পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন উপলক্ষে যেসব জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তার সাথে মন্ত্রনালয়গুলোকে সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাড়তি ব্যয়ে নতুন প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণের চিন্তা বাদ দিয়ে বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে মুজিববর্ষের প্রকল্প হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। শুধু বড় বাজেটের প্রকল্পই যে জনগণের কাছে প্রশংসনীয় হবে তা নয়, প্রশাসনিক সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জনগনের দোরগোড়ায় শর্তহীনভাবে প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছে দেয়ার যে কোনো পদক্ষেপ বা উদ্যোগকেও মুজিববর্ষের কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের একটি কর্মসূচিকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব, তা হচ্ছে- মুজিববর্ষের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে অর্থ বিভাগ ঘোষণা করেছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তারা ৬ লাখ পেনশনারকে বাড়িতে বসে পেনশন পাওয়ার ব্যবস্থা করবে। এটি যে কোনো বড় বা মেগা প্রকল্পের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নয়। যেখানে অবসরে যাওয়ার পর পেনশন পেতে বছরের পর বছর ধরে ঘুরে ঘুরে জুতার তলা ক্ষয় করতে হয়, হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়, সেখানে মুজিববর্ষের কর্মসূচি হিসেবে বাড়িতে বসে পেনশন সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা অবশ্যই একটি অনবদ্য ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
মন্ত্রনালয়, মন্ত্রী, কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাড়াবাড়ির কারণে সরকারের ভাল উদ্যোগও ¤øান হতে পারে। মুজিববর্ষের কর্মসূচি জাতির পিতার প্রতি সম্মান ও জাতীয় অগ্রগতির স্মারক। এই কর্মসূচি নিয়ে বাড়াবাড়ি, বাড়তি ব্যয়, অপচয় ও অতিরঞ্জন যাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণির সাম্প্রতিক বগুড়া সফরের কথা উল্লেখ করা যায়। বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবনির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন উদ্বোধন করতে গেলে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর মুখোশ পরে তাঁকে স্বাগত জানালে দেশব্যাপী সমালোচনা শুরু হয়। এ ধরনের অতিরঞ্জণমূলক কর্মকাÐ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেও ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীকে ভর্ৎসনা করেছেন বলে জানা যায়। বগুড়ার এ ঘটনাকে যেমন প্রধানমন্ত্রী এবং সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি, একইভাবে মুজিববর্ষের কর্মসূচির নামে বাড়াবাড়ি ও আতিশয্যের যেকোনো উদ্যোগে একই প্রকার প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে ধরে নেয়া যায়। এহেন বাস্তবতায় মুজিববর্ষের কর্মসূচিতে বাড়াবাড়ি, অপচয় ও বাড়তি খরচের উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সর্তকতা ও নির্দেশনা মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে অনেকে অনেক ধরনের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন বানিয়েছে যা ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ধরনের উদ্যোগ এক ধরনের অপচয় এবং বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের উন্নয়ন তার রাজনৈতিক দর্শন। বলা যায়, এ কাজটি তিনি একাই করছেন। মন্ত্রীসভায় যারা আছেন, তাদের অধিকাংশেরই বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। তাদের কাজের চেয়ে কথা বেশি চলে। মাঝে মাঝে তাদের বক্তব্যে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায়ও পড়তে দেখা যায়। এ প্রেক্ষিতে, জাতিরজনকের জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে অতিরিক্ত ব্যয় এবং বাড়াবাড়ি কাম্য হতে পারে না। এ প্রেক্ষাপটেই, প্রধানমন্ত্রী বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি আমলে নিয়ে তা করতে নিষেধ করেছেন। বরং জন্মশতবার্ষিকীতে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বাস্তব কর্মসূচি নেয়া এবং তা সবসময় বলবৎ রাখাই হবে সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা। সকলেরই উচিৎ এমন কাজ দেখানো। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এ প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই হবে সমীচিন।
মুজিববর্ষের কর্মসূচি হতে হবে দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, চিন্তা ও মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরকারের বিভিন্ন বিভাগে বিদ্যমান দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, লালফিতার দৌরাত্ম্য, সেবা প্রত্যাশীদের বিড়ম্বনা লাঘবের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কর্মসূচিই হতে পারে এ ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ। মন্ত্রী এমপিদের বাড়াবাড়ি ও অনভিজ্ঞতার দায় পুরো সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে যেন বহন করতে না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ মন্ত্রী-এমপি-আমলাদের কারণে যেন মুজিববর্ষের কর্মসূচিতে অনভিপ্রেত বির্তক তৈরী না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের বিদ্যমান উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্যে এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে যা মানুষের প্রত্যাশা ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। মুজিববর্ষে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার থাকা আবশ্যক। সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বা ভাস্কর্য স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী নিষেধ করেছেন। তিনি যথার্থভাবেই এ নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলমান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে গণদোয়ার আয়োজনের মাধ্যমে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করাই হবে উত্তম উদ্যোগ। মুজিববর্ষের সামগ্রিক কর্মসূচি নিয়ে বাড়াবাড়ি ও অতিরিক্ত ব্যয় যাতে না হয়, এ ব্যাপারে সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।