Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিপন্নকারীদের শাস্তি অবশ্যম্ভাবী

মোহাম্মদ আবদুল গফুর | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাস। সারা বিশ্বে এখন চলছে এই বিষয়েই আলোচনা। করোনাভাইরাস নিয়ে শুধু আলোচনা নয়, সঙ্গে আতংক। এ আতংকের শুরু চীনে হলেও এখন তা ঢুকে পড়েছে উন্নত মহাদেশ বলে পরিচিত ইউরোপে। চীনের পর করোনাভাইরাস সব চাইতে বেশি ছড়িয়েছে ইউরোপের ইতালিতে। কিন্তু এখানেও সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়েছে ইউরোপের অধিকাংশ দেশে।

এমন কি ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের মূল ভূখন্ডের বাইরে ইংল্যান্ডেও। তার বড় প্রমাণ করোনা আতংকে প্রাসাদ ছেড়েছেন সেদেশের রাণী এলিজাবেথও। তাঁর প্রাসাদ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।

ইউরোপ থেকে এ অদ্ভুত রোগটি পাড়ি জমিয়েছে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের তালিকায় ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় স্থান অধিকার করে ফেলেছে। ফলে সে দেশে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

চীনের পর ইউরোপ হয়ে সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে যে রোগটি সে করোনাভাইরাস কি ভৌগোলিক বিচারে অনেক কাছের দেশ বাংলাদেশে একবারেই হানা দেয়নি? সে রকমটা বলতে পারলেই আমরা খুশি হতাম। কিন্তু সে সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। বাংলাদেশে গতকাল বুধবার পর্যন্ত এ ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়েছে মোট ৩৯ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন ব্যক্তি। এর ফলে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সর্বত্র। কারণ এ ভয়াবহ রোগ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি মোটেই পর্যাপ্ত নয়। এ রহস্যজনক ভয়াবহ রোগ মোকাবেলায় শুধু বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর কোনো দেশই আগে থেকে প্রস্তুত ছিল না। এটাই ছিল স্বাভাবিক। সুতরাং বাংলাদেশের মতো একটি উন্নত নয় এমন দেশের যে আগাম প্রস্তুতি থাকার কথা নয়, সেটাও ছিল স্বাভাবিক। বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটা বক্তব্যে এই স্বাভাবিক বাস্তবতার স্বীকৃতি রয়েছে। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। কারণ তিনি বলেছেন, করোনা মোকাবেলায় আমাদের সরঞ্জামের ঘাটতি আছে।

চীনের পর যে দেশটি এ রোগে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে দেশটি ইতালি। ইতালি উন্নত মহাদেশ হিসাবে পরিচিত ইউরোপের অন্যতম উন্নত দেশ। সেই ইতালি করোনা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরও ব্যর্থ হওয়ায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে বলেছেন, করোনা মোকাবেলা এখন নির্ভর করছে আকাশের উপর। অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেন, এ ভয়াবহ রোগের হাত থেকে বিশ্ববাসীর রক্ষা পাওয়া এখন নির্ভর করছে বিশ্বস্রষ্টা বিশ্বপালনকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার রহমত ও দয়ার উপর।

এই কথাটাই এতদিন বলে আসছেন বাংলাদেশের আলেম-ওলামা ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ। যে কথাটা এতদিন বলে আসছেন বাংলাদেশের আলেম-ওলামা ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ সেই একই কথা আধুনিক ইউরোপের অন্যতম দেশ ইতালির প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়ায় একথাটির মূল্য যে অনেক বেড়ে গেছে, সে কথা বলাই বাহুল্য। একারণে ইসলামে গভীর বিশ্বাসী বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যে করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকেই এদেশের আলেম-ওলামা ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ সর্বশক্তিমান পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া মাহফিল এবং বিশেষ করে গত শুক্রবার বাদজুমা বাংলাদেশের সকল মসজিদে করোনার অভিসাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। কে জানে, এর ফলেই হয়ত বাংলাদেশে পরিস্থিতি যত খারাপ হতে পারত, ততটা হয়নি।

তবে কি আমাদের করোনা মোকাবেলায় অন্যান্য সব প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে শুধুই দোয়া চালিয়ে যেতে হবে? নিশ্চয়ই তা নয়। যেসব প্রচেষ্টা চালাতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞগণ, যেমন এই রোগে আক্রান্তদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি রোগে সাবধানতা অবলম্বন করা ইত্যাদি তো করতেই হবে। তবে এসবের পরও পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজেদের বিভিন্ন অন্যায় আচরণ ও পাপাচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

পৃথিবীতে যে কারণে করোনাভাইরাসের মতো মুসিবত মাঝে মাঝে আসে, তার জন্য একশ্রেণির মানুষদের বিশ্বস্রষ্টা বিশ্বপালক আল্লাহতায়ালার মানুষে মানুষে সাম্য-ভ্রাতৃত্বের বিধানকে অগ্রাহ্য করা, দুর্বল মজলুমদের ওপর অন্যায় আচরণ করাই দায়ী। একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে পবিত্র কোরআন ও হাদীসে।

এবার যেসব দেশে করনোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে সেসব দেশের অন্যায় আচরণ ও পাপাচারের উপর কিছুটা আলোকপাত করে আজকের এ লেখার ইতি টানতে চাই। প্রথমত: চীন, যে দেশে করোনাভাইরাস নামের এ রোগ প্রথম ধরা পড়ে। চীন হচ্ছে সেই দেশ, যা পৃথিবীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পর দ্বিতীয় প্রধান কম্যুনিস্ট রাষ্ট্র হিসাবে ইতিহাসে পরিচিত লাভ করেছে। বর্তমানে সোভিয়েত ইউনিয়নে একদলীয় কম্যুনিস্ট শাসনের অবসান হলেও চীনে এখনও কম্যুনিস্ট পার্টির একদলীয় শাসন প্রচলিত রয়েছে। সেখানে নানা রকম অনাচার-অবিচার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।

এবার ইতালির কথা। ইতালি হচ্ছে ইউরোপের সেই দেশ, যা উত্তর আফ্রিকার বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশে অন্যায়ভাবে বহু দিন সাম্প্রজ্যবাদী শাসন চালিয়ে তাদের মানবাধিকার হরণ করে। আর ইংল্যান্ডের যে মহারানী আজ করোনাভাইরাসের ভয়ে রাজকীয় প্রাসাদ ত্যাগ করে অন্যত্র গিয়েছেন নিরাপত্তার জন্য তিনি হচ্ছেন সেই সাম্প্রজ্যবাদী দেশের মহারানী যে বৃটিশ রাজত্বে এককালে সূর্য অস্ত যেত না। কারণ সেই বিশাল বৃটিশ সাম্প্রজ্য এত অধিক দেশ নিয়ে সম্প্রসারিত ছিল, যার কোন দেশে সূর্য অস্ত গেলেও অন্যান্য কোন না কোন দেশে ঠিকই সূর্য আলো ছড়াত। বৃটেন সম্পর্কে যা বলা যায়, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। সাম্প্রজ্যবাদী বিশ্বের এককালের অন্যতম রাষ্ট্র হিসাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যত কম বলা যায়, ততই ভালো। কারণ এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের নেতা বৃটেনের উত্তরাধিকার বহন করে তৃতীয় বিশ্বের অসংখ্য দেশের উপর জুলুম ও নিপীড়ন চালাতে সাম্প্রজ্যবাদী বিশ্বের নেতার ভূমিকা পালন করছে।

একারণে বলা যেতে পারে, যে কারণে চীনের পর ইতালি, বৃটেন, ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শিকার হয়েছে সে কারণ থেকে মুক্ত থাকায় রাশিয়া বর্তমানে মুক্ত থাকায় করোনাভাইরাসের অভিশাপ থেকেও মুক্ত থাকতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে যে করোভাইরাসের সংক্রমণ সীমাবদ্ধ আকারে হলেও দেখা দিয়েছে তার জন্য এ দেশে গণতন্ত্র না থাকার কারণ থাকতে পারে। আসলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একটি জাতির গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণœ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। অন্যদিকে জাতির আন্তর্গত ব্যক্তি মানুষদের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুন্ন করে চালায় একদলীয় স্বৈরাচারীশাসন, যা বর্তমানে চলছে বাংলাদেশে।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৭ মার্চ, ২০২০, ৭:১২ এএম says : 0
    বাংলাদেশে বড় পাপ এবং জুলুম, মিত্যার আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতা লুভীদের ভারতীয় হায়েনাদের গোলামী। কত হত্যা, কত গুম, আর রাহাজানি। সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা করে ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তা। কিন্ত বাংলাদেশের পাপিষ্ঠ, ভারতের তাবেদার, ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তাদের পাক্ষে কথা বলে। যে ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তারা সীমান্তের দারে কাছে আসতে পারবে না দুই চারটা গুলি করিলে সেই পাগলা কুকুরদের গুলি না করিয়া বাংলাদেশে বসে ভারতের পক্ষে ছাফাই গায় বাংলাদেশের মোনফেকরা। এই মোনাফেকরা যখন মরিবে তখন মরিবে কুত্তা মরা। ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৭ মার্চ, ২০২০, ৭:১২ এএম says : 0
    বাংলাদেশে বড় পাপ এবং জুলুম, মিত্যার আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতা লুভীদের ভারতীয় হায়েনাদের গোলামী। কত হত্যা, কত গুম, আর রাহাজানি। সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা করে ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তা। কিন্ত বাংলাদেশের পাপিষ্ঠ, ভারতের তাবেদার, ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তাদের পাক্ষে কথা বলে। যে ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তারা সীমান্তের দারে কাছে আসতে পারবে না দুই চারটা গুলি করিলে সেই পাগলা কুকুরদের গুলি না করিয়া বাংলাদেশে বসে ভারতের পক্ষে ছাফাই গায় বাংলাদেশের মোনফেকরা। এই মোনাফেকরা যখন মরিবে তখন মরিবে কুত্তা মরা। ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৭ মার্চ, ২০২০, ৭:১২ এএম says : 0
    বাংলাদেশে বড় পাপ এবং জুলুম, মিত্যার আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতা লুভীদের ভারতীয় হায়েনাদের গোলামী। কত হত্যা, কত গুম, আর রাহাজানি। সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা করে ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তা। কিন্ত বাংলাদেশের পাপিষ্ঠ, ভারতের তাবেদার, ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তাদের পাক্ষে কথা বলে। যে ভারতীয় বিএসএফ পাগলা কুত্তারা সীমান্তের দারে কাছে আসতে পারবে না দুই চারটা গুলি করিলে সেই পাগলা কুকুরদের গুলি না করিয়া বাংলাদেশে বসে ভারতের পক্ষে ছাফাই গায় বাংলাদেশের মোনফেকরা। এই মোনাফেকরা যখন মরিবে তখন মরিবে কুত্তা মরা। ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২৭ মার্চ, ২০২০, ১:০০ পিএম says : 0
    May Allah wipe out fascist government===O'Allah help us -- our life and dignity is not safe from our government... so let them love coronavirus.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন