পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস বিশ্বমহামারীর আকার ধারণ করার পটভূমিতে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসকে সামনে রেখে জাতির সামনে আশা জাগানিয়া ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস বিস্তারের ঝুঁকির মুখে ইতোমধ্যে সারাদেশে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের পক্ষে যথেষ্ট প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে শুরু থেকেই। কিন্তু প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রার্দুভাব বৃদ্ধির সাথে সাথে সরকারের সেই দাবির অসারতাই প্রমাণিত হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সব দুর্বলতা কাটিয়ে করোনার যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রত্যয় ঘোষিত হলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই প্রত্যয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডে তেমন কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিশেষত: সন্দেহজনক করোনা আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে না। অন্যদিকে ঢাকার প্রধান হাসপাতালগুলো থেকে শুরু করে দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের হাসপাতাল পর্যন্ত কোথাও ডাক্তার ও নার্সদের জন্য প্রয়োজনীয় পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষাব্যবস্থা নেই। যে কোনো বিচারে এটি একটি মহামারী ও দুর্যোগকালীন অবস্থা। যেহেতু সারাবিশ্বে এবং দেশের সর্বত্র ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, সেহেতু দেশের রোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসাব্যবস্থাও অবারিত ও সহজলভ্য হতে হবে। করোনা নিয়ে অবেহেলা, লুকোচুরি এবং শনাক্তকরণ কিট, সুরক্ষাব্যবস্থা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চরম অপ্রতুলতাসহ সংশ্লিষ্টদের দায়সারাভাব জনমনে এক ধরনের অনাস্থা-অবিশ্বাস ও অসহিষ্ণুতার জন্ম দিচ্ছে। একটি বৈশ্বিক মহামারীর সময় সংশ্লিষ্টদের এ ধরনের আচরণ ও ভূমিকা মানুষকে আরো বেশি নিরাপত্তাহীনতা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
চীনে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং দেশের রোগতত্ত¡ বিশেষজ্ঞদের তরফে বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আইইডিসিআরের তরফ থেকেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে শুরু থেকেই। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। গণমাধ্যমে ঘটা করে আইইডিসিআরের যে সব হটলাইন নম্বর দেয়া হয়েছিল, লাখ লাখ মানুষ সে সব নাম্বারে কল করলেও তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া বা প্রতিবিধান পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, হটলাইন চালুর পর থেকে প্রায় ৫ লাখ মানুষ করোনা পরীক্ষার জন্য হটলাইনে যোগাযোগ করলেও এ পর্যন্ত পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছে মাত্র ৭৯৪ জন। অন্যদিকে সারাদেশে বিদেশফেরত লাখ লাখ মানুষের খুব সীমিত অংশই হোমকোয়ারেন্টাইনে আছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টানে আছে মাত্র অর্ধশত। অথচ বিদেশফেরত লাখ লাখ মানুষের মধ্যে অনেকেই করোনাভাইরাস বহন করছে বলে এক ধরনের সামাজিক ভীতি ও আশঙ্কা কাজ করছে। দেশে এ পর্যন্ত নিশ্চিত করোনাভাইরাস রোগীর যে সংখ্যার কথা বলা হচ্ছে, সারাদেশে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা আরো বহু বেশি বলে মানুষের মধ্যে ধারণা রয়েছে। অচিহ্নিত ও কোয়ারেন্টাইনের বাইরে থাকা করোনাভাইরাস রোগীরা সমাজের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
করোনাভাইরাসের উপসর্গের সাথে সাধারণ মওসুমী সর্দি-কাশি, কফ ও গলাব্যথার উপসর্গের মিল থাকায় এ ধরনের রোগীরা স্বাভাবিকভাবেই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। এ সব কারণেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত ও সহজলভ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। এখনো ঢাকায় বড় বড় হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয়। করোনাভাইরাস পরীক্ষার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র পারফরমেন্স অত্যন্ত হতাশাজনক। এর পরিচালক প্রেস ব্রিফিংয়ে যতটা উৎসাহী, করোনা পরীক্ষায় ততটাই অনাগ্রহী। সবচেয়ে বড় কথা, গোটা বিষয়টি তার নিজের কুক্ষিগত রাখতেই যেন তিনি বেশি পছন্দ করছেন। তার এই আচরণ মানুষ মোটেই পছন্দ করছে না। অন্যদিকে সরকারের ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি সত্তে্বও এ দীর্ঘ সময়েও সব বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালগুলোতে ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারা অনেক বড় ব্যর্থতা। অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা অমার্জনীয়। অযোগ্য-অপদার্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে সংকট উত্তরণ সম্ভব কিনা তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। অনেক আগেই চীন থেকে হাজার হাজার টেস্টিং কিট দেয়ার ঘোষণা শোনা গিয়েছিল। ডাক্তার ও নার্সদের জন্য দু-চারশ’ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে কয়েক সপ্তাহ সময় ক্ষেপণের কোনো কারণ থাকতে পারে না। করোনাভাইরাস পরীক্ষার দায়িত্ব শুধুমাত্র আইইডিসিআরের হাতে কুক্ষিগত রাখা, আইসিডিআরবিসহ সরকারি-বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোকে দায়িত্বের বাইরে রাখা গ্রহণযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ সব অপরিণামদর্শিতার কারণে করোনা সংক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে তা পুরো জাতির জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অনেক দেরি হয়ে গেছে। লক-ডাউন, শাট-ডাউনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা এখনো অসম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা স্মরণে রেখে রাষ্ট্র এ বিষয়ে সর্বোচ্চ জরুরি উদ্যোগ নেবে, এ মুহূর্তে এটাই দেশবাসীর একান্ত প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।