Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনেক সাধের টি-২০ সিরিজ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

একেই বুঝি বলে ঘুরে দাঁড়ানো। সবদিক থেকেই- ভাগ্যে, ফর্মে আর ফলে। টেস্ট সিরিজে অ্যান্টিগায় লজ্জা দিয়ে যে সফরের শুরু, ক্যারিবিয়ায় ওয়ানডে সিরিজ হাসির পর ফ্লোরিডায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে টি-২০ সিরিজের ট্রফি নিয়ে ‘ভিক্ট্রি ল্যাপ অব অনার’, বাবা যায়! মার্কিন মুলুকে সেটিই করে দেখিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। সেন্ট কিটসে প্রথম টি-টোয়েন্টি হারার পর ফ্লোরিডায় এসে প্রবাসী দর্শকদের সামনে বাকি দুই ম্যাচই জিতল বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের লডারহিলে লিটন দাসের ঝড়ো ফিফটি দিয়েছিল বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের ভিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিস্কোরক সব ব্যাটসম্যানদের থামাতে দরকার ছিল মাপা বোলিং। ফ্লোরিডায় সব মিলেছে একসঙ্গে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে ওয়ানডের পর তাই টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে নিয়ছে বাংলাদেশ। গতকাল সকালে বাংলাদেশের দেওয়া ১৮৫ রনের লক্ষ্য তাড়ায় ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেটে ক্যারিবিয়ানরা ১৩৫ তুলতেই নামে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে আ আর খেলা শেষ করা সম্ভব হয়নি। ডার্ক লুইস মেথডের ফয়সালায় ১৯ রানে জেতে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল সাকিবের দল। কিছুদিন আগে আফগানিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল যে দল, সেই বাংলাদেশই এবার হারিয়ে দিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। বাংলাদেশের এটি মাত্র দ্বিতীয় দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। আগের সিরিজ জয়টি ছিল ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর হতাশা ভর করেছিল দেশের ক্রিকেটে। টুকটাক যাও আশা ছিল ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে, টি-টোয়েন্টিতে অনেক এগিয়ে থাকা ক্যারিবিয়নদের সঙ্গে জেতার আশা ছিল একটু বাড়াবাড়ি। কিন্তু রঙিন পোশাক গায়ে চাপিয়েই বাংলাদেশ দিয়েছে ভিন্ন বার্তা। ওয়ানডে সিরিজ দাপটের সঙ্গে ২-১ ব্যবধানে জেতার পর একই ফল দেখিয়ে দিল টি-টোয়েন্টিতেও।
আগেরদিন টস হেরে ব্যাটিং পেয়েছিল বাংলাদেশ। এদিন টস জিতেও ব্যাট করার সিদ্ধান্তই নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বিস্ফোরক শুরুতে অধিনায়কের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কাজে লাগান দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ৩.৪ ওভারের মধ্যে ৫০ ছাড়িয়ে যায় দলের সংগ্রহ।টি-টোয়েন্টিতের এটাই বাংলাদেশের দ্রæততম দলীয় ফিফটি। বেশি আগ্রাসী ছিল লিটনের ব্যাট। অ্যাশলে নার্সের করা প্রথম ওভারেই দুই ছক্কা আর এক চারে নেন ১৭ রান। পরে তার সঙ্গে তাল মেলান তামিম। পঞ্চম ওভারে ৬১ রানে গিয়ে ভাঙে এই জুটি। কার্লোস ব্র্যাথওয়টের বলে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন আগের ম্যাচের হিরো। ১৩ বলে ২১ রানের ইনিংসে ৩ চার আর এক ছক্কা মেরেছেন তামিম।
তামিম ফিরলেও চালিয়ে গেছেন লিটন। কিন্তু অন্যপ্রান্তে ফের হতাশ করেন সৌম্য সরকার। বাউন্ডারি দিয়ে শুরু পর এই বাঁহাতি টিকেছেন মোট চার বল, করেছেন মাত্র ৫ রান। আরও এক সিরিজে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ সৌম্যর জাতীয় দলে টিকে থাকা এখন ভীষণ কঠিন হয়ে গেল। রান পাননি মুশফিকুর রহিমও। দেখেশুনে শুরুর পর ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।
এসবের মাঝে নিজের কাজটা করে গেছেন লিটন। লিটন ফিফটি স্পর্শ করেন ২৪ বলে। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই মোহাম্মদ আশরাফুলের ২০ বলে ফিফটির পর টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের দ্রæততম ফিফটি। অবিশ্বাস্যভাবে, রঙিন পোশাকে দেশের হয়ে এটি লিটনের প্রথম ফিফটি! আগের ১৪ টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ছিল ৪৩ রান; ১২ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৩৬। পরে বল হাতে সবার সম্মিলিত প্রয়াস ছিল দেখার মতো। ইনিংস আরও লম্বা করার ইঙ্গিত ছিল তার ব্যাটে। শেষ পর্যন্ত তাকে ফেরান কেসরিক উইলিয়ামস। এই পেসারের ¯েøায়ার বুঝতে না পেরে চালাতে গিয়ে ৬১ রানে লিটন ক্যাচ দেন লং অফে। ৩২ বলের ইনিংসে ছয় চারের সঙ্গে ৩ ছক্কা মেরেছেন এই ওপেনার।
আগের ম্যাচে ফিফটি পাওয়া সাকিব আল হাসানও দেখেশুনে ব্যাট করছিলেন। ২২ রানে তাকে থামান কেমো পল। শেষ দিকে সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহর ২০ বলে ৩২* আর, আরিফুল হকের ১৬ বলে ১৮* রানে ১৮৪ পর্যন্ত যায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের দেওয়া বড় লক্ষ্যের জবাবে শুরুটা একদম মনমতো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। চতুর্থ ওভারে ২৬ রানের মাথায় আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। ফিরিয়ে দেন বিপদজনক আন্দ্রে ফ্লেচারকে। নাজমুল ইসলাম অপুর চোটে ফাঁকতালে বল হাতে পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। অসমাপ্ত ওভার করতে এসেই তুলে নেন চ্যাডউইক ওয়ালটনকে। ৩০ রানে দ্বিতীয় উইকেট পড়ার পর দুই রান যোগ করতেই সাকিবের আঘাতে ফেরেন মারলন স্যামুয়লস। সাকিবের নিচু হওয়া বল হতচকিত হয়ে বোল্ড হন ওয়ালটন।
এরপর খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ওয়েস্ট ইন্ডিজের। রোবম্যান পাওয়েল আর দিনেশ রামদিন দলকে নিয়ে যান ৭৭ পর্যন্ত। রুবেলের দারুণ বল রামদিনের বেল ফেলে দিলে বিপদ বাড়ে ব্র্যথওয়েটের দলের। ওই অবস্থা থেকে বিস্ফোরক ইনিংসে বাংলাদেশকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আন্দ্রে রাসেল। ২১ বলে ৪৭ রান করা রাসেল ঝড় থামান মোস্তাফিজ। এই ইনিংসে ছয় ছয়টি ছক্কা মেরেছেন এই ব্যাটসম্যান। আরেকটি মারতে গিয়ে আরিফুলের হাতে ধরা পড়েন। তার আগে পাওয়েলকেও ফেরান মুস্তাফিজ। বৃষ্টি নামার আগে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে ফিরিয়ে সব শঙ্কা দূর করেন আবু হায়দার।
আফগানিস্তানের কাছে ৩-০ তে টি-টোয়েন্টিতে হারা বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে একদম খাপ খাওয়াতে পারছিল না। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে এই সিরিজ জেতা নিশ্চিতভাবে দলকে জোগাবে ২০ ওভারের ক্রিকেটেও পোক্ত হওয়ার রসদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ