Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বাগেরহাটে চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ি ভাংচুর, লুটপাটের বর্ণনা দেওয়া গৃহবধূকে হত্যা

বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২০, ৪:৫১ পিএম

বাগেরহাটের চিতলমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চুরির অপবাদ দিয়ে দুটি বসত বাড়ি ভাংচুর, লুটপাটের বর্ণনা দেওয়া গৃহবধূ ইতি বেগম (২০) কে গলা কেটে হত্যা করেছে দূর্বৃত্তরা। বুধবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার কুনিয়া গ্রামে স্বামীর ঘরে তার জবাইকরা মরদেহ পাওয়া যায়। ইতি বেগমের ভাসুর আমিনুর ইসলাম মীরের ১৪ বছর বয়সী ছেলে সাগর ইসলামও নিখোজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই পরিবারের লোকেরা। হত্যার খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছেছে।
ইতি বেগম কুনিয়া গ্রামের সদর আলী মীরের ছেলে জাহিদুল মীরের স্ত্রী। মাত্র দুই মাস আগে ইতির বিয়ে হয়েছিল।

এর আগে চুরির অপবাদ দিয়ে সোমবার (৩০ মার্চ) দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে সদর আলী মীরের দুটি বসত বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট ও বাড়িতে থাকা নারীদের মারধর করে প্রতিপক্ষরা।৯৯৯ নাইনে ফোন করে বিষয়টি জানালেও প্রতিকার পায়নি পরিবারটি। পুলিশ ঘুরে যাওয়ার পরেও ওই পরিবারের গরু, ছাগল, হাস-মুরগি, কবুতরসহ সবকিছু লুটপাট করেছে প্রতিপক্ষরা এমন অভিযোগ করেছে পরিবারের লোকেরা।

বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দেওয়ার পরে মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) রাতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে চিতলমারী থানায় মামলা দায়ের করেন সদর আলীর পুত্রবধু সানজিদা বেগম।

সোমবার দুপুরে হামলার সময় মারধরের শিকার সদর আলী মীরের আরেক পুত্রবধু সানজিদা বেগম বলেন, ইকবাল, সফিক ও ফেরদৌস আলমের নেতৃত্বে আমাদের বাড়িতে লুটপাট ও ভাংচুর করে। স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ সিন্দুক,৮টি গরু, ১০ টি ছাগল, শতাধিক কবুতরসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক মালামাল লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এরপর থেকে হামলাকারীরা হুমকী ধামকী দিয়ে আসছিল। মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা দায়েরের পর আসামীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়।তারা পরিকল্পিতভাবে আমার দেবরের স্ত্রীকে হত্যা করেছে।আমার ভাসুরের ছেলে সাগরকে খুজে পাচ্ছি না। হামলার পর থেকে আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। কিন্তু পুলিশ আমাদের বাড়িতে গিয়ে থাকতে বলেছে। পুলিশের উপর ভরসা করেই আমার দেবরের স্ত্রী ও ভাসুরের ছেলে আমাদের বাড়িতে ছিল। দুপুরে ইতির মরদেহ পাওয়া গেলেও সাগরকে খুজে পাচ্ছি না।
নিহত ইতি বেগমের ননদ সৈয়দা সুলতানা বেগম জানান, সোমবার দুপুরে আমাদের বাড়িতে হামলা করে হামলা ও ভাংচুর করে ইকবাল, সফিক ও ফেরদৌস আলমের নেতৃত্বে এলাকার ২৫-৩০ জন যুবক।আমাদের বাড়িতে থাকা ভাইপো ও ভাইয়ের বউয়ের মুখে হামলার ঘটনা শুনে আমরা ৯৯৯কে ফোন দেই। ৯৯৯ স্থানীয় থানা পুলিশের সাথে কানেক্ট করিয়ে দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও সন্দেহজনক কারণে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সোমবার রাতে তারা আবারও তান্ডব চালায়। আমাদের বাড়ি থেকে গরু, ছাগল, হাস-মুরগী, কবুতর ও আলু নিয়ে যায়। সোমবার হামলার পরে এবং মঙ্গলবার রাতে মামলা দায়েরের পরে পুলিশের ভূমিকা স্পষ্ট হলে এই হত্যাকান্ড ঘটনা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই নারী।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক বলেন, ইতি খানম ও তার ভাসুরের ছেলে সাগর ইসলাম বাড়িতে ছিল। রাতের কোন একসময় ইতিবেগমকে জবাই করে হত্যা করা হয়। দুপুরে আমরা মরদেহ উদ্ধার করেছি।

দুদিন আগে হামলার ঘটনায় পুলিশের অসহযোগিতা ও নিষ্ক্রয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। আমি নিজেও দুইবার গেছিলাম। পুলিশ যাবার পরে আর কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় বেশকিছু চুরির মামলা রয়েছে। তাই এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওই হামলা করে বলে দাবি করেন তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের যা বলেছিলেন ইতি বেগম: দুপুরে হঠাৎ করে ইকবাল, সফিক ও ফেরদৌস আলমের নেতৃত্বে এলাকার ২৫-৩০ জন যুবক আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে থাকা সকলকে এলোপাথারি মারপিট শুরু করে। আমার দুই ভাসুর মিজানুর ইসলাম ও আমিনুর ইসলাম প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়। তারা আমাদের ঘরের মধ্যে থাকা সবকিছু ভাংচুর করে। আমরা চিৎকার শুরু করলে আমার জা সানজিদা বেগমের গলায় ছুরি ধরে তার কোল থেকে ১৮ মাসের বাচ্চা নিয়ে যায়। বাচ্চার গলায়ও ছুঢ়ি ধরে বলে চিৎকার করলে মেরে ফেলব। প্রায় দুই ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে তারা লোহার সিন্দুকে রাখা ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকাসহ সব কিছু নিয়ে চলে যায়। এতে আমাদের প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ