নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
রানের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ব্যাটে। ফরম্যাট বদলালেও একই ছন্দে রয়ে গেছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দুটি করে সেঞ্চুরি করা তামিম ও লিটন গতকাল টি-টোয়েন্টিতেও ব্যাট হাতে শাসন করলেন। এই দুজনের সঙ্গে সৌম্য সরকারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এবার টি-টোয়েন্টিতে রান বন্যা বইয়ে দিল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ৩ উইকেটে ২০০ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ওয়ানডে সিরিজের মতো এখানেও বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন তামিম ও লিটন। সঙ্গে ছিল সৌম্য সরকারের তান্ডব। সব মিলিয়ে আবারও জিম্বাবুয়ের বোলারদের পরীক্ষা নিলো বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের পরীক্ষায় পরে সফরকারিরা। তাতে উতরাতে পারেনি তারা। অলআউট হয় ১৫২ রানে। প্রথম ম্যাচ নিষ্পত্তি হয় মাহমুদউল্লাহ বাহিনীর ৪৮ রানের বিশাল জয়ে। রান বন্যায় তামিম-লিটন-সৌম্যরা যে ডুবিয়েছেন, তা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি শন উইলিয়ামসনের দল।
উদ্বোধনী জুটিতে ৯২ রান যোগ করেন তামিম ও লিটন। টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি। যে কোনো উইকেটে এটা বাংলাদেশের অষ্টম সেরা জুটি। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২৯২ রানের বিশাল জুটি গড়ে সব রেকর্ড চুরমার করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের এই দুই ওপেনার।
এরআগে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে দাপুটে শুরু করেন তামিম ও লিটন। দুজনই ঝড়ের গতিতে ব্যাট চলাতে শুরু করেন। জিম্বাবুয়ের কোনো বোলাররই তাদের সামনে সুবিধা করতে পারছিলেন না। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারেই স্কোরকার্ডে ৫৯ রান যোগ করেন তামিম-লিটন। তামিম একটু দেখেশুনে খেললেও লিটন খেলতে থাকেন টর্নেডো স্টাইলে।
জিম্বাবুয়ের বোলারদের বল মোয়া বানিয়ে একের পর এক চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকেন তামিম-লিটন। ৮ ওভারে দলকে ৭৯ রানে পৌঁছে দেন এ দুজন। বাংলাদেশ তখন দলীয় সেঞ্চুরির কাছাকাছি। এমন সময় ছক্কা মারতে গিয়ে শন উইলিয়ামসের হাতে ধরা পড়েন তামিম। ফেরার আগে ৩১ বলে ৪১ রান করেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই ওপেনার।
এরপর লিটনও আর বেশিক্ষণ ব্যাট চালাতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি প‚র্ণ করা ডানহাতি এই ড্যাশিং ওপেনার ৩৯ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৯ রান করে আউট হন। এরপর রানচাকা ঘোরানোর দায়িত্ব নেন সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিম।
মুশফিক ১৭ রান করে থামলেও নব বিবাহিত সৌম্য মারকাটারি ব্যাটিং করেছেন। অন্য প্রান্তে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থাকলেও ম‚লত সৌম্যই স্কোরকার্ডকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাঁহাতি এই মারকুটে ব্যাটসম্যান ৩০ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি প‚র্ণ করেন। এই ফরম্যাটে ২১ ইনিংস পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি।
মাত্র ৩২ বলে ৪টি চার ও ৫টি ছক্কায় চোখ ধাঁধানো ৬২ রান করেন অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়া সৌম্য। মাহমুদউল্লাহ ৯ বলে একটি চারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা, ক্রিস এমপফু ও ওয়েসলি মাধেভেরে একটি করে উইকেট নেন।
লক্ষ্য তাড়ায় যদিও জিম্বাবুয়ের শুরুটা ছিল দারুণ। মুস্তাফিজুর রহমানের করা প্রথম ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি মারেন টিনাশে কামুনহুকামুই। কিন্তু পরের ওভারে আরেক ওপেনার ব্রেন্ডন টেইলরকে (১) হারায় তারা। সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করে তাকে বিদায় করেন শফিউল ইসলাম। এরপর ক্রেইগ আরভিন (৮) ও ওয়েসলি মাধেভেরেও (১) সুবিধা করে উঠতে পারেননি। মাধেভেরে শিকার হন মুস্তাফিজের। আর রানআউট হন মাধেভেরে।
এরপর অধিনায়ক শন উইলিয়ামসের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন কামুনহুকামুই। ৩২ রানের জুটি গড়েছিলেন। এ জুটি ভাঙেন আমিনুল ইসলাম। এমনকি আরেক সেট ব্যাটসম্যান অধিনায়ক উইলিয়ামসকেও ফেরান তিনি। ফলে বড় চাপে পড়ে যায় দলটি। এরপর আর চাপ সমালে উঠতে পারেনি সফরকারিরা। শেষে ডনাল্ড টিরিপানো, কার্ল মুম্বা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও তাতে ব্যবধানই কমাতে পেরেছে কিছুটা। সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন বিপ্লব-মুস্তাফিজ। একটি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন শফিউল, সাইফউদ্দিন ও আফিফ।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, ১ম টি-২০
টস : জিম্বাবুয়ে (বোলিং), মিরপুর
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম ক উইলিয়ামস ব মাধেভেরে ৪১ ৩৩ ৩ ২
লিটন এলবি ব রাজা ৫৯ ৩৯ ৫ ৩
সৌম্য অপরাজিত ৬২ ৩২ ৪ ৫
মুশফিক ক উইলিয়ামস ব এমপফু ১৭ ৮ ০ ২
মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ১৪ ৯ ১ ০
অতিরিক্ত (লেবা ২, নো ১, ও ৪) ৭
মোট (৩ উইকেট, ২০ ওভারে) ২০০
উইকেট পতন : ১-৯২ (তামিম), ২-১০৬ (লিটন), ৩-১৪৬ (মুশফিক)।
বোলিং : রাজা ৪-০-৩১-১, মুম্বা ২-০-২৪-০, তিরিপানো ৪-০-৩৯-০, এমপফু ৪-০-৫৮-১, মাধেভেরে ২-০-১৫-১, উইলিয়ামস ৪-০-৩১-০।
জিম্বাবুয়ে ইনিংস রান বল ৪ ৬
কামুনহুকাম্বে ক লিট ব বিপ্লব ২৮ ২০ ৪ ১
টেলর ক সৌম্য ব শফিউল ১ ৫ ০ ০
অরভিন এলবি ব মুস্তাফিজ ৮ ৯ ১ ০
মাধেভেরে রানআউট ৪ ৫ ০ ০
উইলিয়ামস ক সৌম্য ব বিপ্লব ২০ ১২ ১ ২
রাজা ক মুশফিক ব আফিফ ১০ ১৪ ২ ০
মুতুম্বামি ক লিটন ব মুস্তাফিজ ২০ ১৩ ০ ৩
মুতোম্বজি ক মুস্তাফিজ ব বিপ্লব ২ ৪ ০ ০
তিরিপানো বোল্ড সাইফউদ্দিন ২০ ১৩ ০ ৩
মুম্বা ক লিটন ব মুস্তাফিজ ২৫ ১৬ ৩ ১
এমপফু অপরাজিত ২ ৩ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ১, ও ১১) ১২
মোট (অলআউট, ১৯ ওভারে) ১৫২
উইকেপট পতন : ১-১১ (টেলর), ২-৩০ (অরভিন), ৩-৩৭ (মাধেভেরে), ৪-৬৯ (কামুনহুকাম্বে), ৫-৬৯ (উইলিয়ামস), ৬-৮৩ (রাজা), ৭-১০০ (মুতোম্বজি), ৮-১০৭ (মুতুম্বামি), ৯-১৩০ (তিরিপানো), ১০-১৫২ (মুম্বা)।
বোলিং : মুস্তাফিজ ৪-০-৩২-৩, শফিউল ৩-০-১৯-১, সাইফউদ্দিন ৩-০-১৯-১, মেহেদী ৪-০-২৯-০, বিপ্লব ৩-০-৩৪-৩, আফিফ ২-০-১৮-১।
ফল : বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সৌম্য সরকার।
সিরিজ : ২ ম্যাচে ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।