পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় গ্রামেও করোনাভাইরাস আতঙ্ক বাড়ছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে সবাই প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধনতলিয়া গ্রামের কাতার প্রবাসী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে করোনাভাইরাসের লক্ষণ আছে শুনেই হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন।
করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে একজনের মৃত্যুর ও ১৭ জন আক্রান্ত খবরের পর জনবহুল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলো ক্রমশ ফাঁকা হয়ে গ্রামে ফিরছে সবাই। এই খবর স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামেও করোনাভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করায় শিক্ষার্থীরা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে আসছেন। দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পরই দুশ্চিন্তায় ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
ঝুঁকি এড়াতে ইতোমধ্যে যারা গ্রাম ছেড়ে শহরের উন্নত ব্যবস্থায় জীবন যাবন করছিলেন তারাও এখন অনেকেই করোনাভাইরাস আতঙ্কে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসলেও গ্রামের রাস্তাঘাট কিংবা বাজারগুলোতেও তুলনামূলকভাবে মানুষের চলাফেরা কমে গেছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। খুব প্রয়োজন ছাড়া সারাদিন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না গ্রামের সাধারণ মানুষ। গ্রামের কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেও তাদের চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মাস্ক ব্যবহার করছেন। গ্রামের অটোরিকশার চালকরা যাত্রী পাচ্ছেন না। হাট-বাজারেও জনসমাগম কমছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধনতলিয়া গ্রামের কাতার প্রবাসী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ আছে শুনেই হাসপাতাল থেকে পালিয়েছেন। সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে কাতার প্রবাসী নাসিরনগর সদর হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। তখন ওই প্রবাসী ভর্তির জন্য মেডিসিন ওয়ার্ডে যান। কিছুক্ষণ পরই তিনি পুনরায় জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন।
তখন চিকিৎসক করোনাভাইরাসের লক্ষণ আছে জানিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হবে বলে তাকে জানান। এসব শোনার পর ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান তিনি। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক এ.বি.এম মুছা চৌধুরী জানান, ওই প্রবাসী নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন। তার শরীরের তাপমাত্রা ছিল ১০০ থেকে ১০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। পরীক্ষা করা হবে শুনেই ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক শওকত হোসেন বলেন, বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জানানো হয়েছে। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. অভিজিত রায় বলেন, আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। রোগীর বাড়িতে একটি টিম পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে মুন্সীগঞ্জের জেলার লৌহজং উপজেলার যশলদিয়া গ্রামে আকস্মিক জ্বরে চাচী ও ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলা জুড়ে। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, গত রোববার রাতে ওই গ্রামের বাসিন্দা শামীমা বেগম (৩৪) এবং একই পরিবারের ছেলে আব্দুর রহমান (৩) মারা যায়। দুইজনই আকস্মিক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে দাবি পরিবারের। রোববার রাতে জ্বরে আক্রান্ত হন শামীমা বেগম (৩৪) । ধীরে ধীরে তার শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল ছোপ দেখা দেয়। এরপর কয়েক ঘন্টার মধ্যে তিনি মারা যান। একই দিনে সকাল ৮টার দিকে মারা গেছে আব্দুর রহমান। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মুহুর্তে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল ছোপের চিহ্ন ফুটে উঠে। ধীরে ধীরে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। ঘন্টা খানেকের ব্যবধানে মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ে আব্দুর রহমানও। এদিকে যশলদিয়া গ্রামে চাচী ও ভাতিজার মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাবিরুল ইসলাম খানের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই লৌহজং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. কামরুল ইসলাম প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করে জানান, তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ তাদের মধ্যে ছিল না।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সুমন বনিক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করেছে মেডিকেল টিম। ইতিমধ্যে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে করোনা আতঙ্কে গ্রামে বেড়াতে আসা প্রবাসী এক যুবক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে এলাকাবাসীর মধ্যে হুলস্থুল পড়ে যায়। যে বাড়িতে ওই যুবক বেড়াতে এসেছেন সে বাড়িও ঘেরাও করে রাখেন স্থানীয়রা। খবর দেওয়া হয় থানা পুলিশকেও। পরে পুলিশ এসে কাউকে পায়নি। গত মঙ্গলবার সকালের দিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ভৈরবদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রবাসী ওই যুবক কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার স্বপহাম গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভৈরবদী গ্রামে তার আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
স্থানীয়রা বলছেন, ওই যুবক স¤প্রতি ইতালি থেকে দেশে ফেরত এসেছেন। এসেই তার আত্মীয় সোনারগাঁয়ে হরি কিশোরের বাড়িতে বেড়াতে আসেন এবং এখানে সেখানে অবাধে চলাফেরা করছিলেন। এতে লোকজনের সন্দেহ হয়। তার শরীরে করোনা ভাইরাস রয়েছে গুজব ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক তৈরি হয়। সোনারগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এলাকাবাসীর ধারণা ছিল প্রবাস ফেরত ওই যুবকের শরীরে করোনাভাইরাস রয়েছে। এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। শুনেছি পুলিশ যাওয়ার আগেই সে ওই গ্রাম থেকে চলে গেছে। আমরা কাউকে পাইনি। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি পুরো বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। ঘটনাস্থলে লোকও পাঠিয়েছি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রায় এলাকার বহু লোক ইতালিসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রবাসী দেশে এসেছেন। প্রথমদিকে কোন সমস্যা না হলেও গত দুদিন ধরে প্রবাসীদের ফিরে আসা নিয়ে, গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এছাড়াও দেশের কোয়ারেন্টাইগুলোতে দিন দিন যেভাবে করোনাভাইরাস রোগী বাড়ছে তাতে শহর, গ্রাম সর্বত্র মানুষের মধ্যেই চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ সবাইকে সচেতন থাকা ও আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।