Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইনসুলিন ও ডায়াবেটিস

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ইনসুলিন ও ডায়াবেটিসের সম্পর্ক অনেকটা তাপ ও তাপমাত্রার সম্পর্কের মতো। ইনসুলিন হল একটি হরমোন, যেটি মানবদেহের অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহান্টস-এর বিটা কোষ থেকে নিঃসৃত হয়। আমরা যে খাদ্যই খাই না কেন, তার বেশির ভাগ অংশই শর্করায় পরিণত হয় এবং ইনসুলিন হরমোন এই শর্করাকে সারা শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেয়। কোষে শর্করা জারিত হয়ে শক্তিরূপে সঞ্চিত থাকে। আমাদের শরীরে ইনসুলিন ব্যতীত রক্তে শর্করা পৌঁছে দেওয়ার আর কোনও উপায় নেই। 

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস- এক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ হয় না এবং সারাজীবন ইনসুলিন নিতে হয়। টাইপ টু ডায়াবেটিস-এক্ষেত্রে ইনসুলিন নিঃসরণ কম হয় বা ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এক্ষেত্রে ওষুধ বা ইনজেকশনের সাহায্যে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ানো হয়। বর্তমানে বাজারে যে সকল ইনসুলিন পাওয়া যায়, তা কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এবং তার সঙ্গে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা প্রতিরোধ করে। আপনি কি ব্যবহার করেন? ব্যবহার করলে কী ইনসুলিনও কতটা নেন? প্রথমেই জানতে হবে কী ধরনের ইনসুলিন আপনার চিকিৎসক আপনাকে ব্যবহার করতে বলেছেন, কতটা এবং কতবার। ইনসুলিনের মাত্রা নির্ণীত হয় একক দিয়ে। পেট, থাই বা হাতের উপরের অংশে সিরিঞ্জের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাত্রায় শরীরে ইনসুলিন প্রবেশ করে। প্রতিবার ইনসুলিন নেওয়ার সময় সিরিঞ্জের সূ² মুখটি ক্রমশ ভোঁতা হতে থাকে। তাই তিন-চারবার নেওয়ার পর নিডল একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার করা উচিত নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ঘন ঘন রক্তে শর্করার পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শে মাপতে হয়। কারণ এর উপরেই নির্ভর করে ইনসুলিনের মাত্র। সুতরাং গøুকোমিটারের সাহায্যে রক্তশর্করা নির্ণয় সম্পর্কে রোগী ও তাঁর পরিবারকে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। ইনসুলিন কোথায় রাখবেন এবং ব্যবহার করার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি- ইনসুলিনের শিশি ফ্রিজ থেকে বের করে ঘরের তাপমাত্রায় না এনে ব্যবহার করা যাবে না। ইনসুলিন কখনওই অতিরিক্ত ঠান্ডা (ডিপ ফ্রিজ) কিংবা অতিরিক্ত গরমে (গাড়ির ডিকি বা যেখানে রোদ আসছে) রাখবেন না। ইনসুলিন ব্যবহারের আগে যদি দেখেন তা দলা পাকিয়ে গিয়েছে, তবে তা ব্যবহার করবেন না। সবসময় ইনসুলিনের অতিরিক্ত একটি শিশি ফ্রিজে রাখবেন। ইনসুলিন কখনও কারওর সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
ইনসুলিন নিতে হয় চামড়ার নীচে। পেশিতে নয়। পেট, থাই বা হাতের চামড়ার নীচে ইনসুলিন নিতে হয়। তবে একই জায়গায় কখনওই পরপর দুবার ইনসুলিন নেবেন না। পূর্ববর্তী ইনজেকশন থেকে পরবর্তী ইনজেকশনের স্থান অন্তত এক আঙুল ব্যবধানে হতে হবে। এর ফলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে উন্নত ধরনের নিডলগুলোতে ইনসুলিন নেওয়ার পদ্ধতিটি প্রায় ব্যথাহীন। তবে নি¤েœাক্ত জায়গায় কখনওই ইনসুলিনের প্রয়োগ করবেন না-শরীরের তিল বা কোনও কাটা অংশের দু’ইঞ্চি ব্যাসার্ধের মধ্যে। কোনও জায়গায় সংক্রমণ বা র‌্যাশ থাকলে। নাভির দু’ইঞ্চি ব্যাসার্ধের মধ্যে।
সিরিঞ্জের মাধ্যমে ইনসুলিন নেওয়ার পদ্ধতি-ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে শুকনো করে নিন। ইনসুলিন নেওয়ার জায়গাটি পরিস্কার করুন। ঠিক ইনসুলিন নিচ্ছেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হোন, নিশ্চিত হওয়ার পর শিশিটি দু’হাতের তালুতে ঘষে নিন। সিরিঞ্জের নিডল ক্যাপ খুলুন এবং আপনার ইনসুলিন মাত্রা অনুযায়ী সিরিঞ্জের প্লাঞ্জারটা টানুন। ইনসুলিনের শিশিটি কোনও শক্ত জায়গার উপর রেখে শিশির রবার ক্যাপ দিয়ে নিডল ঢুকিয়ে সিরিঞ্জের প্লাঞ্জারটি টানুন। এবার শিশি থেকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ইনসুলিন টানুন এবং লক্ষ করুন তা থেকে কোনও বুদবুদ আসছে কিনা। থাকলে প্লাঞ্জার টেনে বুদবুদ বের করুন। এবার সিরিঞ্জটি ইনসুলিনের শিশি থেকে বের করে নিন। এবার যেখানে ইনজেকশন নেবেন সেখানে হাল্কা করে চিমটি কেটে নিন। ওই চিমটি কাটা অংশে সিরিঞ্জের অংশটি নব্বই ডিগ্রি কোণে ঢোকান। চিমটি কাটা অংশটি একটু হাল্কা করে সিরিঞ্জের প্লাঞ্জারটি ঠেলে ইনসুলিন ইনজেকশন নিন। সম্পূর্ণ ইনসুলিন প্রবেশ করার পর সিরিঞ্জেটি বের করে নিন। ইনজেকশনের জায়গাটি পরিস্কার তুলো দিয়ে ঢেকে রাখুন কয়েক সেকেন্ডের মতো, ভুলেও ওখানটায় ঘষবেন না। নির্দিষ্ট ডায়েরিতে ইনসুলিনের মাত্রা, সময় ও স্থান লিখে রাখুন। ইনসুলিন পাম্পের সাহায্যেও ইনসুলিন নেওয়া যায়, তবে এটি বেশ ব্যয়বহুল। মূলত টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের রোগীদের এটি দেওয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে ইনসুলিন পেন।
সাবধানতা- ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি সাবধানতা নিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে গøুকোমিটার দিয়ে রক্তশর্করা পরিমাণ ও ইনসুলিন নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা ধারালো নিডল ব্যহার করি, যেগুলো ব্যবহারের পর মেডিক্যাল ওয়াস্টরূপে পরিচিত। সুতরাং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সিরিঞ্জ ডিসপোজাল বক্স ব্যবহার করুন এবং এগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।

সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডায়াবেটিস


আরও
আরও পড়ুন