পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ গত তিন-চারদিন ধরে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের তথ্য বিবরণী মোতাবেক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাবৃদ্ধি আমাদের জন্য বড় ধরনের বিপদের আলামত। এহেন বাস্তবতায় সোশ্যাল ডিস্টেন্সিংয়ের পন্থা কঠোরভাবে মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। শুরুতে বেশকিছু শিথিলতা, দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতা থাকলেও গত ২৫ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিলে সব শ্রেণির মানুষের ঘরে থাকা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা পালনের মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ রোধ করার জন্যই। ইতোমধ্যে ছুটির মেয়াদ দুই দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রথমে স্কুল-কলেজ অফিস-আদালতের ছুটি পেয়ে কিছু মানুষকে উৎসবের ছুটির মতো আনন্দ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তেও দেখা গেছে। তবে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরও উন্নত বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের সংক্রমণ এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর খবরে ভীতি ছড়িয়ে পড়লে দেশের সর্বত্র অধিকাংশ মানুষ ঘরবন্দি জীবনযাপন করলেও কিছু মানুষকে এখনো বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের মহামারীতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের গতি রোধে সামাজিক দূরত্ব, সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনের চেয়ে কার্যকর আর কিছুই নেই। মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করতে সেনাবাহিনীকে রাস্তায় টহলে নামানোর পরও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অসংখ্য মানুষকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে রাস্তায় ও বাজারে দেখা যাচ্ছে। ব্যাপক প্রাণঘাতী একটি মহামারীর সময়ে এসব অসচেতন ও বেপরোয়া লোকদেরকে ঘরে আবদ্ধ রেখে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত রাখতে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্ফিউ, প্রকাশ্য শাস্তি এবং গুলি করার মতো ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে আমাদের দেশের অবস্থা সেসব দেশের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার যে আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে, তা রোধে এখনই দীর্ঘমেয়াদী সর্বাত্মক লকডাউনের বিকল্প নেই।
মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়িয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কীভাবে সামাজিক সংক্রমণ ঘটছে তার ক্রনোলজিক্যাল হিস্ট্রি বের করার কোনো প্রক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে না। সংক্রমিত ও মৃত ব্যক্তিরা কোথায় গিয়েছেন, কাদের সাথে মিশেছেন সেসব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা এবং স্থানগুলোকে সঠিকভাবে লকডাউন করতে না পারলে পুরো জাতির জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা, থানা ও গ্রাম ও মহল্লা পর্যায়ের নির্দিষ্ট স্থান ও বাড়িকে লকডাউনের আওতায় আনলেও এভাবে সামাজিক সংক্রমণ রোধ করা অসম্ভব হবে। এ কারণেই পুরো দেশকে অন্তত একমাসের জন্য লকডাউন করে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ মোকাবেলার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যে উদ্দেশ্যে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে দেশের শিল্পকারখানা, অফিস আদালত ও সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অতি সীমিত করে ফেলা হলো কিছু মানুষের অপরিণামদর্শী আচরণ ও সিদ্ধান্তে তা যেন অনেকটাই ব্যর্থ হতে চলেছে। বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া এবং হঠাৎ করে কারখানায় যোগ দেয়ার নোটিশ দিয়ে ঢাকায় জড়ো করার মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের সামগ্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। আইইডিসিআর’র হিসাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য দেয়া হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুর যে সব খবর গণমাধ্যমে এসেছে তার সংখ্যা অনেক বেশি।
উন্নত দেশগুলোতে করোনাভাইরাস মহামারীতে যে গণমৃত্যুর চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে আমাদের বাস্তবতায় আতঙ্কিত ও উদ্বিঘ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে লকডাউনের নির্দেশ না দিয়ে সারাদেশেই কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যে স্থানগুলোতে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া গেছে সেসব স্থানের সব অধিবাসিকে কঠোর নজরদারিসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এখনো দেশে হাজার হাজার মানুষের সংক্রমণ ধরা পড়েনি। সংক্রমণ যাতে হাজার হাজার বা লাখে না পৌঁছাতে পারে সে জন্যই এখন সম্ভাব্য সব রোগীকে কোভিড-১৯ টেস্টের আওতায় আনার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষের মধ্য থেকে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতার মনোভাব দূর করে আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ জন্য প্রথমেই ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা (পিপিই) এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের খাদ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে দরিদ্র ও দিনমজুর ও সহায়-সঞ্চয়হীন মানুষ রাস্তায় নেমে আসবেই। করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা সামলাতে যে বিশাল অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে লাখ লাখ কর্মহীন মানুষের পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। দশ টাকা কেজির চাল এবং স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ঘোষিত খাদ্য সহায়তার বাইরে থাকা বিপুল সংখ্যক কর্মহীন মানুষের কথাও ভাবতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়া রোধে সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।