প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুরহস্য নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। অপরদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরার বক্তব্য এটা আনন্দের বা বেদনার বিষয় নয় সত্যের জয়। তিনি বলেন, নীলা চৌধুরীর মর্মবেদনা বুঝতে পারি। তিনি যেমন সন্তান হারিয়েছেন, ভক্তরা হারিয়েছেন তাদের প্রিয় নায়ককে তেমনি আমি ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েছি। যার ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা বিয়ে করেছিলাম। সুখীও হয়েছিলাম। কিন্তু যাপিতজীবনের কিছু ঘটনা আমাদের সুখকে স্থায়ী হতে দেয়নি। মাত্র ২২ বছর বয়সে স্বামীহারা হলাম। ২৪ বছর ধরে সালমানের পরিবার আর ভক্তদের কাছে একটা মিথ্যা অপরাধের দায় বয়ে বেড়াচ্ছি। গত ২৪ বছরে আমি তিন সন্তানের মা হয়েছি। সংসার নিয়ে সুখে আছি। এরপরও ‘হত্যা’র মতো জঘন্য একটা অপবাদ আমাকে প্রতিনিয়ত আতংকিত করে বেড়াচ্ছে। পিবিআই’র প্রতিবেদনে আশা করছি, ভক্তদের কিছুটা হলেও শান্ত করবে। সামিরা বলেন, প্রতিনিয়ত আমি আমার বাচ্চারা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমার বিশ^াস ছিল, একদিন সত্য উন্মোচিত হবেই। প্রশাসন যদিও শুরু থেকেই এই কেসটাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করে আসছিল কিন্তু সালমানের মায়ের আর্জির কারণে তা দীর্ঘায়িত হয়। শেষ পর্যন্ত সত্য উন্মোচিত হয়েছে। তারপরও স্বামী হত্যার দায় মাথা থেকে গেলেও স্বস্তি প্রকাশ করতে পারছি না, কারণ প্রতিবেদনের প্রকাশের পর সালমানের মা ও ভক্তদের নানা সমালোচনার জবাব দিতে হচ্ছে। নীলা চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সামিরা বলেন, আমার যখন বয়স ২২, ওনার সম্ভবত ৩৮ কি ৩৯ হবে। কে সুন্দর এ নিয়ে তিনি আমার সাথে প্রতিযোগিতা করতেন। তার এসব ছেলেমানুষী হাসি মুখে মেনে নিয়েছি। সালমানের সঙ্গে ওনার কখনই ভালো সম্পর্ক ছিল না। এসব নিয়ে ওই সময় পত্রপত্রিকায় একাধিক খবরও ছাপা হয়েছে। এমন কিছু বিষয় নিয়ে মা-ছেলের সম্পর্ক খারাপ হয়ে পড়েছিল যে সেসব কথা বলতে চাই না। কারণ আমিও এখন মা। এসব বিষয়গুলো পিবিআই’র কাছেও আছে। এমনকি সালমানের বন্ধুরাও তাদের জবানিতে এসব বলেছেন। সালমানের ভক্তদের উদ্দেশ্যে সামিরা বলেন, এটা খুবই বেদনার বিষয় যখন আমার ছেলের বয়সী সালমান ভক্তদের মুখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুনি। নীরবে কাঁদা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এরপরও ওদের আমি দোষ দেই না। কারণ ওরা ওদের বড় ভাই, বোন মা-বাবার কাছে সালমানকে হত্যা করা হয়েছে এমন কথা শুনে নেগেটিভ মানসিকতা নিয়ে তৈরি হয়েছে। তাদের ধারণা সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করতে পারে না। সামিরা বলেন, নীলা চৌধুরী বলতেন আমার সঙ্গে নাকি সালমানের সম্পর্ক খারাপ ছিল। এ কারণে ওর ড্রেস ডিজাইন করে দিতেন তিনি। এখানে একটু বলতেই হয়, সালমান ওরফে ইমন কিন্তু সিনেমায় আসার আগে বিয়ে করে আমাকে। পালিয়ে বিয়ে হলেও আমরা দু’জনেই বেশ তৃপ্ত ছিলাম। আমাদের বিয়ের সন্ধ্যায় উত্তরায় মুনমুন কাবাবে সে সময় কাছের বন্ধুরা ছাড়াও চিত্রনায়িকা মৌসুমীও উপস্থিত ছিলেন। যাই হোক, সালমানের সব সিনেমাতেই তার ড্রেস ডিজাইনার হিসেবে থাকতাম। সালমান আমার নামটা জুড়ে দিয়েছিলেন ‘সামিরা শাহ’ নামে। এখনও ছবির টাইটেল প্লেটে এ নামটি দেখা যায়। সম্পর্ক খারাপ থাকলে কি তা সম্ভব ছিল? আরও একটি বিষয় বলি সেটা হলো সালমানের একাউন্ট কিন্তু ওর বাবা অর্থাৎ আমার প্রয়াত শ^শুর কমর উদ্দিন চৌধুরী এবং শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের (সালমান শাহ) নামে ছিল। আমাকে একটি গাড়ি উপহার দিয়েছিল সালমান, বনানীতে ফ্ল্যাট কিনেছিল আমার জন্য কিন্তু কিছুইতো আমার কাছে না। আমি যে এগুলো নিয়ে গেছি সেটাও তারা বলতে পারে না। তাহলে সেগুলো কারা ভোগ করছে? সালমান শাহের মৃত্যুর পর আড়ালে চলে যাওয়া নিয়ে সামিরা হক বলেন, আড়ালে যাব কেন? অড়ালে কখনও যাইনি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আমার সবকিছু বাংলাদেশে। আমার তিন সন্তানের জন্ম এই বাংলাদেশে। হ্যাঁ, গণমাধ্যম এড়িয়ে চলেছি এটা সত্য। যে কারণে মিথ্যা অপবাদ ডালপালা মেলার সুযোগ পেয়েছে। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি চাই নি সালমানকে ছোট করতে। কোনো কারণে তার অসম্মান হোক তা চাইনি। সালমান মৃত্যুর আগের দিন বিএফডিসি ডাবিং রুমের বিষয়টি কি ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে সামিরা বলেন, প্রেম পিয়াসী সিনেমার ডাবিংয়ের সময় সন্ধ্যায় আমার শ্বশুর আমাকে নিয়ে যায় তার গাড়িতে। সালমান-শাবনূরকে জড়িয়ে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হচ্ছিল। তাই সালমানের সঙ্গে কথা হয়। ও কথা দিয়েছিল শাবনূরের সঙ্গে আর ছবি করবে না। সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাপারটা বলেছিল। চুক্তিবদ্ধ সিনেমাগুলো দ্রæত শেষ করে শাবনূরের সঙ্গে নতুন আর কোনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হবে না। এরমধ্যে শাবনূরের সঙ্গে যেখানে কাজ সেখানে আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় গিয়ে দেখি ডাবিংয়ে শাবনূর। আমাকে দেখে সালমানের সঙ্গে ওভার অ্যাক্টিং শুরু করে। দৃশ্যটি যে মেকি তা বোঝার বাকি থাকে না। অথচ তাকে কেন্দ্র করেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। শাবনূর দাবি করেছেন সালমানকে সে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করতো এবং তার সঙ্গে কোনো ধরনের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল নাÑএ প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, শাবনূরের সঙ্গে সালমানের সম্পর্কটা কোন পর্যায়ে ছিল তার বিস্তারি বিবরণ ২৪ বছর আগে দৈনিক মুক্তকন্ঠে প্রকাশিত হয়েছিল। নতুন করে বলার কিছু নাই। এসব পিবিআই’র কাছে আছে। একটা ঘটনা ঘটেছিল, তা নিয়ে শাবনূর সালমানকে বø্যাকমেইলিং করতে শুরু করে। শাবনূর সিঙ্গাপুরে যায় এবং রটিয়ে বেড়ায় সে প্রেগনেন্ট। পরে সালমান উদঘাটন করে শাবনূর গিয়েছিল স্ক্রিন পরীক্ষা করাতে। এক পর্যায় সালমান বুঝতে পারে ও বø্যাক মেইলের শিকার হচ্ছে। পুরো ঘটনা সে আমার কাছে স্বীকার করেছে। ও সব সময় আমার কাছে বিশ^স্ত থাকার চেষ্টা করেছে, কিন্তু শাবনূর সেটা হতে দেয়নি, আমাদের দাম্পত্য সুখ সে কেড়ে নেয় নানাভাবেই। অনেক বছর পর এসব বলতে চাই না, ও ওর মতো থাকুক কিন্তু প্রেমিককে ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ বলে যখন গলা ফাটাতে শুনি তখন সত্য প্রকাশ না করে উপায় কী? তবে শাবনূর খুব ট্যালেন্টেড একজন অভিনেত্রী। তিনি সালমনের সঙ্গে অভিনয় করে নিজেকে শানিত করেছেন। ডনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবির কথা বলতে গিয়ে সামিরা বলেন, ডনের সঙ্গে যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার বলে চালানো হচ্ছে, সেই ছবির মানুষটা আমি না। ছবির মানুষটা সাবরিনা। ‘আশা ভালোবাসা’ সিনেমার শুটিং হচ্ছিল বান্দরবানে। ছবিটিতে দ্বিতীয় নায়িকা ছিল সাবরিনা। তখন সাবরিনার সঙ্গে ডনের একটা প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আরেকটি বিষয় বলি সেটা হচ্ছে আমার প্রয়াত শ^শুর ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, তিনি পুরো ঘটনার তাৎপর্য খুব ভালো ভাবেই বুঝেছিলেন বলেই আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। তিনি আমাকে সবসময় মেয়ের মর্যাদা দিয়েছেন। সালমানকে হত্যা করা হয়েছে এ অভিযোগটি শুধু সালমানের মা আর কুমকুম মামা করেন। তাদের বাকি আত্মীয়-স্বজন কিন্তু আমাকে দায়ী করছেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।