মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের চতুর্থ শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংক ইয়েস ব্যাংকের পতন অবশ্যম্ভাবী। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ এবং অর্থ উত্তোলনে সীমা আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বড় ধরনের উদ্বেগ। এ অবস্থায় ব্যাংকটির শেয়ার ধরে রাখতে চাইছেন না তারা। ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির শেয়ারদর কমেছে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। খবর এএফপি, এফটি, বিজনেস টুডে ও আনন্দবাজার।
ইয়েস ব্যাংকের পতনের আশঙ্কা এরই মধ্যে দেশটির ব্যাংকিং খাত নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির শেয়ারবাজারেও দেখা গেছে এর মারাত্মক প্রভাব। গতকাল দিনের শুরুতেই দেশটির শেয়ারবাজারের সেনসেক্স সূচকের পতন ঘটে ১ হাজার ৪৫৯ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। অন্যদিকে নিফটি সূচকের পতন ঘটে ৪৪১ দশমিক ৬০ পয়েন্ট। তথৈবচ দশা মুদ্রাবাজারেও। ভারতীয় রুপির বিনিময় হার গতকাল নেমে এসেছে ২০১৮ সালের পর সর্বনি¤েœ।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, এর আগে বৃহস্পতিবার সারা দিনেও ইয়েস ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটা শঙ্কায় ছিলেন না বিনিয়োগকারীরা। ওইদিন সকাল থেকেই গুঞ্জন ছিল, স্টেট ব্যাংকের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ইয়েস ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্র সরকার, যার ঘোষণা হতে পারে শিগগিরই। এর পর পরই শেয়ারবাজারে ইয়েস ব্যাংকের শেয়ারদর বাড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ। ইয়েস ব্যাংকে বিনিয়োগের জন্য পরে স্টেট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সম্মতি জানানো হয়।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে দিনের শেষভাগে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণভার হাতে নেয়ার ঘোষণা দেয় আরবিআই। একই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়, পরবর্তী ৩০ দিন অর্থাৎ ৩ এপ্রিল পর্যন্ত অসুস্থতা, পড়াশোনা বা বিয়ের মতো বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংকটির গ্রাহকরা ৫০ হাজার রুপির বেশি উত্তোলন করতে পারবেন না। তবে ড্রাফট বা পে-অর্ডারের ক্ষেত্রে এ ঊর্ধ্বসীমা কার্যকর হবে না। এছাড়া ব্যাংকের ২০ হাজার কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধেও এ ঘোষণা কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোনো ঋণ দিতে পারবে না ব্যাংকটি। এছাড়া ইয়েস ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে আরবিআই। প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয় স্টেট ব্যাংকের সাবেক সিইও প্রশান্ত কুমারকে।
এ বিষয়ে আরবিআইয়ের ভাষ্য হলো, সম্পদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে আমানতকারীদের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যেই কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে আমানতকারীদের আস্থার বদলে আশঙ্কাই বাড়িয়ে দিয়েছে আরবিআইয়ের ঘোষণা। ভারতজুড়ে ইয়েস ব্যাংকের শাখাগুলোর সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ই ভিড় জমান আমানতকারীরা। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধসের মুখে পড়ে ব্যাংকটির শেয়ারমূল্য। এর আগে বৃহস্পতিবার দিন শেষেও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ইয়েস ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৬ রুপি ৮০ পয়সা। গতকাল দিনের শুরুতেই তা নেমে দাঁড়ায় ৫ টাকা ৬৫ পয়সায়।
ভারতীয় ব্যাংকিং খাতে তারল্যের সংকট নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে আরবিআইয়ের ঘোষণা। বছরখানেক আগেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান আইএলঅ্যান্ডএফএস প্রায় ধসে যেতে বসেছিল। প্রসঙ্গত, দেশটির ভোক্তা খাতে সরবরাহকৃত ঋণের বড় অংশেরই উৎস ভারতের ‘ছায়া ব্যাংক’ হিসেবে পরিচিত এসব প্রতিষ্ঠান।
পরবর্তী সময়ে তারল্য সংকটের কারণে দেশটির ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ বিতরণে এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়। ফলে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে দেখা দেয় মারাত্মক শ্লথতা। টানা সাত প্রান্তিক শ্লথতার মধ্যে পার করার পর গত বছরের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় দেশটির অর্থনীতি। যদিও এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, দুই বছর ধরে পরিচালনগত সমস্যা এবং মূলধন সংকটে ভুগছে ইয়েস ব্যাংক। আরবিআইয়ের নির্দেশে গত বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির সিইও রানা কাপুর ব্যাংকটির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। পরবর্তী সিইও রবনিত গিলের সময়ে ব্যাংকটির বড় অংকের অনাদায়ী ঋণের বোঝার বিষয়টি সামনে আসে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) লোকসানে পড়ে ব্যাংকটি। শেষ প্রান্তিকেও আর্থিক ফলাফল প্রকাশে দেরি করছিল ব্যাংকটি। একই সঙ্গে আমানত সংগ্রহ প্রক্রিয়াতেও বিপত্তির ধারা বজায় থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।