মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নিউইয়র্ক টাইমস-এর বৈরুত ব্যুরো প্রধান বেন হুবার্ড তার ‘মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতায় আরোহণ’ বইটিতে যুবরাজের সর্বময় ক্ষমতা অধিগ্রহণের প্রসঙ্গটিকে এমন একটি গল্পে এঁকেছেন যা এই অঞ্চলের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। তার বইয়ের ওপর নিউইয়র্ক টাইমসের আলোচনাটি তুলে ধরা হলোঃ
বেন হুবার্ড লিখেছেন, ‘এমবিএস-এর উত্থান চিরাচরিত প্রবণতাগুলির স্রোতে গা ভাসিয়ে হয়েছে।’ তিনি লিখেছেন, ‘যেহেতু বিশ্বের বেশিরভাগ সম্পদই গুটিকয়েকের হাতে কেন্দ্রীভ‚ত, জনপ্রিয় স্বৈরাচারীরা বিরোধিতাকারীদের দমনের জন্য জনসমাবেশে জাতীয়তাবাদী বক্তৃতা কাজে লাগায়।’ এমন এক বিশ্বে যুবরাজ উপযুক্তভাবেই মানিয়ে যায়। ‘এমবিএস ক্ষমতার ওপর হুমকি খতিয়ে দেখার কোনও প্রয়োজন দেখেন না এবং সমস্ত হুমকিকে ধুলিসাৎ করে দেন। তিনি তার শাসনামলে সউদী আরবকে আবারও মহান বানাতে কিছুতেই থামবেন না।’
তখন ছিল ২০১৭ সালের হেমন্তকাল। যে নবীন যুবরাজ বর্তমানে আরব বিশ্বের ধনীতম দেশ চালাচ্ছেন, তার ভাষণ শোনার জন্য শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে থাকার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি বিলাসবহুল হলঘরে বিশাল স্ফটিক ঝাড়বাতির নিচে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী, কোটিপতি এবং বিলিয়নেয়াররা ভিড় করে তার উপস্থিতির অপেক্ষা করছিলেন এবং বিশ্বের পূঁজিবাদের সমস্ত বেনিয়ারা সুইস পর্বতমালার কোলে বাৎসরিক মিলনমেলার পাশাপাশি ‘মরুভ‚মিতে দাভোস’ নামে বেসরকারিভাবে অভিহিত এক বিলাসবহুল বিনিয়োগ সম্মেলনকে তাদের মতোই স্বতন্ত্র রূপ দিতে সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে এসেছিলেন। এই সম্মেলনের অবশ্য একটি আলাদা লক্ষ্য ছিল: সমবেত অর্থোক্তাদের বোঝানো যে, এখন সময় এসেছে সউদী আরবের উপর বড় বাজি ধরার।
অতীতের দিনগুলিতে এই দেশটি হাজার হাজার অতিথিকে বোঝাতে কঠোর পরিশ্রম করেছে যে, সউদী আরব সম্পর্কে তাদের যে ধারণা তা সত্য নয়, বা অন্তত তাদের কাছে সত্যটা পৌঁছায়নি। তাদেরকে বলা হতো যে, দেশটি পরিবর্তিত হচ্ছে, একটি চরম-রক্ষণশীল সঙ্কীর্ণমনা ইসলামী রাষ্ট্রের অতীত ছাপিয়ে এটি উন্মুক্ত হচ্ছে।
সউদী আরব দীর্ঘকাল ধরে দুটি জিনিসের জন্য সুপরিচিত ছিল: তেল এবং ইসলাম। প্রথমটি রাষ্ট্রের মরুভূমির নিচ থেকে এত বিপুল পরিমাণে উত্তোলন করা হয়েছে যে, এটি আল-সউদ রাজপরিবারকে বিশ্বের সব থেকে ধনী রাজবংশে পরিণত করেছে এবং দেশটিকে ভ‚-কৌশলগত গুরুত্ব এনে দিয়েছে যা এর অভাবে হয়ত সম্ভব হতো না। সুবিশাল তেলসম্পদ সউদী অর্থনীতির রূপকার হিসেবে কাজ করেছে। এটি উচ্চবিত্ত শ্রেণির যুবরাজ এবং ব্যবসায়ীদের প্রচুর সম্পদ এনে দিয়েছে। পাশাপাশি, বেশিরভাগ নাগরিক হয় বাড়িতেই থাকেন বা সরকারি চাকরি থেকে মোটা বেতন পান যাদের প্রায়ই খুব কম কাজ করার প্রয়োজন হয়।
সউদী আরবের আনুষ্ঠানিক ইসলাম ধর্ম কোনও ইসলাম নয়, বরং ওয়াহাবিজম, ইসলামের অতি সঙ্কীর্ণ ধ্যান-ধারণা এবং অসহিষ্ণু ধরনের ব্যাখ্যা যা দেশটির ইতিহাসে গেঁথে আছে। এটি ঈমানদারদের অমুসলিম ‘কাফের’ থেকে সতর্ক থাকতে শিখিয়েছে, খুনি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের জনসমক্ষে শিরñেদ করেছে এবং নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এই রাষ্ট্রটি অন্যান্য ইসলামী সমাজের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর ছিল। কিন্তু মক্কা এবং মদিনায় ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলির রক্ষক হিসাবে সউদী আরব বিশ্বের ১৮ কোটি মুসলমানের মধ্যে একটি অনন্য মর্যাদা নিয়ে রয়েছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।