Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুন্দর আচরণকারী ও মিষ্টভাষীদের জন্য জান্নাতের সুখবর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:২৩ এএম | আপডেট : ১১:৩৯ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মানুষ উত্তম চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে অলোকিত করতে পারে। হাদিসে রয়েছে- হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আস (রা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, তাওরাতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষণসমূহ সম্পর্কে আমাকে অবগত করুন। তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এমন কতিপয় বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়েছে, যা দ্বারা কোরআন মাজিদে তিনি বিশেষায়িত হয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি’ (সূরা আল আহজাব, আয়াত-৪৫) এবং নিরক্ষরদের স্মরণ স্থল, আপনি আমার বান্দা ও আমার পয়গামবাহী রাসূল, আমি আপনার নামকরণ করেছি মুতাওয়াক্কিল (আল্লাহতে নির্ভরশীল)। আপনি রুক্ষ্ম মেজাজ ও হাটবাজারে শোরগোলকারী নন, দুর্ব্যবহারের দ্বারা দুর্ব্যবহারের জবাব দেন না, বরং মার্জনা ও ক্ষমা করে দেন।’ –আল আদাবুল মুফরাদ

রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আলোকিত প্রদীপ। তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে জনৈক আরব কবি বলেন, ‘হে জ্যোতির্ময়! হে মানব শ্রেষ্ঠ! তোমার পূত চেহারার দীপ্তি থেকেই চাঁদ আলোকপ্রাপ্ত হয়েছে।’
যার হৃদয় যত পবিত্র, তিনি তত কোমল ব্যবহারের অধিকারী হন, তিনি হন সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারার অধিকারী। পৃথিবীতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে পবিত্র মন, আকর্ষণীয় আচরণের অধিকারী আর কোনো ব্যক্তির আগমন ঘটেনি এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে না।
নবী করীম (সা.) সঙ্গী-সাথীদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ামাত্র হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাতেন, কিন্তু জীবনে কেউ কোনোদিন তাঁকে অট্টহাসি হাসতে দেখেনি। প্রবল হাসির উদ্রেক হলে কখনও কখনও বিদ্যুৎ চমকের মতো একফালি দাঁতের ঔজ্জ্বল্য ফুটে বের হত।
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, জীবনে যতবার আমি রাসূলে কারিম (সা.)-এর সাথে সাক্ষাত করেছি, প্রত্যেকবারই তিনি আমাকে হাসিমুখে সম্ভাষণ করেছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমার কথা শুনেছেন।
আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) বলেন, নবী (সা.) মৃদুহাসি ব্যতিত কখনও উচ্চহাস্য করতেন না।

মানুষ চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান হাসিল করতে পারে। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায়, অনেক সৎ চরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে, যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, যাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবেন। তাই মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া পরিবার প্রধান ও সমাজ সংস্কারকদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
মিষ্টভাষীদের জন্য জান্নাতের সুখবর রয়েছে পবিত্র হাদিসে। এ বিষয়ে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে কথাটি প্রকৃতই মিথ্যা এবং অসঙ্গত, যে ব্যক্তি তা বলা এবং আলোচনা করা পরিত্যাগ করে- তার জন্য জান্নাতের কিনারায় স্থাপনা নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি সঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ পরিত্যাগ করে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে বাসস্থান নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি বাক সংযম, মিষ্টভাষণ এবং সত্য কথা প্রভৃতি গুণ দ্বারা নিজের চরিত্র সৌন্দর্যমন্ডিত করে, তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাসস্থান নির্মিত হয়।’ –মিশকাত
আনন্দ রসহীন জীবনকে সাধারণ মানুষ তেমন জীবনকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু হাসি-তামাশা যেন ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে না যায়, সে জন্য সূক্ষ্ম রসবোধ ও আত্ম সংযম থাকা দরকার।
নীরবতা, নির্জনতা, স্থির ও সমাজবিচ্ছিন্ন একক জীবন ইসলাম নয়। দয়া, নম্রতা, নরম মেজাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজের মানুষের সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে মিশতে হবে। তাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করতে হবে। আর এসব যেন লোক দেখানোর জন্য না হয়- সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

 



 

Show all comments
  • সাইফ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৩১ এএম says : 0
    আল্লাহ্‌ লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান অবশ্যই দেবেন। আর আমাদেরকে এর থেকে লাভবান হওয়ার তৌফিক প্রধান করুণ। আসলে আমাদের বর্তমাণ মুসলমান সমাজে এটাই এখন বড় অভাব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ