পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতি একটা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বের কোনো দেশেই আমদানি-রফতানি সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমদানি-রফতানি কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কিছু সেক্টরে এর প্রভাব পড়েছে।’ তবে মন্ত্রী আশাবাদী, এ বছর শেষে এই সেক্টরগুলো আর পিছিয়ে থাকবে না। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের বার্ষিক কার্যক্রম প্রণয়ন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেছেন। অর্থনীতির খারাপ সময়ে আরেকটি দুঃখজনক সংবাদ হচ্ছে, আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়নসহযোগী চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় দেশটি বর্তমানে বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। অনেক রাষ্ট্র চীনের সাথে বিমান যোগাযোগ স্থগিত করেছে, চীনে অবস্থানরত ৩১২ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত আনার পর চীনফেরত বাংলাদেশি পাইলটদেরও অন্যান্য দেশ ভিসা দিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে চীনে এখনো অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার উদ্যোগ স্থগিত রাখতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, যারা চীন থেকে দেশে ফেরত আসতে চান, স্বজন ও দেশবাসীর স্বার্থেই এখন তাদের চীন থেকে দেশে না ফেরা ভালো। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে চীনে তার ভালো চিকিৎসা রয়েছে উল্লেখ করে সেখানেই চিকিৎসা নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অতএব, পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুমান করা খুব কঠিন কিছু না। অন্যান্য দেশের সাথে আমদানি-রফতানি এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে ইতোমধ্যে চীনের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। চীনা কাঁচামাল এবং যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরশীল দেশগুলোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গাড়ি নির্মাণ শিল্পে এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্পে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী দেশ হিসাবে চীনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চীন থেকে যন্ত্রাংশ সরবরাহে ঘাটতির কারণে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের কারখানায় হাইউন্ডাই গাড়ি তৈরি বন্ধ করে দিয়েছে। ফক্সওয়াগান ও বিএমডাবিøউ চীনে গাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ রেখেছে। বহু ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন এবং কম্পিউটার চীনে তৈরি হয়। অনেক ফোন এবং কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ তৈরি হয় চীনে। সেসব খাতেও নেতিবাচক প্রভাব অনিবার্য। এই স্বাস্থ্য সংকটের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে শেয়ার ও অর্থবাজারেও। চীনের তেল শোধনাগার সাইনোপেক অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি কমিয়ে দেওয়ার পর এক বছরের মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম বিশ্ববাজারে গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে। এসব সংবাদ চীনের অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ। দুঃসংবাদ তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশের অর্থনীতির জন্যও। অক্সফোর্ড ইকনমিক্স নামে একটি সংস্থা অনুমান করছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ২০২০ সালের প্রথম চার মাসে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার এক বছর আগের তুলনায় শতকরা ৪ ভাগ কম হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ০.২ শতাংশ কমবে। তবে তারা বলেছেন, এই পূর্বাভাস তখনই সঠিক হতে পারে, যখন চীন এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দ্রুত সক্ষম হবে। নাহলে অর্থনীতিতে এর সূদুরপ্রসারী প্রভাব হবে আরও মারাত্মক।
বাংলাদেশ প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার ৩৫ শতাংশই করে চীন থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় সুতা এবং গার্মেন্টের কাপড়। এরপর আসে বিপুল পরিমাণে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও খুচরা যন্ত্রাংশ। দেশের শিল্প উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি হয় চীন থেকে। বিশেষ করে ওষুধ শিল্পের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আসে চীন থেকে। করোনাভাইরাসের কারণে চীনের পরিস্থিতি এখন খুবই উদ্বেগজনক। সেখানে সব ধরনের শিল্প উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমাদের ওষুধ শিল্প সংকটে পড়তে পারে। আমাদের গার্মেন্ট খাতের পরিস্থিতিও একই রকম। বাংলাদেশ-চীন বার্ষিক আন্তবাণিজ্য পর্যায়ে বাংলাদেশ চীন থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। আড়াইশ থেকে তিনশ কোটি ডলার সমমূল্যের মতো পণ্য রফতানিও করে। এসব আমদানি-রপ্তানি বর্তমানে বন্ধের উপক্রম। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে প্রতিবছর এনবিআর ও কাস্টমসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে সরকার, যা এখন হুমকির মুখে। বাংলাদেশে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোতে শ্রমিক, কারিগরি সহায়তাকারী, প্রকৌশলীসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি চীনা নাগরিক কাজ করছেন। শুধু পদ্মাসেতু প্রকল্পেই কাজ করছেন প্রায় ১১০০ চীনা নাগরিক। এদের মধ্যে সম্প্রতি ছুটিতে দেশে গিয়েছিলেন ২৫০ জন। তাদের ফিরে আসার পর ১৪ দিন পর্যবেক্ষণ শেষ না হলে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে প্রকল্পের কাজ। ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত চীনের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা ছুটি নিয়ে দেশে গেছেন। আগামী মাসে তাদের ফেরার কথা। কিন্তু তারা সময়মতো ফিরতে পারবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে এসব মেগা প্রকল্পের কাজেও কিছুটা গতি কমে এসেছে। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে সংশ্লিষ্ট মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ সময়মতো শেষ করা সম্ভব হবে কিনা-এ নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছ। গত শুক্রবার পর্যন্ত চীনফেরত কারো দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত যদি এই ভাইরাসের সরাসরি আক্রমণ থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করতেও পারি, তারপরও এর প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারবো না। আমাদের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। বিশেষ করে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দীর্ঘায়িত হলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্ট সেক্টর সুতা ও কাপড়ের সংকটে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ শিল্পও। দ্রুত পরিকল্পনা করে সেই প্রভাব সংশ্লিষ্টরা কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, এখন সেটাই দেখার বিষয়। বাস্তবতা হলো, এখন পর্যন্ত অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় তেমন কোনো জোরালো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি।
শুধু অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতির ক্ষেত্রেই যে ধীর গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে তাই না, বরং, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেটা নিয়েও ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠছে। এমনকি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীনফেরতদের শরীরে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করার দাবি উঠেছে। সরকারের স্বস্তি হচ্ছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। তবে এই ভাইরাস চীনসহ বিভিন্ন দেশে যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে আশঙ্কা বেড়েই চলছে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৯৩ জন চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য আলাদা করে (কোয়ারেন্টাইনে) রাখা হয়েছে। আর ২০ চীনা নাগরিক আছেন পায়রা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে। কিন্তু বাকিদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের স্বাস্থ্য খাত সজাগ রয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের সব নৌ, স্থল ও বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং মেশিন বসানো হয়েছে। অধিক সতর্কতার জন্য চীনের উহান থেকে বাংলাদেশে আসা চীনা নাগরিকদের অন অ্যারাইভেল ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। চীনফেরত এক নারী যাত্রীর ফেসবুক লাইভ নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ উদ্ধৃত করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক সংসদে বলেন, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর যাত্রীদের পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। পাঁচ ঘণ্টা পর লিখে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গাফিলতি, অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে কিছু যাত্রী পরীক্ষা ছাড়াই বেরিয়ে গেছেন। চীনফেরত যাত্রীদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষার ব্যাপারে এ গাফিলতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় চীন থেকে আসা সব ধরনের যাত্রীর ওপর তীক্ষ্ণ নজরদারি করা জরুরি। ৩১২ জনকে ফিরিয়ে এনে সরকার তাঁদের ওপর নজরদারি বজায় রেখে যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে, বাকিদের ক্ষেত্রেও সেটি হওয়া উচিত।’ কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছে না, যা আমাদের দেশের জন্য ভয়ানক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। একজন মানুষও যদি তার শরীরে করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে প্রবেশ করে সুস্থদের সংস্পর্শে আসে তাহলে দ্রুত গতিতেই তা ছড়িয়ে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আশা করি, বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবেন না।
সার্বিক অর্থেই দেশের অর্থনীতি যে ভালো অবস্থানে নেই, অনেক আগে থেকেই তার ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের আর্থিক সক্ষমতা অনুসারে ব্যাংকের যে সংখ্যা থাকার কথা, তার চেয়ে অনেক বেশির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিপুল অংকের ঋণ দেওয়া হয়েছে যাকে-তাকে। এতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে দেশের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে অসাধু ঋণগ্রহীতারা। অন্যদিকে সরকারও বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোর আমানতে ঘাটতি তৈরি করছে। সরকারের গত দশ বছরে (২০০৯-২০১৯) বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলী ব্যাংক থেকে মোট ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে এবং ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে। এখনো ব্যাংকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা (১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩ কোটি) নিট ঋণ রয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক থেকে ৪৮ হাজার ৫৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা নিট ঋণ নিয়েছে। আর একটি খারাপ খবর হচ্ছে- সঞ্চয় পত্র বিক্রয়ের পরিমাণ ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ বছর সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে ৭৩ শতাংশ। সরকার আইন করে ৬১টি সংস্থার উদ্বৃত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে সঞ্চিত থাকা ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর আমানতে স্থিতির পরিমাণ আরো কমে যাবে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ সম্ভাবনা। আর আমাদের পুঁজি বাজারের ধসের খবর তো বেশ পুরানো, সেখানেও আপাতত আশার আলো দেখার সম্ভাবনা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে, জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু গড় আয় ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে ইত্যাদি। এসব বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদগণ বহুবার বলেছেন, ‘প্রবৃদ্ধি ও জিডিপি বৃদ্ধি মানেই দেশের উন্নতি নয়।’ উদাহরণ হিসেবে তারা ভারতের কথা উল্লেখ করছেন। ভারতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার ৭-৮% চলছে বহুদিন ধরে চলছে। কিন্তু ভারতের সেই অর্থনীতির বেলুন হঠাৎ ফুটো হয়ে গেছে। দেশটির অন্যতম থিংক ট্যাংক এনআইটিআই’র উপপ্রধান রাজীব কুমার গত বছরের শেষ দিকে বার্তা সংস্থা- এএনআইকে বলেছেন, ‘ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা নজিরবিহীন। ৭০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা সবচেয়ে সংকটে রয়েছে।’ বাংলাদেশের অর্থনীতির নেতিবাচকতা শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করছেন। এটা একটা ভালো দিক। কেননা, সমস্যা স্বীকার করার ফলে সংকট থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার চেষ্টা তরান্বিত হবে। তবে, একই সময়ে আমাদের অর্থনীতির জন্য চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নতুন আঘাত নিয়ে এসেছে। এই আঘাত মোকাবিলা করে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিকে নেতিবাচকতা থেকে বের করে আনার রাস্তা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তরগুলো প্রাইভেট সেক্টরের উদ্যোক্তাদের নিয়ে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, সেটাই প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।