্থ্যবিধি, করোনা নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখে খাদ্য পরিবহন, সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া যেতে পারে। একদিকে করোনার কারণে কর্মহীন কোটি কোটি মানুষের অর্থসংকট এবং রমজানের বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে সরকারের পাশাপাশি দেশের ধনবানদের সহায়তার হাত বাড়াতে হবে। পবিত্র রমজান মাসের পণ্য চাহিদা এবং আগামীতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার প্রয়োজনে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট কমিয়ে নিত্যপণ্য ও কাঁচামাল খালাস ও সরবরাহের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যক্রম যতটা সম্ভব সচল রাখতে হবে। করোনা মহামারী মোকাবেলায় মানুষের চলাচল সীমিতকরণ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ অবশ্যই জরুরি। এ জন্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে জরুরি খাদ্য এবং পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্যপণ্য এবং জরুরি মানবিক প্রয়োজনে মানুষের অনিবার্য চলাচলের কারণে যেন করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ থাকতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারী, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, রমজানের বিশেষ চাহিদা এবং আগামীদিনের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়গুলোকে সমন্বিত করেই এখন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। পণ্যপরিবহনের অজুহাতে অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোনো পক্ষ যেন রমজান মাসে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।