Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে হবে

নাজমুল হক | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০৪ এএম

বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। উন্নত দেশের তালিকায় যে সকল দেশ আছে তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। চীন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, স্পেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া বাদ যাচ্ছে না কোনো দেশ। করোনাকে মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সারাবিশ্বে দক্ষ ও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়তে চীন, কানাডা, আমেরিকার অবস্থান শীর্ষে। উন্নত বিশ্বের কাতারে শক্তিমান প্রত্যয়ী ভূখন্ড যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সুইজারল্যান্ড। উন্নত প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিদ্যা থাকার পরেও করোনার ছোবলে তারাই সবচেয়ে বেশি পর্যদুস্ত। চীন অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও বহু জীবনের বিনিময়ে প্রাণঘাতী এ রোগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। জাতীয় বীরের বেশে ফিরেছে সে দেশের চিকিৎসকরা। একমাত্র চিকিৎসকরাই জীবন বাজী রেখে সকল প্রকার চিকিৎসাবিদ্যা প্রয়োগ করে মরণঘাতী এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। চীনের চিকিৎসকরা আবার বিশ্বের মডেল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। তারা প্রথমে নিজেদের সুরক্ষা করে পরে দেশ ও দেশের মানুষকে সুরক্ষা করেছে।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সারা দেশে অফিস-আদালত বন্ধ। সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হয়েছে। এর আগে লকডাউন করা হয়েছে দুটি উপজেলা। যশোর জেলা শহরও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আগেই ২৫-৩১ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশের সুপার মার্কেট, বিপণি বিতান ও মার্কেটসমূহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ১০ জন চিকিৎসক আইসোলেশনে আছেন। দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও শুরু হচ্ছে। যারা বিদেশফেরত বা বিদেশফেরতদের সংস্পর্শে এসেছেন তার বাইরেও আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ইতালি বা চীনের মতো অবস্থায় যায়, আর সমান তালে চিকিৎসক, নার্সরা আক্রান্ত হতে শুরু করে তাহলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হাসপাতালগুলো চিকিৎসক ও নার্স শূন্য হয়ে যাবে। তারাও আগ্রহ হারাবে চিকিৎসা দিতে। এটি একটি বড় আশঙ্কার ব্যাপার। তখন বিপদের আর শেষ থাকবে না।
আমাদের দেশে এখনো সব হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীর ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণে দেওয়া হয়নি। জেলা ও উপজেলা শহরে তো নেইই। ফলে একদিকে যেমন চিকিৎসকরা সর্দি-কাশি-জ্বরের রোগীদের চিকিৎসা দিতে ভয় পাচ্ছেন, অন্যদিকে বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা না পাওয়ার ভয়ে বিদেশ ভ্রমণের কথা গোপন করছে। রোগীদের ধারণা, বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস থাকলে তারা আর চিকিৎসা পাবে না, প্রকৃতপক্ষে সেটাই ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে।
দেশে করোনাভাইরাস যেভাবে বিস্তার করছে তার মেটিভ মোটেও সুখকর নয়। এটা একমাত্র মানুষের সচেতনতা ও চিকিৎসা সেবা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। করোনাভাইরাস যেহেতু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায়, তাই চিকিৎসকরাও নিরাপদ নয়। চিকিৎসার সাথে জড়িত নার্স, ব্রাদার, ওয়ার্ড বয় কেউ নিরাপদ বোধ করবে না। এ ক্ষেত্রে আগে তাদের সুরক্ষিত করতে হবে। সার্জিক্যাল মাস্ক, ডিসপোজেবল গ্লাভস, সার্জিক্যাল ক্যাপ, ওয়ার্কিং ইউনিফর্ম সরবরাহ করতেই হবে। মহামান্য হাইকোর্টও আদেশ দিয়েছেন।
কোয়ারিন্টিনে যে সকল চিকিৎসক, সেবিকা-সেবকসহ সংশ্লিস্টরা সেবা প্রদান করবেন তাদের বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের এই জাতীয় দুর্যোগ থেকে তারাই কান্ডারীর ভূমিকা পালন করবে।
আজকে করোনার বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। কিন্তু অস্ত্র ছাড়া হেলমেট ছাড়া যাবে কেউ যুদ্ধ ক্ষেত্রে? তাহলে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কীভাবে চিকিৎসা করবে? আমাদের ডাক্তাররা তো চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাদের সুরক্ষিত করে চিকিৎসার যুদ্ধে পাঠাতে হবে।
সরকারের প্রতি চিকিৎসকদের আস্থা বাড়ানোটা বেশি জরুরি। গত বছর ডেঙ্গুতে চিকিৎসকদের একটি করুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই সময়ে শতাধিক চিকিৎসক-নার্স আক্রান্ত হয়েছে। যারাই সেবা দেবে তারাই যদি আক্রান্ত হয় তবে আস্থার যায়গাটা থাকে কোথায়? তাই তাদের আস্থা রাখার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। না হলে একসময় তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। জাতি অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে।
লেখক: সাংবাদিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন