মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ওপেকের অবিসংবাদিত নেতা এবং সর্বাধিক প্রভাবশালী সদস্য সউদী আরব সম্প্রতি ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে রাশিয়ার সাথে তার তেল সংক্রান্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব ভেঙে ফেলে এবং উৎপাদন সর্বাধিক করার লক্ষ্যে একটি নতুন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে তেলের দরে সর্বোচ্চ পতন ঘটে।
তবে আরো গুরুত্বপ‚র্ণ বিষয়, এই নতুন সিদ্ধান্তটি বিশ্বব্যাপী তেল বাজারে পুনরায় শক্তির ভারসাম্যে সউদী আরবকে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা এবং স্বীকৃতি দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি বিশ্বের বৃহত্তম তেল রফতানিকারী দেশটির জন্য একটি বড় পরিবর্তন চিহ্নিত করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাশিয়ার অসহযোগিতায় সত্বেও সউদী আরব উৎপাদন স্তরে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে বৈশ্বিক তেল বাজার পরিচালনা করার চেষ্টা করেছে। হবু বাদশাহ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান শেষ পর্যন্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা কেবলমাত্র অভ্যন্তরীণ বাজারের শেয়ারকে সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিই করে না বরং সেইসাথে সংযুক্ত কার্যনির্বাহী সংস্থা হিসেবে ওপেকের যবনিকারও ইঙ্গিত বহন করে।
এই সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ তেল রফতানিকারী দেশ, আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা এবং আমেরিকান শেল অয়েল উৎপাদকদের কাছে মোটেই জনপ্রিয় নয়। কারণ দাম কমার ফলে তাদের রাজস্ব ভীষণভাবে হ্রাস পাবে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদেরকে এগুলি দেউলিয়ার দিকে ঠেলে দেবে।
সউদী কেন অবশেষে এই আগ্রাসী পন্থা গ্রহণ করছে তার বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
প্রথমত, একের পর এক সৌদি বাদশাহরা বিশ্ববাজার পরিচালনা করার জন্য অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার কৌশলগত গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কারণ বিষয়টি তেল সরবরাহের অবাধ প্রবাহ বিপন্ন হওয়ার আকস্মিক সংকট মোকাবেলায় বিশ্বের তেল বাজারের সামর্থ্যের গুরুত্বপ‚র্ণ স‚চক বহন করে।
সউদী আরমকো, দেশটির সুবিশাল তেল ও গ্যাস সংস্থা টেকসই উৎপাদন ক্ষমতা বজায় রাখতে ২০১২ সাল থেকে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল এবং অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করে জরুরী ভিত্তিতে সরবরাহের জন্য আরো ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে ৩ হাজার ৫শ’ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছে। এবং সউদী পরবর্তী বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে এটি চালু রাখবে। আরামকো ২০২০ সালের ১ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল পাম্প করবে বলে আশা করা হচ্ছে যা দেশটির প্রতিদিনের রফতানি আবারো ৯.৫ থেকে ১ কোটি ব্যারেলে উন্নীত করবে।
১ এপ্রিল বা কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সউদী আরব সম্ভবত রাশিয়াকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক হয়ে উঠবে। তবে তেলের এই দর যুদ্ধের অবসান হবে না যতক্ষণ না সউদী আরব যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বের প্রধান উৎপাদকের মুকুট ফিরিয়ে নেয়, যা পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে হওয়া উচিত।
সউদীর অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিতে তেলের কম দাম পরবর্তী দশকের জন্যও পরিচালনাযোগ্য। আরামকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন নাসেরের মতে, ‘সংক্ষেপে বলা যায়, সউদী আরমকো খুব কম দাম বজায় রাখতে পারে এবং এটি দীর্ঘকাল ধরে রাখতে পারে।’ গত বছরে আরামকো আইপিও প্রসপেক্টাস অনুসারে সউদী ব্যারেল প্রতি প্রায় ৮.৯৮ ডলার দরে (মোট কর, ম‚লধন ব্যয়, উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয়) বিশ্বের সুলভতম তেল উৎপাদন করেছে ।
সেই তুলনায়, মার্কিন শেল তেলের উৎপদন খরচ ব্যারেল প্রতি প্রায় ২৩.৩৫ ডলার (এবং নন-শেলের জন্য প্রায় ২০.৯৯ ডলার), এবং রাশিয়ার খরচ ব্যারেল প্রতি গড়ে প্রায় ১৯.২১ ডলার বলে এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিট্রেশন জানিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, নতুন খনন প্রযুক্তির সাথে সউদী উৎপাদন ব্যয় আরও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে যেমন বিশ্বের বৃহত্তম সাগরমুখী তেল ক্ষেত্র শায়বাহ’তে।
দ্বিতীয়ত, সউদীদের ৫০হাজার কোটি ডলারের নিখুঁত বৈদেশিক সম্পদ রয়েছে, তাই তাদের রাজস্ব হ্রাস থেকে রক্ষা পেতে জনসাধারণের বিনিয়োগকৃত সম্পদ পেট্রোলিয়াম বিক্রয় অর্থ দিয়ে রক্ষা করে।
নতুন সৌদি নীতিমালাটি বলেছে যে, টেকসই কম দাম তাদেরকে বাজার ধরে রাখতে সহায়তা করবে এবং সময়ের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রে শেল তেল উৎপাদন বৃদ্ধির বিপরীতে তাদের বাজারের শেয়ার বাড়িয়ে তুলবে। শেল তেলের জন্য হাইড্রোলিক ফ্র্যাকচারিং প্রযুক্তি ইতোমধ্যে বিশ্ব বাজারে প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন নতুন ব্যারেল তেল যুক্ত করেছে। তবে শেল তেল উত্তোলন ব্যয়বহুল, সুতরাং মার্কিন বেঞ্চমার্কের জন্য ব্যারেল প্রতি ২০ থেকে ২৫ ডলারের মধ্যে দাম ধরে রাখার অর্থ হ›ল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপ‚র্ণ মার্কিন উৎপাদন সংস্থা তাদের ব্যবসায়ের ধরণটিকে শীঘ্রই অনির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘমেয়াদে সম্প‚র্ণরূপে দেউলিয়া হিসেবে দেখতে পাবেন।
সৌদি আরব বিশ্বের তেল মজুতের প্রায় ২৫ শতাংশ ধারণ করে, দেশটির বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ৭০ শতাংশ, এবং এটি একটি বিশাল মুনাফার ব্যবধানে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রুড তেল রফতানিকারক।
তাই সউদীর এই নতুন নীতিটিকে পরীক্ষা করার জন্য দেশটির বর্তমান নেতৃত্বের রাজনৈতিক সংকল্পকে সন্দেহ করা মারাত্মক ভুল হবে।
সৌদি আরব একটি নতুন বুনিয়াদের সাথে নতুন একটি তেল বাজার তৈরি করেছে। তেল উৎপাদক যারা এই কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন বুঝতে পারেনি এবং এই নতুন বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পিছনে পড়ে থাকবে। সূত্র : সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।