পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম থাকা নিয়ে অস্বস্তি বিরাজ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। যদিও ভোটার উপস্থিতি কম থাকা নিয়ে ‘ভোটারদের ফেসবুক চালানো, ঘুম থেকে দেরীতে ওঠা, বিএনপির সন্ত্রাসের ভয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়া, উন্নয়নের কারণে প্রত্যাশা কমে যাওয়া, ছুটির ফাঁদ’সহ আওয়ামী লীগের নেতারা এবং নির্বাচন কমিশন থেকে হরেক রকম যুক্তি দাড় করিয়েছেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশ নেয়া এবং ভোটের দিন কেন্দ্র পাহারায় ব্যাপক লোকজন থাকলেও দিন শেষে ভোট পড়ার সংখ্যা নিতান্তই কম হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। ভোট সম্পর্কে নেতিবাচক অপপ্রচারের কারণে বিএনপি নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা ভোট দিতে না আসলেও আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থনকরা কেন ভোট বিমুখ হলেন তার কারণ উদঘাটন করতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগ নেতারা ভোটারদের নির্বাচনবিমুখ হবার বিষয়ে বলছেন, ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও কেন ভোটাররা ভোট দিতে যায়নি তা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। নেতারা আরো বলেন, এতো উন্নয়ন ও সফলতার পরও ভোট দিতে ভোটারদের কেন এত অনীহা, মানুষ কেন ঘর থেকে বেরিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছে না, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নেতাকর্মীরাও কেন ভোট বিমুখ হয়ে যাচ্ছে এ বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং সমাধান করতে হবে।
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণে ভোটের হার ছিল ২৯ শতাংশ আর উত্তরে ২৫ দশমিক ৩। এরমধ্যে দক্ষিণে আতিকুল ইসলাম ১৪ দশমিক ৮৪ এবং শেখ তাপস ১৭ দশমিক ৩০ ভাগ ভোট পেয়েছেন। বেশিরভাগ কাউন্সিলররাও মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অল্প কয়েকজন কাউন্সিলর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পেয়ে পাশ করেছেন। কিন্তু এর চেয়ে বেশি কর্মী নির্বাচনী প্রচারণাতে একেক জন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। ভোটের দিন একেকটি কেন্দ্রের বাইরে দুই থেকে তিন’শ নেতাকর্মী কাজ করেছে কিন্তু দিন শেষে দেখা গেছে তিন হাজার ভোটারের মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ১৫০ থেকে ১৯০টি। কোথাও কোথাও ভোট পড়ার সংখ্যা ছিল ৫০ থেকে ৭০ এর মধ্যে।
ঢাকা দক্ষিণের ১ নং ওয়ার্ডে ৪৬৯৭৬ জন ভোটারের মধ্যে ৫৭১১ ভোট পেয়ে নির্বাচি হয়েছেন যা মোট ভোটের ১২.১৫ শতাংশ। ১২ নং ওয়ার্ডে ৩৪২১৪ জন ভোটারের মধ্যে মোট ভোট পড়েছিল ৯৬৩১টি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মামুনুর রশিদ শুভ্র ৩৯১০ টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। যা মোট ভোটের ১১.৪২ শতাংশ। ৯ নং ওয়ার্ডে প্রায় ২৫৩৯৬ মোজাম্মেল হক ২৭১০ টি ভোট পেয়ে পাশ করেছেন যা ভোটের ১০.৬৭ ভাগ। ৪ নং ওয়ার্ডে ৫৯৫৩৭টি ভোটের মধ্যে জয়ী হওয়া আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পেয়েছেন ৮১৬৫টি। যা ভোটের ১৩.৭১ শতাংশ। ৫ নং ওয়ার্ডে মইজুদ্দিন ৪৫৫৪৮ টি ভোটের মধ্যে ৫৫৩৬টি ভোট পেয়েছেন। মোট ভোট পড়েছিল ১১০১১টি। শতাংশ হিসেবে মইজুদ্দিন ১২.১৫ ভাগ ভোট পেয়েছেন।
বেশিরভাগ ওয়ার্ডের চিত্র একই রকম। মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোটের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলররা। দুই সিটিতে ভোট পড়েছে ২৫ থেকে ২৯ শতাংশ। মেয়র ও কাউন্সিলররা ভোটের ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ ভোট পাওয়ায় ৮৩ থেকে ৮৬ শতাংশ ভোটারের গণতন্ত্রে অংশ না নেয়া আওয়ামী লীগের উন্নয়নে মানুষের অংশগ্রহণ না করার সামিল বলে মনে করছে দলটির হাই-কমান্ড। তাই নানা ভাবে এটিকে বিশ্লেষণ করে উত্তোরণের উপায় খোঁজা হবে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের উপর সাধারণ জনগণসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনাস্থার প্রমাণ। ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকা দলীয় নেতাকর্মীরা যেহেতেু ধরেই নিয়েছিলেন তাদের দল জিতবেই, ফলে নিজের ভোটটিও প্রয়োগ করেননি। এটা নির্বাচন কমিশনের ওপর ভোটারদের অনাস্থা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ইনকিলাবকে বলেন, কম ভোট পড়ার বিষয়ে দলীয় মূল্যায়ন হচ্ছে। কেন ভোটাররা আসেনি এবং কিভাবে তা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। কম ভোট পড়ার জন্য মানুষের কর্মব্যস্তততা, আধুনিক ধ্যান-ধারণার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভোটারদের কম উপস্থিতি গনতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম গতকাল বলেন, বিএনপি-জামায়াত শক্তিকে ভয় পাই না। ভয় একটাই, মানুষ কেন ঘর থেকে বেরিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছে না। আমাদের এত উন্নয়ন ও সফলতার পরও ভোট দিতে ভোটারদের কেন এত অনীহা। তিনি বলেন, আমাদের ভুল নেই তা বলবো না। সব সরকারের ভুল আছে, আমাদেরও আছে। আমি জানতে চাই কেন মানুষের ভোট দিতে এত অনীহা। কোথায় আমাদের ঘাটতি আছে সেটা দেখতে হবে। না হলে আমরা ভবিষ্যতে ভালো থাকবো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এমনিতে নির্বাচন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণার কারণে তারা ভোট দিতে যায়নি। তারা মনে করেছে ভোট দিলেও আওয়ামী লীগের মেয়র কাউন্সিলররা পাশ করতে না দিলেও পাশ করবে। আর আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরাও ভোট দিতে যায়নি একই কারণে। তাদের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ তো পাশ করবেই। মানুষের এই ধরণের চিন্তা ধারা পরিবর্তন করতে সামনে কষ্ট হয়ে যাবে।
তবে এর আগে নির্বাচনের ভোটারদের কম নিয়ে নানা যুক্তি সামনে দাড় করেয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বাংলাদেশের ১০০ বছরের নির্বাচনের ইতিহাসে এমন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আর কখনও দেখা যায়নি। ভোট চুরির সংস্কৃতি শুরু করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের সহিংসতার ভয়ে ভোটাররা কেন্দ্রে কম গিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দেয়া দরকার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম দেরি করে ঘুম থেকে ওঠায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম। বেলা বাড়লে তরুণ প্রজন্ম ঘুম থেকে উঠলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। ভোটকেন্দ্রে ভোটারের কম উপস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, অনেকে ঘরে বসে আরাম আয়েশ করেছেন, ফেসবুক ব্যবহার করেছেন তাই ভোটকেন্দ্রে যাননি।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।