মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
হেরে গেলেন আসামের জুবেদা বেগম। শেষ সম্বল খরচ করে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে নেমেছিলেন তিনি। আইনি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন। আসামের হাইকোর্ট জুবেদা বেগমের বিরুদ্ধে রায় দিল। এ বার একমাত্র সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন জুবেদা। কিন্তু হাতে আর টাকা নেই তার।
আসামের এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে জুবেদা। নাগরিকত্ব প্রমাণ করার লড়াইয়ে নেমে বিক্রি করে দিয়েছেন শেষ জমিটুকুও। দীর্ঘ দিন ধরে আসামের হাইকোর্টে আইনি লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। নাগরিকত্বের ১৫টি প্রমাণ আদালতকে জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গুয়াহাটি হাইকোর্ট শেষ পর্যন্ত জানিয়েছে, এত কিছুর পরেও নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেননি জুবেদা বিবি। কারণ, বাবা এবং ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি।
ভোটার আই কার্ডে নিজের নাম, ১৯৬৬ সাল থেকে বাবার ভোট দেয়ার নথি, ভূমি রাজস্ব দেয়ার রশিদ, বিয়ের সার্টিফিকেট, গ্রামের প্রধানের হলফনামা, প্যান কার্ড, রেশন কার্ডের মতো ১৫টি প্রমাণপত্র জমা দিয়েছিলেন জুবেদা। কিন্তু আসামের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা জুবেদা বেগমকে বিদেশি বলেই চিহ্নিত করেছিল ফরেনার্স ট্রাইবুনাল। হাইকোর্টও তার আবেদন খারিজ করে দিল। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য জুবেদার সামনে এখন একটাই পথ, সুপ্রিম কোর্টে আবেদন। কিন্তু সেই আবেদন করার মতো আর্থিক সঙ্গতি আর তার নেই।
জুবেদার তিন বিঘা জমি ছিল। হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়ের খরচ যোগাতে তা বিক্রি করতে হয়েছে। স্বামী অসুস্থ। বড় মেয়ে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। মেজো মেয়ে নিখোঁজ। ছোট মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে। বাকসা জেলার তামুলপুর গ্রামের জুবেদার সমস্ত চিন্তা এখন ছোট মেয়েকে ঘিরে। এখন দিনমজুরের কাজ করেন জুবেদা। সেই রোজগারেই সংসার চলে।
জুবেদার আইনজীবী জানিয়েছেন, ‘আসলে তিনি যখন ভোটার তালিকায় নাম তোলেন, তখন সেখানে বাবা নয়, স্বামীর নাম দিয়েছিলেন। তাই হাইকোর্ট বলছে, তিনি সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারেননি। তবে গ্রাম প্রধানের সার্টিফিকেটও বৈধ নথি। তার ভিত্তিতে জুবেদা নাগরিকত্ব পেতে পারেন।’ কিন্তু আইনজীবীর কথা এখানে মুখ্য নয়, আদালত কী বলেছে সেটাই প্রধান।
তা হলে এ বার জুবেদা বেগমের কী হবে? আসামে এনআরসি নিয়ে একেবারে শুরু থেকে কাজ করছেন সাংবাদিক অমিত সেনগুপ্ত। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘আসামে এরকম হাজার হাজার জুবেদা আছেন। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে আছেন। রাজবংশীরা একইভাবে ভুগছেন। বোড়োরাও। মেয়েদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তাদের বেশিরভাগই লেখাপড়া শেখেননি। কোনও প্রমণপত্র নেই। আরেকটা সমস্যা হল, প্রতি বছর বন্যা হয়। পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়। গ্রামের বাসিন্দারা অন্যত্র বসতি স্থাপন করেন। বন্যার পানিতে ঘরে থাকা সবকিছুই ভেসে যায়। গ্রামের নামও আর থাকে না। তারা কোথা থেকে প্রমাণপত্র পাবেন?’
এটা কেবল আসামের জুবেদার সমস্যা বলে মনে করল ভুল হবে। আসামে প্রচুর মানুষ এই সমস্যায় পড়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের অন্য রাজ্যেও বহু মানুষ এই আতঙ্কে ভুগছেন। দেশজুড়ে এনআরসি চালু হলে তারা কীভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণ করবেন, সেটাই তাদের চিন্তা। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্টজনদের একটা বড় অংশ বলেছেন, তারা কাগজ দেখাবেন না।
কাগজ না দেখানোর রব শাহিনবাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যে সিএএ-এনআরসি নিয়ে প্রতিবাদকারীদের মুখে মুখেও ঘুরছে। ভারতীয় হয়ে কেন আবার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে? এই প্রসঙ্গেই জুবেদার কাহিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। সেটা আর শুধুমাত্র একা মানুষের সমস্যা থাকে না। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।