মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ সউদী আরব। তেলের উৎপাদন কমানোর বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠকে ব্যর্থ হয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। গতকাল এ তথ্য জানায় ডন।
গতকাল অপরিশোধিত তেলের উপর সউদী আরবের এক তৃতীয়াংশ মূল্য ছাড়ের সিদ্ধান্তের পর বিশ্বজুড়ে তেলের বাজারে ধস নামে। এরফলে এশিয়ার বাজারে তেলের দর ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। সউদীর শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক সউদী আরামকো এবং রসনেফ্টর শেয়ারে যথাক্রমে ২০.৪ ও ১৮.৫ শতাংশ দরপতন ঘটে। পূঁজিবাজারে আমেরিকান ডলারের বিপরীতে সউদী রিয়ালেরও উল্লেখযোগ্য দরপতন ঘটে।
বিশ্বের শীর্ষ দুই তেল রফতানিকারীরক দেশ সউদী আরব ও রাশিয়ার প্রত্যেকের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার যুদ্ধব্যয় রয়েছে যা দেশ দু’টিকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যেই তারা তেল নিয়ে দর পতনের যুদ্ধে নেমে পড়েছে।
মস্কো গতকাল জানিয়েছে যে, আগামী ৬ থেকে ১০ বছর তারা প্রতি ব্যারেল ২৫ থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত তেলের দর ধরে রাখতে সক্ষম। এরই মধ্যে রিয়াদ ঘোষণা দেয় যে, তারা প্রতি ব্যারেল ৩০ ডলার পর্যন্ত দর বহন করতে পারবে। তবে রিয়াদকে রাজস্ব ঘাটতি থেকে বাঁচতে হলে আরো বেশি অপরিশোধিত তেল রপ্তানী করতে হবে বলে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সাংঘর্ষিক যুদ্ধ উভয় দেশের জন্যই ক্ষতিকারক হবে এবং যতই তারা এটিকে দীর্ঘতর করবে, ততই তারা কঠিনভাবে অর্থনৈতিক সমন্বয় সাধনে বাধ্য হবে।
টেলিমারের ইক্যুইটি স্ট্রাটেজি প্রধান হাসনাইন মালিক মন্তব্য করেন, ‘যে কোনও যুদ্ধে কোন পক্ষ কতোটা ক্ষয়ক্ষতি বহনে সক্ষম সেই বিষয়টি চলে আসে।’
এই বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারী সংস্থা ওপেকের উৎপাদন কমানোর প্রস্তাবনা প্রত্যখ্যান করার পরে সউদী আরবে ইচ্ছামত তেল উত্তোলনের জন্য সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারে থাকলে সউদী তার বাজেটে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে যা রাশিয়ার তুলনায় দ্বিগুণ।
সউদী আরবের ৫০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক রিজার্ভ এবং জিডিপির ২৫ শতাংশ অনুপাতে স্বল্প পরিমাণে ঋণ রয়েছে যাতে করে ঋণ গ্রহণের যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে। তবে, সউদী আরব তেলের দর পতনের প্রভাবকে দমন করতে ২০১৬ সাল থেকে গ্রহণকৃত ঋণের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকায় পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
রিয়াদের সমস্যা হ›ল, তেলের হ্রাসকৃত স্থিতিশীল দাম সউদী প্রিন্সের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় সরকারের বরাদ্দকৃত ব্যয়ে বাধ সাধতে পারে।
আবুধাবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মনিকা মালিক বলেছেন, তেলের দাম ৩০ ডলারের কম হলে সউদী আরব জিডিপির ৬.৪ শতাংশ হারে নিজস্ব হিসাবের বাজেট ঘাটতির দ্বিগুণ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হবে এ বছর।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের অধীনে রাশিয়া ৫০ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে যা রাশিয়ার মোট জিডিপির ৯.২ শতাংশ এবং রাশিয়ান রুবল বাজারের পরিস্থিতি এবং অবমূল্যায়নের সাথে দ্রæত সমন্বয় করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে।
অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ এই মজুদ সম্পর্কে গত সপ্তাহে বলেছিলেন ‘অনেক লোক আমাদের সমালোচনা করেছে, তারা বলেছে যে, এটি এক ধরনের সম্পদের আধার, অর্থ মন্ত্রণালয় সোনার উপরে বসে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তবে এখন পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে এবং আমরা যে সমস্ত ব্যয় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি তা এই সম্পদের আধার থেকেই ব্যয় করতে বাধ্য হব’।
রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, প্রয়োজনে এই তহবিল তেলের মূল্য কমানোর ফলে উদ্ভূত রাজস্ব ঘাটতি কমাতে ব্যবহার করা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া সংযুক্তির বিষয়ে রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা বা ২০০৮ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কটের তুলনায় বর্তমান রাশিয়া অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে। তারপরেও আন্তঃব্যাংক বাজারে ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো গতকাল ডলারের বিপরীতে রুবলের মূল্যে ধস নেমেছে এবং আরামকো, রসনেফ্ট ও লুকওয়েলের শেয়ারের সাথে রাশিয়ান কোম্পানিগুলোর শেয়ারেও ব্যাপক দর পতন ঘটেছে।
মস্কো এক্সচেঞ্জের সুপারভাইজরি বোর্ডের প্রধান ওলেগ ভ্যুগিন বলেছেন, মূল্য যুদ্ধের ফলে রাশিয়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদের হারের মুখোমুখি হবে। ম্যাক্রো-অ্যাডভাইজরির পরিচালক ক্রিস ওয়েফার বলেন, দর খুব কম থাকলে শরতকালের মধ্যে মস্কো ওপেকের সাথে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘পুতিন ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি রুখতে দীর্ঘ সময় ধরে তহবিল অপচয় করতে নারাজ হবেন।’ সূত্র : রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।