পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও সম্ভাব্য রোগীদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে রাখা বিশ্বব্যাপী অনুসৃত পন্থা। একইভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে সোশ্যাল ডিসট্যান্স বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকেই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ। কলকারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ রেখে মানুষকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করা এবং বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ রয়েছে। চীনের উহান থেকে সমগ্র চীনে এবং বাইরে করোনাভাইরাস ব্যাপক মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চীন সরকারের এমন লকডাউন, শাটডাউন ও সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বেশ কার্যকর পন্থা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যেসব দেশ এসব বিষয়ে শুরুতে গুরুত্ব দেয়নি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়ক্ষেপণ করেছে সেখানেই করোনাভাইরাস প্রাণঘাতী মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা জারি করেছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা লকডাউনের পরও দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ তৃতীয় ধাপ তথা সোশ্যাল ট্রান্সমিশনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন। এ সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা অবলস্বন করলে মহামারীর ব্যাপকতা রোধ করা হয়তো সম্ভব। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা সুখকর নয়। শহরে-বন্দরে অনেকেই সামাজিক দূরত্বের নিয়মনীতি মানছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাসদস্যদের নজরদারির মধ্যেও অনেক মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। ব্যাপক ছোঁয়াচে ও প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের অসচেতনতায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের তরফ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি, এমন কি মৃত্যুও হতে পারে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, দেশের অধিকাংশ এলাকার মানুষ করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্বনীতি ও সরকারি নির্দেশনা মানছে না। লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাজারে ও চায়ের দোকানে আড্ডা জমাচ্ছে। অথচ এসব লোকের শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাই ছিল বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অন্যদিকে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে অবস্থানরত বেশিরভাগ মানুষকে সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা অমান্য করে রাস্তা, বাজার ও দোকানে ভিড় জমাতে দেখা যাচ্ছে। আইন ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার এহেন প্রবণতা দেশের মানুষের মধ্যে কোনো নতুন বিষয় নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই মানুষের মধ্যে এহেন প্রবণতা দেখা দেয়। কিন্তু ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের এবং সমাজের মানুষের জীবন-মৃত্যুর হুমকির বিষয় যেখানে জড়িত, সেখানে এহেন বেপরোয়া মনোভাব অকল্পনীয়, অপ্রত্যাশিত। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে। আইন বিধি ও নির্দেশনা লংঘনকারীদের প্রতি দয়া বা অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে সরকারি নির্দেশনা অমান্যের গতানুগতিক প্রবণতার পাশাপাশি এক শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষের রুটি-রুজির বিষয়ও এর সাথে জড়িত রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কেনা-বেচার সুযোগ লকডাউনের আওতার বাইরে থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের একশ্রেণির মানুষ জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। তাদের অহেতুক আতঙ্কিত বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে তাদের জন্য ত্রাণ বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে টেলিকনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কথা বলেছেন। সেখানে কর্মকর্তাদের সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতেই যেন বেশি দেখা গেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের বিষয়ে বলিষ্ঠ বক্তব্য শোনা যায়নি। তবে জনগণের সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া শুধুমাত্র প্রশাসনের পক্ষে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো নির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর আংশিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঠেকানো অসম্ভব। সরকারি নির্দেশনা ও আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মহীন, অতি দরিদ্র, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের খাদ্য চাহিদাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যথাশীঘ্র ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনিশ্চিত ও জটিল অবস্থানে থাকায় ইতোমধ্যে লকডাউন ও ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় অনেক মানুষের জন্য জীবনধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। তাই শুধু লকডাউন, শাটডাউনের মেয়াদ বাড়ালেই হবে না, সেই সাথে সব শ্রেণির মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনার বাজেটও বাড়াতে হবে। সরকারের একটি সমন্বিত পরিকল্পনার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ও করপোরেট পর্যায়ের উদ্যোগও থাকতে হবে। প্রণোদনা ও রিলিফ বাজেটের যথাযথ বিতরণে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনবান্ধব, কঠোর ও পেশাদারী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।