Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিল্লির দাঙ্গা : মসজিদে আগুন দেয়ার ঘটনা বিতর্কের কেন্দ্রে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:০২ পিএম

ভারতের রাজধানীতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরুর পর থেকেই নানা স্পর্শকাতর ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ছে টুইটার সহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে। কিছু টিভিতেও সেসব ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হচ্ছে অনেক ফুটেজই ভুয়া। মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে টিভি চ্যানেলগুলোকে স্পর্শকাতর ফুটেজের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

তবে মসজিদে আগুন দিয়ে সেটির মিনারে গেরুয়া রংয়ের পতাকা উড়িয়ে দেওয়ার যে ভিডিও ফুটেজটিকে দিল্লি পুলিশ 'ভুয়া' প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে, বিভিন্ন সূত্র থেকে যাচাই করে তার সত্যতা নিশ্চিত করেছে অল্ট নিউজ নামে অনলাইন-ভিত্তিক একটি নিউজ সাইট।

সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর, ছবি এবং ফুটেজের যথার্থতা যাচাই করা অল্ট নিউজের অন্যতম প্রধান একটি কাজ। সাংবাদিক রানা আইয়ুব মসজিদে হামলার যে ফুটেজটি মঙ্গলবার তার টুইটার পেজে শেয়ার করেন, তাতে দেখা যায় - 'জয় শ্রীরাম' এবং 'হিন্দুস্তান হিন্দুদের' স্লোগান দিয়ে একদল লোক একটি মসজিদে ভাঙচুর করে কট্টর হিন্দুত্ববাদের প্রতীক একটি গেরুয়া পতাকা মসজিদটির মিনারে উড়িয়ে দিচ্ছে।

শেয়ার করার পরপরই চরম সমালোচনা এবং ট্রলের মুখে পড়ে যান সাংবাদিক রানা আইয়ুব। অনেকে লিখতে থাকেন - ফুটেজটি ভুয়া এবং মুসলিম এই সাংবাদিক সাম্প্রদায়িক এবং তিনি দাঙ্গা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। অনেকে টুইট করেন যে ভিডিওটি দুবছর আগে বিহারের সমস্তিপুর এলাকার একটি ঘটনার ফুটেজ। রমেশ সোলংকি নামে একজন টুইটারে লেখেন তিনি রানা আইয়ুবের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। দিল্লি পুলিশও দাবি করে অশোকবিহারে মসজিদে হামলার ফুটেজটি ভুয়া, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। চাপে পড়ে টুইটটি মুছে দেন রানা আইয়ুব। কিন্তু অল্ট নিউজের অনুসন্ধানে এখন দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবার দিল্লির অশোক নগর এলাকায় মসজিদে হামলা, আগুন দেওয়া এবং গেরুয়া পতাকা ওড়ানোর ঘটনা ঘটেছে।

অল্ট নিউজ 'দি ওয়্যার' নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের দুজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলেছেন, যারা ঐ হামলার প্রত্যক্ষদর্শী এবং তাদের একজন ঐ হামলার ভিডিও তুলেছেন। ফুটেজের ইলেকট্রনিক ডেটা থেকে দেখা গেছে, এটি তোলা হয়েছে ২৫শে ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টা ৫৭ মিনিটে। ওয়্যারের তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে মসজিদের আগুন নেভানোর জন্য দমকল বাহিনী হোস ব্যবহার করছে। মসজিদ ভবনটি থেকে ধোঁয়া উঠছে এবং মসজিদের সেই মিনারটি দেখা যাচ্ছে যেটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজেও দেখা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কেউ অবশ্য বলছিলেন ঘটনা ঘটেছে অশোক বিহার নাম এলাকায়। অল্ট নিউজ বলছে - অশোক বিহারে নয় অশোক নগর এলাকার 'বড় মসজিদে' আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সাংবাদিক রানা আইয়ুব আবারও মসজিদে হামলার ফুটেজটি শেয়ার করেছেন।
'আর আজাদি চাইবি'

সোশ্যাল মিডিয়াতে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কিত আরেকটি ভিডিও ফুটেজ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে - পাঁচজন আহত তরুণ-যুবক মাটিতে পড়ে আছেন এবং কয়েকজন পুলিশ তাদের ঘিরে ধরে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। এরই মধ্যে তাদেরকে দিয়ে জোর করে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ানো হচ্ছে।
পাশাপাশি, একজন পুলিশকে চিৎকার করে বলতে শোনা যাচ্ছে - 'আর আজাদি চাইবি।" শাহিনবাগ অফিসিয়াল নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে এই ফুটেজটি পোস্ট করে লেখা হয় - 'যখন রক্ষক ভক্ষক হয়, তখন আমরা কোথায় যাবো?' এই ভিডিওটিরও সত্যতা যাচাই করেছে অল্ট নিউজ। অল্ট নিউজ একই ঘটনার অন্য একটি ভিডিও ফুটেজ জোগাড় করতে সমর্থ হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজটির সাথে তাদের জোগাড় করা ফুটেজটির মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছে তারা। দুটো ফুটেজের স্ত্রিনশটে একই চিত্র দেখা গেছে, যেমন- ১. পড়ে থাকা একজন তরুণের মাথা আরেকজনের ওপর ২. অন্য দুজনের গায়ে কালো রংয়ের টি-শার্ট।

নির্যাতনের শিকার ঐ যুবকদের একজনের সাথে অল্ট নিউজ কথা বলতেও সমর্থ হয়েছে। তিনি তার বক্তব্য ভিডিও করে সেটি অল্ট নিউজকে পাঠিয়েছেন, যেটিতে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে এভাবে - পুলিশ ৫-৬জনকে বেধড়ক পিটিয়েছে। একজনের হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। আরেকজনের পা ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার হাত ও পা দুটোই ভেঙ্গেছে। আমার মাথায় আট থেকে দশটি সেলাই দিতে হয়েছে। পুলিশগুলো আমাদের বলছিলো - আর আজাদি চাইবি?"

অল্ট নিউজ বলছে ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার দিল্লির জাফরাবাদ এলাকার কাছে পুলিশি নির্যাতনের এই ভিডিও ফুটেজটি যথার্থ। ঘটনা ঘটেছে কারাদামপুরি এলাকার কৃষ্ণ মার্গ বাস স্টপের কাছে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ