পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু অচল হয়ে পড়ায় খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে ছিন্নমূল মানুষ নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। প্রণোদনামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে গেছে। তবে ত্রাণ কর্যক্রম শুরু হতে না হতেই ব্যাপক হারে দুর্নীতি শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন জেলায় ত্রাণের চাল চুরির হিড়িক পড়েছে। শত শত চালের বস্তা চুরির খবর ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩০ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে ২২৬৪ বস্তা চাল চুরি হয়েছে। এসব চুরির সাথে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা এবং জেল-জরিমানাও করা হয়েছে।
প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক সংখ্যক মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে এলেও কারো কারো জন্য তা যেন আশীর্বাদ হয়ে উঠে। এ সময়ে সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার সাথে সাথে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির নেতা-কর্মীর যেন পৌষ মাস শুরু হয়। গরিবের হক মেরে খাওয়ার প্রতিযোগিতায় তাদের আঁটঘাট বেঁধে নেমে পড়তে দেখা যায়। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি যখন সব শ্রেণির মানুষকে ঘরবন্দি করে ফেলেছে, বের হওয়ার কোনো উপায় নেই, তখন খেটে খাওয়া মানুষের বঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের সহায়তা ও ত্রাণ সামগ্রী। আয়-উপার্জনহীন মানুষের জন্য ইতোমধ্যে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, করোনার এই ভয়ংকর সময়েও ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মী ত্রাণের চাল চুরিতে ব্যস্ত। শত শত বস্তা চাল চুরি করে গরিবের রিজিক মেরে দিচ্ছে। আর চুরির এ দায় নিতে হচ্ছে পুরো দলকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও ত্রাণ চুরির অভিযোগ উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে বিপদগ্রস্ত ও সর্বস্বহারা মানুষের জন্য ব্যাপকভিত্তিতে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সে সময়ও ত্রাণ নিয়ে হরিলুট হয়েছিল। আওয়ামী লীগেরই একশ্রেণির নেতা-কর্মী এই লুটপাট চালিয়েছিল। লুটপাট এতটাই সীমাহীন ছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে পর্যন্ত বলতে হয়েছিল, ‘আমার কম্বল কই।’ ত্রাণ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে তখন আওয়ামী লীগকে ‘রিলিফ চোরে’র বদনামও নিতে হয়েছিল। এ বদনাম এখনো ঘোচেনি। ত্রাণ কার্যক্রমে অতীতের বদনামের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে এ থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব দুর্যোগের সময় অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর তাকিদ এবং এক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্নীতি বরদাস্ত না করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে দলের দুর্বিণীত শ্রেণিটিকে তা খুব কমই আমলে নিতে দেখা গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রণোদনামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে উপার্জনহারা হয়ে পড়া ৩৪ লাখ পরিবারকে মাসিক দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে তিন মাস দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং যুগান্তকারী। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই হুঁশিয়ারি এবং জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের কথা বলেন। দুঃখের বিষয়, তাঁর নির্দেশনা অনেক ক্ষেত্রে যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয় না। চলমান ভয়াবহ সংকটকালে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া উদ্যোগ সর্বত্র প্রশংসা পেলেও তাতে বদনাম সেঁটে দিচ্ছে দুর্বৃত্তশ্রেণির নেতা-কর্মী। দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিবেদিত প্রধানমন্ত্রীর এ মহতী উদ্যোগে বদনামের কালিমা লেপন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
এবারের প্রণোদনামূলক প্যাকেজ ও ত্রাণ কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয়, এ জন্য প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষের দুর্ভোগের সময় কেউ ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। তাকে আমি ছাড়ব না।’ পরিতাপের বিষয়, প্রধানমন্ত্রীর এই কঠোর অবস্থানকেও দুর্বৃত্ত শ্রেণি তোয়াক্কা করছে না। তাদের দুর্নীতির কারণে তাঁর উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অথচ এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে সফল করে তুলতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীর আন্তরিকভাবে কাজ করা উচিৎ। আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নেয়া জনপ্রিয় প্রতিটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রশাসনসহ দায়িত্বশীলদের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ উদ্যোগ কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। পুরো কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজনে প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে হবে এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যারাই ত্রাণ নিয়ে নয়ছয় কিংবা তছরুফ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। যেহেতু ত্রাণ চুরির ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের নাম এসেছে এবং কেউ কেউ ধরা পড়েছে, তাই আর কেউ যাতে এই অপকর্ম করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।