পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একজন প্রখ্যাত লেখক বলেছেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়নি, বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবুও তো আপনার দেউলে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ আসলেই তাই, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়েছে এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি কখনো, কিন্তু বই পড়ে জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে, দেশ ও জাতি এবং মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পেরেছে, এমন মানুষের সংখ্যা অধিক। জগৎবিখ্যাত কবি ওমর খৈয়ম বলেছিলেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু একখানা বই সব সময় অনন্ত-যৌবনা, যদি তেমন বই হয়।’ পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ আছে, ‘পড় তোমার প্রভূর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘ঘণ্টাখানেকের জ্ঞান সাধনা সমগ্র রজনীর ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ আর জ্ঞান সাধনার অন্যতম মাধ্যমই হলো বই। আল্লামা শেখ সা’দী বলেন, ‘জ্ঞানের জন্য তুমি মোমের মতো গলে যাও। কারণ জ্ঞান ছাড়া তুমি খোদাকে চিনতে পারবে না।’ সনাতন, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতেও বই পড়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল শব্দের অর্থই হলো বই। বৃটিশ দার্শনিক ও যুক্তিবিদ বারট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়ানোর প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, ভবযন্ত্রণা এড়ানোর ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’ একটি বই জীবনের কথা বলে, বই মানুষের কথা বলে, বই বিপথগামী মানুষ ও সমাজকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার রসদ যোগায়। বই মানুষকে ন্যায়নীতি ও আদর্শিক জীবন গঠনে অনুপ্রান্বিত করে।
আমরা যে যতটুকু লেখাপড়াই করি না কেনো, পাঠ্য বইয়ের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে বিখ্যাত লেখকদের বই পড়ার মানসিকতা তৈরি হওয়া দরকার। একটি ভালো বই মানুষকে আদর্শ জীবন গঠন করতে সহায়তা করে, ধর্মীয় বই ছাড়াও পৃথিবীতে অসংখ্য বই আছে, যা থেকে জ্ঞান অর্জন করে মানব জীবন আলোকিত করা সম্ভব। মানুষের ভেতরের হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ভুলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি হওয়ার মতো উদার মানসিকতা তৈরি সম্ভব। সুন্দর ও আদর্শ সমাজ এবং দেশ গঠনে বইয়ের কোন বিকল্প নেই।
উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার ফলে বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়া দৃশ্যমান। বিগত এক দশক আগেও পাঠ্য বইয়ের বাইরেও দেশি বিদেশি সাহিত্য, ইতিহাস, গোয়েন্দা কাহিনী, শিশুতোষ গল্প, বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি বিষয়ক বইসহ নানা বিষয়ে লেখা বইয়ের প্রতি সকলের আগ্রহ ছিলো, বর্তমানেও মানুষ পড়ছে, তবে তা বইয়ের মাধ্যমে নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভালো মন্দ যে যাই লিখছে, তাই পড়ছে মানুষ, যার মধ্যে ইতিবাচকের লেখার বিপরীতে নেতিবাচকের সংখ্যাও কম নয়, যার মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে, ভুল বার্তায় আকৃষ্ট হয়ে হানাহানি, মারামারি ও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি হচ্ছে। বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণে জ্ঞানশূন্য প্রজন্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ ও জাতি। প্রকাশকরা এখন আগের মতো বেশি সংখ্যক বই প্রকাশ করে না। কবি-সাহিত্যিক-লেখকরা বই লিখতে আগ্রহী হয় না এখন তেমন। পূর্বে সারা বছর জুড়েই দেশের আনাচে-কানাচে থাকা লাইব্রেরিগুলোতেই পাঠ্য বইয়ের বাইরে বহু গল্প, কবিতাসহ বিভিন্ন বই বিক্রির হিড়িক লেগে থাকতো। এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না।
আশার কথা, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় বাংলা একাডেমির আয়োজনে মাসব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের একজন পৃথিকৃৎ চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের উপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে যে বইমেলার শুরু করেছিলেন, সে বইমেলা আজ পর্যন্ত নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে। শুধুমাত্র ঢাকাতেই নয় অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরেও বইমেলার আয়োজন হয়, যেখানে দেশি-বিদেশি কবি সাহিত্যিক ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের মিলনমেলা হয়, যেখানে দেশি বিদেশি সাহিত্য, গোয়েন্দা কাহিনী, শিশুতোষ গল্প, ইতিহাস, রাজনীতি, বৈজ্ঞানিক, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান বিষয়ক, ধর্মীয় বই, সহ নানা বিষয়ে লেখা পাওয়া যায়। জ্ঞানার্জন ব্যতীত কোন জাতিই কাক্সিক্ষত উন্নতি সাধন করতে পারে না। তাই আসুন, শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও বই কিনি, বই পড়ি, প্রিয়জনকে বই উপহার দেই, পৃথিবী বইয়ের হোক, বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী।
লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।