যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথমবার ভারত সফরে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও তার এই সফরে বড় কোনও বানিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরেও এই সফর নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই ভারতে।

চলতি বছরের শেষেই আবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লড়বেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগেই তিনি ভারত সফর সেরে ফেলছেন। গত চার বছরের মধ্যে ভারত সফর করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার পাঁচ বছরের কার্যকালের একেবারে শেষভাগে এসে ভারতে আসছেন ট্রাম্প।

তার এই সফর ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বিভিন্ন আলোচনা। শেয়ার করা হচ্ছে মজার সব ভিডিও। তেমনই একটিতে ট্রাম্পকে বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র বাহুবলির মূল চরিত্রে দেখানো হয়েছে। এই ভিডিওটির একটি টুইট নিজের একাউন্ট থেকে শেয়ার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সঙ্গে লিখেছেন, ভারতীয় বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তিনি মুখিয়ে আছেন।

ভারতে মোট তিনটি শহরে যাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আহমেদাবাদ, আগ্রা এবং নয়াদিল্লি। আগামী সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫৫তে আহমেদাবাদ বিমান বন্দরে নামবেন ট্রাম্প। সেখান থেকে শুরু হবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির রোড শো। বিমানবন্দর থেকে নবসাজে সজ্জিত মোতেরা স্টেডিয়াম পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে চলবে রোড শো। যাত্রাপথে ২৮টা মঞ্চে বিভিন্ন রাজ্যের সংস্কৃতির ঝলক থাকবে। যাত্রাপথেই তিনি গান্ধীজির সবরমতী আশ্রমে যাবেন ও মিনিট পনেরো সময় কাটাবেন। সেখানে তাকে চরকা উপহার দেয়া হবে। মোতেরা স্টেডিয়ামে পৌছবেন ১ টা ১৫ মিনিট নাগাদ। সেখানে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠান হবে। মধ্যাহ্নভোজের পর সোজা আগ্রা।

বিকেল পাঁচটায় আগ্রা পৌঁছবেন ট্রাম্প। সূর্যাস্তের আলোয় অপরূপ তাজমহল দর্শন করার পর সাড়ে ছয়টা নাগাদ দিল্লির পথে যাত্রা করবেন। পরের দিন সকাল দশটায় প্রেসিডেন্ট ভবনে স্বাগত জানানো হবে তাকে। সেখান থেকে রাজঘাটে গান্ধীজির প্রতি সম্মান দেখাবেন তারা। সাড়ে এগারোটায় শুরু হবে মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে সরকারি পর্যায়ের আলোচনা। বেলা তিনটের সময় মার্কিন দূতাবাসে যাবেন তিনি। সেখানে ভারতীয় শিল্প ও বানিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা হবে। এ সময় মেলানিয়া ট্রাম্প দিল্লির সরকারি স্কুলে হ্যাপিনেস ক্লাস দেখে আসবেন। রাত দশটায় আমেরিকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের এই সফরের জন্য আহমেদাবাদ ও আগ্রাকে বিপুলভাবে সাজানো হচ্ছে। রোড শোর পথে গরিবদের বস্তি ঢাকতে বানানো হয়েছে দেয়াল। রঙ বেরঙের কাপড়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে চারদিক। নতুন করে রঙ লাগানো হয়েছে মেট্রো রেলের থামে। আগ্রায় রাস্তা চওড়া হয়েছে। চারপাশ পরিষ্কার করা হয়েছে। যমুনা ব্যারেজ থেকে বাড়তি পানি ছাড়া হয়েছে, যাতে যমুনায় পরিষ্কার পানি থাকে ও দূষণের গন্ধ অতিথিদের কাছে না পৌঁছয়।

তবে ট্রাম্পের এই সফরে বড় কোনও বানিজ্য চুক্তি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নিউ ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায় চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল কৃষি ক্ষেত্র বিশেষ করে দুধ ও দুগ্ধজাত জিনিস ভারতে রফতানির বিশেষ সুবিধা। সেই সঙ্গে পোলট্রির জিনিসেরও সহজ রফতানি। কিন্তু ভারত তাতে রাজি হয়নি। ফলে বড় ধরনের কোনও চুক্তির সম্ভাবনা নেই। কিছু কিছু ঘোষণা হবে। এই মাত্র।’

তা হলে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে, এত আগ্রহ দেখিয়ে কেন ট্রাম্প আসছেন? প্রবীণ সাংবাদিক জোসেফের ব্যখ্যা, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য হল ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের ভোট পাওয়া। সে জন্য তিনি হাউডি মোদিতে গিয়েছিলেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘তার প্রধান অনুষ্ঠান হতে চলেছে, নমস্তে ট্রাম্প। কারণ, তার ভোট চাই।’ সূত্র: ডয়চে ভেলে।