Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিল্লিতে বেঘোরে প্রাণ খোয়াচ্ছে মুসলমানরা, প্যান্ট খুলে ধর্ম যাচাই

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ পিএম | আপডেট : ১২:২৫ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মাস চারেক আগে শহিদকে বিয়ে করতে নয়াদিল্লিতে আসেন ২০ বছর বয়সী তরুণী সাজিয়া। এখন তিনি দুই মাসের গর্ভবতী। অপেক্ষা করছেন, কখন স্বামীর মরদেহ আসবে। উত্তর প্রদেশের বুলান্দশাহরে নিজের বাড়িতে নিয়ে তার লাশ দাফন করবেন। দ্য প্রিন্টের খবরে বলা হয়, উত্তরপূর্ব দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদীদের হামলায় নিহত ১৯ জনের মধ্যে একজন হলেন শহিদ। সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটায় তার পেটে গুলি করলে তিনি নিহত হন। ২২ বছর বয়সী শহিদ ছিলেন একজন অটোরিকশা চালক।

সাজিয়া বলেন, তিনি প্রতিদিন দুপুরের খাবার খেতে বাড়িতে আসতেন। আমি খেয়েছি কিনা, তা খেয়াল রাখতেন। আমাকে বলতেন, সাজিয়া তুমি খাও, বাবু ক্ষুধার্ত। কিন্তু গতকাল তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। পরে খবর আসে, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

স্বামী নিহত হওয়ার পর থেকে আর কিছুই খেতে চাচ্ছেন না সাজিয়া। তিনি বলেন, আমি খাবো না। তার মরদেহ না দেখা পর্যন্ত আমি খাবো না। চিকিৎসকরা তার মরদেহ দেখতে দেয়নি আমাকে। তার মরদেহ দেখার অধিকার কি আমার নেই?

হাসপাতাল থেকে যখন তিনি ফিরছিলেন, তার সঙ্গে থাকা পুরুষ আত্মীয় তাকে বোরকা খুলে ফেলতে বলেন, যাতে তাকে মুসলমান বলে কেউ শনাক্ত করতে না পারেন।
সাজিয়া বলেন, বাড়িতে আমি নিজের দেবরের সঙ্গে পর্যন্ত দেখা দিই না। কিন্তু আজ আমাকে বোরকা খুলে রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে।

শিশুর জন্য খাবার কিনে বাড়ি ফেরা হলো না ফুরকানের
দিল্লির আগুনে নিহতদের মধ্যে আরেকজন ফুরকান ছিলেন যিনি তার বাচ্চাদের জন্য খাবার কিনতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। কিন্তু খাবার নিয়ে বাড়ি ফেরা হয়নি। মাঝরাস্তাতেই মৃত্যু হয় তার। ওই বাবার নাম মুহম্মদ ফুরকান। ছোট দুটি ছেলেমেয়ের জনক তিনি।
ফুরকানের ভাই মুহম্মাদ ইমরান বলছেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না ভাই নেই। দুপুর বেলাও ফুরকানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তারপর কী থেকে কী হয়ে গেল। দুঃস্বপ্নের মত লাগছে।’

ফুরকানের ভাই ইমরান জানিয়েছেন, ‘একজন আমায় ফোন করে বলল ভাইয়ের পায়ে গুলি লেগেছে। শুনে কিছু বুঝতেই পারছিলাম না। তারপর বারবার ভাইয়ের ফোনে ফোন করছিলাম। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেনি। একটু পরে ফের ফোন আসে। বলা হয়, তার ভাইকে জিটিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভাইয়ের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে ডাক্তারদের কাছে বারবার জানতে চেয়েছিলেন ভাই কেমন আছে। ফুরকানকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতিও চেয়েছিলেন চিকিৎসকদের থেকে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।

দিল্লিতে প্যান্ট খুলে সাংবাদিকের ধর্ম যাচাই
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের সময় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের প্যান্ট খুলে, তিনি সংবাদ সংগ্রহের ‘উপযুক্ত’ কিনা, সেই পরিচয় নিশ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। দেশটির দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস এ নিয়ে একটি অনলাইন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তাতে বলা হচ্ছে, সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে সহিংসতার শিকার হলেন সংবাদকর্মীরা। আজ মঙ্গলবার গুলিবিদ্ধ হলেন এক সাংবাদিক। বেধড়ক মারধর করা হয়েছে আরও দুই সংবাদকর্মীকে। সোমবার বিক্ষোভে উত্তপ্ত এলাকায় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্তার পর কোনো রকমে রেহাই পেলেন এক বাঙালি সাংবাদিক।
এদিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুরে হামলাকারীদের গুলিতে আহত সাংবাদিক আকাশ এখন হাসপাতালে। এছাড়া জ্বলন্ত মসজিদের ছবি তুলতে গেলে প্রচন্ড মারধর করা হয় এনডিটিভির দুই সাংবাদিক অরবিন্দ গুণশেখর ও সৌরভ শুক্লাকে। গতকাল সেখানেই হামলার শিকার হন টাইমস অব ইন্ডিয়ার চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিত্র সাংবাদিক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা পড়লে শিউরে উঠতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, উত্তেজনাপূর্ণ জাফরাবাদ অঞ্চলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলাসহ ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি ও তার সহকর্মী সাংবাদিক।

তিনি লিখেছেন, ‘ঝামেলা হয়েছে শুনে বেরিয়েছিলাম। টাইমস অব ইন্ডিয়ার চিত্রগ্রাহক আমি। কিন্তু আজ উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে কিছুক্ষণ ঘুরে এবং প্রাণ হাতে করে অফিসে ফিরে বুঝলাম—দিগভ্রষ্ট যুবসমাজ যখন ধর্মের অছিলায় আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়, তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হয় ‘

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় নামের ওই সাংবাদিক লিখেছেন, ‘অফিসের গাড়িতে মৌজপুর মেট্রো স্টেশনের কাছে দুপুর সোয়া ১২টা নাগাদ। তখনই প্রথমবার বিস্মিত হই। কারণ সেখানে হিন্দু সেনার একজন সদস্য এসে আমাকে মাথায় তিলক লাগাতে বলে। তিলক কেন? বললো, আপনিও তো ভাই হিন্দু। সমস্যা কোথায়? এতে ওখানে কাজ করতে সুবিধা হবে।’

এর ১৫ মিনিট পরই সেখানে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয় এবং ‘মোাদি’ ‘মোদি’ স্লোগানের মাঝে কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যায়। জানা যায়, স্থানীয় একটি বাড়িতে আগুন লেগেছে। সে দিকে এগোতে গেলে একটি শিব মন্দিরের কাছে অনিন্দ্যকে একদল মানুষ বাধা দেন। ছবি তুলতে যাচ্ছে জানতে পেরে তারা তাকে বলেন, ‘ভাই, আপনিও তো হিন্দু। তাহলে ওখানে কেন যাচ্ছেন? হিন্দুরা আজ জেগে উঠেছে।’

বাধা পেয়ে অন্যপথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছবি তুলতে গেলে তাকে ঘিরে ফেলে হাতে লাঠি ও লোহার রডধারী একদল যুবক মাঝবয়সী মানুষ। তারা ওই সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন তার সহকর্মী ও সাংবাদিক সাক্ষী চাঁদ। রুখে দাঁড়াতেই দেয় সশস্ত্র দলটি সেখান থেকে চলে যায়। তবে একটু পরই অনিন্দ্য বুঝতে পারেন, তার পিছু নেওয়া হয়েছে। অনুসরণকারীদের মধ্যে এক তরুণ এগিয়ে এসে তাকে সতর্ক করে, ‘ভাই, তুই একটু বেশি চালাকি করছিস। তুই হিন্দু, না মুসলিম?’ তারা ওই সাংবাদিকের প্যান্ট খুলে ধর্মীয় ‘পরিচয়’ খোঁজার চেষ্টা করলে হাতজোড় করে অনেক অনুনয়ের পর কিছু হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অফিসের গাড়ি না পেয়ে অটোরিকশা নিয়ে ফেরার চেষ্টা করেন অনিন্দ্য। কিন্তু অটোচালক মুসলিম হওয়ায় তাদের মাঝপথে থামিয়ে ঘেরাও করে চারজন সশস্ত্র যুবক। কলার ধরে দুজনকে অটো থেকে নামিয়ে মারধরের চেষ্টা করে। সাংবাদিক পরিচয় এবং অটোচালক নির্দোষ, এমন কথা বলে অনেক অনুনয়ের পরে তারা ছাড়া পান।

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘মুহূর্তগুলো আমার পার হলো ভয়ানক আতঙ্কে। ওই অটোওয়ালাই যখন আমাকে অফিসে দিয়ে গেল, তখনও সে ভয়ে কাঁপছে। চলে যাওয়ার আগে শুধু বললো, ‘‘গোটা জীবনে কেউ আমাকে ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করেনি কখনো।’’



 

Show all comments
  • ABUL HOSSAIN ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪১ পিএম says : 0
    Communal riot is one of the unfortunate relation between two religion being the citizen of same country.This is the unfortunate result of weak and most improper system of concern government and partial control of law and force agencies.Some miscreant people who remain and wait for such situation get opportunity of looting robering kidnapping and rape. If the government is strong and high capable to control the every and each situation whatever it may be, then no one can exceed the limit.
    Total Reply(0) Reply
  • habib ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৩২ পিএম says : 0
    now we will see the reaction of Muslim leader from OIC either they still geven support to hypocrites Norendra Modi or they can given support to oppress Muslim. it could be shame for the Muslim leader who could not playing a fair rules for the effective Muslim...
    Total Reply(0) Reply
  • Yousuf ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৩:০২ পিএম says : 0
    হে আল্লাহ মুসলমানদের উপর আপনি দয়া করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Miah Adel ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৫:৫১ পিএম says : 0
    India is exposing her real picture in action.
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:২৪ পিএম says : 0
    O'Allah save the muslim in India and destroy Modi Iblees... Ameen
    Total Reply(0) Reply
  • Amir ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:২৮ এএম says : 0
    ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যা ঘটেছিল তাই হচ্ছে আজ ভারতে, তাহলে ভারত বিভক্তি কি অত্যাসন্ন?
    Total Reply(0) Reply
  • ABDUR RAHMAN ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:১৬ এএম says : 0
    إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ Indeed, the vengeance of your Lord is severe. (85:12) MODI NO WORRIES !! IF ALLAH WILLS , YOUR END GONNA BE MORE SEVERE THAN WHAT U R DOING NOW !!
    Total Reply(0) Reply
  • md. khairul islam ১ মার্চ, ২০২০, ১২:১৭ এএম says : 0
    hindottobadi bjpir poti janay ghina
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ