পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ এখন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন। এই অভূতপূর্ব ও গৌরবময় বিজয়ের কৃতিত্ব যাদের, সেই অনূর্ধ্ব ১৯ দলের ক্রিকেটারদের আমরা আন্তরিক ও অকুণ্ঠ অভিনন্দন জানাই। আসলে তাদের অভিনন্দন জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের নেই। তারা বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এমন একটা সুউচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছে, যার কোনো তুলনা হয় না। দক্ষিণ আফ্রিকার পচে ফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে অনুষ্ঠিত ফাইনালে চার চার বার অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী ভারতকে হারিয়ে আকবর আলীর দল বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সিনিয়র টাইগাররা যা পারেনি, কল্পনাও করেনি, সেটাই করে দেখিয়ে দিয়েছে জুনিয়র টাইগাররা। ভারত অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল। এই আসরে তাদের পারফরমেন্স মোটেই খারাপ ছিল না। এই সঙ্গে ছিল বিশ্বকাপ জয়ের অতীত ঐতিহ্য ও প্রেরণা। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের পারফরমেন্স যথেষ্ট ভালো হলেও তেমন কোনো অনুপ্রেরণা ছিল না। এর আগে সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ২০১৬ সালে সেমিফাইনালে খেলা। যথারীতি ¯স্নায়ূচাপ তো ছিলই। অথচ সেই বাংলাদেশই ভারতের দর্প-গর্ব চূর্ণ করে দিয়ে বিজয়মাল্য ছিনিয়ে এনেছে। যোগ্যতর দল হিসাবেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের পারফরমেন্স ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং-এই তিন শাখাতেই বাংলাদেশ অধিকতর যোগ্যতা ও সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। শক্তিশালী এবং ডিফেল্ডিং চ্যাম্পিয়নকে ১৭৭ সালে আটকে ফেলা খুব সহজ কাজ নয়। বোলিংয়ে শরিফুল ইসলাম, তানজিদ হাসান সাকিব, অভিষেক দাস, শরিফুল হাসান সবাই দারুণ পারফর্ম করেছে। ফিল্ডাররা তাদের যথাযথ সহযোগিতা দিয়েছে। ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটি পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান শুরুটা ভালোই করে। তারা ৫০ রান তোলে। এরপর বিপর্যয় দেখা দেয়। ১৫ রানে ৪ উইকেট চলে যায়। এরপর ১০০ রান না করতেই চলে যায় আরো ৩ উইকেট। ব্যাটসম্যানদের একের পর বিদায় চিন্তার ভাঁজ ফেলে দলের সবার কপালে। এই বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তোলে অধিনায়ক আকবর আলী। তার অধিনায়োকচিত ইনিংস দলকে বিপর্যয় থেকে শুধু রক্ষাই করে না, স্বপ্নের বিজয়কেও হাতের মুটোই এনে দেয়। আকবর আলী ‘আকবর দি গ্রেট’র ভূমিকাই পালন করেছে। তাকে বিশেষভাবে আমরা অভিনন্দন জানাই।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো উপযুক্ত দল গড়ে তোলা একটি কৃতিত্বপূর্ণ কাজ। এটা অনেকের চিন্তা, মেধা ও শ্রমের ফসল। আকবর আলীর নেতৃত্বে যে দলটি গঠন করা হয়েছে তার প্লেয়ার সিলেকসন যারা করেছেন, প্রথম কৃতিত্ব তাদের। এরপর কোচ, যারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যারা টিম ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কৃতিত্বও মোটেই কম নয়। সর্বোপরি ক্রিকেট বোর্ডের ভূমিকা ও অবদান তো আছেই। বলা যায়, এটা সম্মিলত চেষ্টার ফল। স্ট্রেন্থ কন্ডিশনিং কোচ রিচার্ড ষ্টনিয়ার বলেছেন, আকবররা তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। শুধু তার নয়, বিভিন্ন পর্যায়ে দলের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত তাদের এবং দেশবাসীর সকলের স্বপ্নই আকবররা পূরণ করেছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, ফিটনেস এবং উচ্চ মনোবলের মধ্যেই কোনো দলের বিজয়ের চাবিকাঠি নিহিত থাকে। আমরা দেখেছি, আকবর আলীর দলটি পুরো টুর্নামেন্টে তার সক্ষমতা, নৈপূণ্য ও শক্তিমত্ততার পরিচয় দিয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজেয় থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এটাও একটা রেকর্ড। আমরা দলের সকল সদস্যের পাশাপাশি সিলেক্টর, কোচ, ম্যানেজার এবং ম্যানেজন্ট এবং ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই। চ্যাম্পিয়ন দলকে মাননীয় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়েছেন। গোটা জাতিই অভিনন্দন জানিয়েছে। বিজয়ের খবর শোনার পর গভীর রাতে গোটা বাংলাদেশ যেভাবে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছিল তার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। মিছিল, শ্লোগান, বাদ্যবাজনা সব মিলে একটি জাতীয় উৎসব পালন করেছে দেশের দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ। ক্রিকেটের একটি বড় বিজয় সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও একই সমতলে নিয়ে এসেছে। এটাই আসলে বাংলাদেশ। মানুষের মধ্যে জাতিপ্রীতি ও দেশপ্রেম কতটা গভীরে সঞ্চিত, এ থেকে তারও প্রমাণ মেলে। জনগণের ঐক্য-সংহতি জাতীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। ক্রিকেটের এই বিজয় যে আত্মশ্লাঘায় আমাদের উজ্জীবিত করেছে তা স্মরণ ও ধরে রাখতে হবে।
জুনিয়র টাইগারদের এই ঐতিহাসিক বিজয় ক্রিকেট নিয়ে আমাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশাকে অনেক খানি বাড়িয়ে দিয়েছে। বড়দের ক্রিকেটে আমাদের সিনিয়র টাইগাররা কতদূর কী করতে পারবে, সেটা বলা যায় না। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তারা আজো ভালো অবস্থানে যেতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের পারফরমেন্সের মধ্যে ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। অবশ্যই জাতীয়ভাবে আমরা আশা করি, আমরাও একদিন বিশ্বকাপ জয় করতে পারবো। এতদিন মনে হতো, সেটা হয়তো বহু দূরে। এখন জুনিয়র টাইটারদের সাফল্য দেখে মনে হচ্ছে, খুব বেশি দূরে নয়। আজ যারা জুনিয়র টাইগার, আগামীতে তারাই হবে সিনিয়র টাইগার। তখন তাদের পক্ষে বিশ্বজয় করা মোটেই কঠিন হবে না। তবে শর্ত হলো, তাদের যত্ন করতে হবে, যত্নরাখতে হবে। আমাদের ক্রিকেট-প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু এই প্রতিভা খুব বেশিদিন আলো ছড়ায় না। তাদের প্রশিক্ষণ, সুযোগ-সুবিধা, প্রাকটিসের অভাব এবং বেশি বেশি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করার ব্যর্থতায় প্রতিভা হারিয়ে যায়। এদিকে নজর দিতে হবে। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাসার বিজয়ী জুনিয়র টাইগারদের প্রতি উপযুক্ত দৃষ্টি দেয়ায় ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আমরাও আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেবে। এক্ষেত্রে জুনিয়র টাইগারদের মধ্যে যোগ্যতমদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রিকেটের একজন আন্তরিক অনুরাগী। তার অনুরাগ, নির্দেশনা ও কার্যব্যবস্থার ফলে ক্রিকেট এতদূর এগিয়েছে, এটা ক্রিকেট অনুরাগীরা সবাই স্বীকার করে। এ উপলক্ষে তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানাই। ক্রিকেটের আরো বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন, এটা আমরা প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।