Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘আমি মুসলিম হয়ে জন্ম নিয়েছিলাম এটাই কি আমার অপরাধ?’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ২:০৮ পিএম

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে গত কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে ভয়ানক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। অনেকে মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের আমলে হিন্দু চরমপন্থার যে উদ্ভব ঘটেছে, তারই স্বাভাবিক পরিণতি এই দাঙ্গা। তার দল হিন্দু জাতীয়তাবাদের সহিংস সংস্করণকে বুকে টেনে নিয়েছে। দলটির নেতারা সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর প্রকাশ্যেই সহিংসতার ডাক দিয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, মোদি এমন সব বিধি প্রনয়ণ করেছেন যেগুলোকে মুসলিম-বিরোধী হিসেবে দেখা হচ্ছে। যেমন, ভারতের একমাত্র মুসলিম রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য মর্যাদা বাতিল করেছেন তিনি। খবর দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস।

দিল্লির এই দাঙ্গায় পুলিশ বেশ স্বপ্রোনোদিতভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে নয়া দিল্লিতে যেই লুণ্ঠন ও ভাঙচুর চালায় হিন্দু দাঙ্গাবাজরা, তাদেরকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা দিয়েছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশ হলেও দিল্লির পুলিশ সরাসরি মোদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই পুলিশ বাহিনীতে মুসলিম সদস্যও খুব কম।

বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে, পুলিশ কর্মকর্তারা মুসলিম বিক্ষোভকারীদের মারছে অথবা পাথর ছুড়ছে। এমনকি হিন্দুদেরকে সহায়তার জন্যও ডাকছে।

এক পুলিশ অধিনায়ক বলেছেন যে, যখন সহিংসতা শুরু হলো, বিশেষ করে যেই পর্যায়ে হিন্দু দাঙ্গাবাজরা সহিংসতা শুরু করলো, তখন আক্রান্ত এলাকার পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয় নিজ নিজ স্টেশনে বন্দুক বা অস্ত্র রেখে আসার জন্য। সহিংসতার সময় নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকরা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে একে অপরকে বলতে শোনেন যে, তাদের হাতে কেবল লাঠি আছে। এই দাঙ্গাবাজদের ঠেকাতে অস্ত্র দরকার ছিল। গবেষকরা বলছেন, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবেই সেদিন রাস্তায় অল্প সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করেছিল। তাদের হাতে কোনো অস্ত্রও ছিল না। ফলে সহিংসতা খুব দ্রুতই দাঙ্গায় পরিণত হয়। হিন্দুদের হাতে নিহত হয় অনেক মুসলিম।

দাঙ্গায় মারা যাওয়া পঞ্চাশেরও বেশি মানুষের পরিচয় সনাক্ত করা গেছে। এদের দুই তৃতীয়াংশই মুসলিম। মানবাধিকার কর্মীরা একে বলছেন সংঘবদ্ধ হত্যাযজ্ঞ। ভারতের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলিম, দিল্লিতে ১৩ শতাংশ। কিন্তু দিল্লি পুলিশ বাহিনীতে মুসলিমদের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে এক বিতর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অঙ্গীকার করেছেন যে, ওই দাঙ্গায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদের বর্ণ, ধর্ম ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আমলে নেওয়া হবে না। কিন্তু তিনি ঠিকই পুলিশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বলেছেন এই সহিংসতা হলো ষড়যন্ত্র। আরও বলেছেন, দাঙ্গায় উস্কানিদাতাদের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। অনেক বিশেষজ্ঞই উষ্মা প্রকাশ করেছেন যে, যেসব ঘটনা ঘটেছে এর সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পর্ক কোথায়!

ভারতীয় পুলিশের সদস্য সংখ্যা ৮০ হাজার। ২ হাজারেরও কম হলো মুসলমান। কমান্ডারদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা। সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ সিদ্দিক বলেন, ভারতীয় পুলিশ অত্যন্ত উপনিবেশিক ধাঁচের ও বর্ণবাদী। তিনি বলেন, দুর্বলের প্রতি পুলিশের আচরণ সবচেয়ে বেশি সহিংস ও আক্রমণাত্মক।

ভারতের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিন্দু। দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকায় হিন্দু গ্যাঙ প্রকাশ্যেই হুমকি দিয়েছে যে, এই সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় হোলির আগেই মুসলমানরা যেন এলাকা ছেড়ে যায়। বেবি নামে এক মুসলিম নারী বলছিলেন, কয়েকদিন আগে দরজা খুলে দেখেন যে ৫০ জনের মতো পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। তাদের হাতে নোটবুক। তারা মুসলিমদের ঘরের ঠিকানা ধরে তালিকা করেছে। তিনি দ্রুতই সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছেন। শিগগিরই হয়তো এলাকা ছেড়ে যাবেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ও আল্লাহ, আমাকে কেন হিন্দু বানাওনি তুমি? এটা কি আমার দোষ যে আমি মুসলিম হয়ে জন্ম নিয়েছিলাম?’

কাউসার আলি মানুষের ঘর রঙ করে দেন। কাজ শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে তিনি মারামারির কবলে পড়েন। হিন্দু আর মুসলিমরা একে অপরের দিকে রাস্তায় পাথর ছুড়ছে। তার বাচ্চারা রাস্তার অপরপ্রান্তে। মারামারির কারণে তিনি সেখানে যেতে পারছেন না। অগত্যা কাউসার আলি পুলিশের সাহায্য চান। এটি ছিল তার মস্তবড় ভুল। পুলিশের কাছে সাহায্যের আর্জি নিয়ে যেতেই তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয় তারা।

তার মাথায় বাড়ি মারতে থাকে। তাকে ও আশেপাশের কয়েকজন মুসলিমকে মারতে থাকে তারা। প্রত্যেকের গা দিয়ে ঝরতে থাকে রক্ত। করজোড় করে ক্ষমা চাইতে থাকে তারা। এদের একজন শরীরের ভেতর জখম হয়ে দুই দিন পর মারা যায়। কিন্তু পুলিশ তাদের করুণ দশা দেখে হাসতে থাকে। লাঠি দিয়ে দুর্বল স্থানে খোঁচাতে থাকে। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধ্য করে। ২৪ ফেব্রুয়ারির এই পুরো ঘটনা ধরা পড়ে ভিডিওতে।

কাউসার আলি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের সঙ্গে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিল। বলছিল যে, আমরা যদি তোদের মেরেও ফেলি, কিছু হবে না।’ পুলিশের কথাই এখন পর্যন্ত সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস



 

Show all comments
  • নূরুল্লাহ ১৩ মার্চ, ২০২০, ৩:২৩ পিএম says : 0
    কথা সত্য, মুসলমান হয়ে জনাম নেওয়াই বর্তমান দুনিয়ায় সবচে বড় অপরাধ। এরা মরলে কেউ পাশে আসে না। মুসলিমবিশ্বের নেতানেতৃরাও কথা বলে না। দিল্লির পু. ঠিকই বলেছে, তোদের মেরে ফেললেও আমাদের কিচ্ছু হবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Manir Hossain ১৩ মার্চ, ২০২০, ৩:৩৮ পিএম says : 0
    Bangladesh Independence-2020 Price give my Honorable chief guest for Mozib 100 Years Borsho(Birth Day) Please send Independence price Mr Modi Zee. Only for my personal Opinion.
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৩ মার্চ, ২০২০, ৫:০৮ পিএম says : 0
    O'Allah help the oppressed muslims around the world.. we have so called 57 muslim country but their ruler don't care about the welfare of muslim... O'Allah send us a muslim leader who will unite all muslim country and rescue all the oppressed muslim around the country... All these country leaders are munafiq..... Punish them in this world and throw them in the Hell Fire.. Ameen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ