চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইসলাম ধর্মই একমাত্র আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা অনেক নবী রাসূল পাঠিয়েছেন আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরে ইসলামের শিক্ষা দেওয়ার জন্য। নবী ও রাসূলের কাজ ছিল পথ হারা, আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানুষকে দাওয়াতের মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সা. পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর এই দাওয়াতের দায়িত্ব পালনের কর্মী হলেন নবীর ওয়ারিশ তথা আলেম ওলামারা। তাছাড়া সকল মুসলমানরই দায়িত্ব আল্লাহর দাওয়াত সবাইকে পৌঁছে দেওয়া। কেননা, হুযুরে পাক সা. বলেছেন, তোমরা যদি একটি আয়াতও শুনে থাক, তা অন্যের নিকট পৌঁছে দাও। সেই দাওয়াতের অনেকগুলো পদ্ধতির মাঝে কার্যকর একটি পদ্ধতি হলো ব্যক্তিগত দাওয়াত।
আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়ার অন্যতম মাধ্যম ব্যক্তিগত দাওয়াত। আল্লাহ তায়ালা বলেন: তার কথার চেয়ে আর কথা উত্তম যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, সৎ কাজ করে এবং ঘোষণা করে আমি মুসলমানদের একজন। ( সূরা ফুস্সিলাত : ৩৩)। এছাড়াও ব্যক্তিগত দাওয়াতে বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট থাকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: ১. ব্যক্তিগত দাওয়াতের সুযোগ বার বার উপস্থিত হয় এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কয়েকবার এ ধরণের সুযোগ আসে। ২. এতে কোন মেহনত ও কষ্টের তেমন প্রয়োজন হয় না। বরং অধিকাংশ সময় অন্যান্য কাজের সাথে এ কাজও হয়ে যায়। বাজারে যাওয়ার সময়, অফিসে যাওয়ার সময়, কোন দোয়া অনুষ্ঠানে অথবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে। ৩. এটা সামষ্ঠিক দাওয়াতের চেয়ে অনেক বেশি সহজ এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও এটা খুব কম খরছে আঞ্জাম দেওয়া যায়।
৪. ব্যক্তিগত দাওয়াতে আহবায়ক সব রকম আলোচনা-সমালোচনা থেকে মুক্ত হয়ে এক কেন্দ্রিক কথা বলতে পারে। তার কথার মাঝে কেউ ডিস্টার্ব করে না। ৫. দাওয়াতের এ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় সকল স্তরের দায়ী এতে অংশ নিতে পারে। অর্থাৎ দায়ী মূর্খ হোক বা শিক্ষিত তিনি তার যোগ্যতার আলোকে এবং তার সাথে মানানসই এমন ব্যক্তির নিকট দাওয়াত পৌঁছাতে সক্ষম। ৬. ব্যক্তিগত দাওয়াতে দায়ী তার আহবানকৃত ব্যক্তির মন-মানসিকতা সহজেই বুঝতে পারেন। ৭. যেহেতু ব্যক্তিগত দাওয়াত অনেকটা গোপনে হয়, তাই আহবায়ক সব ধরণের রিয়া থেকে মুক্ত। তার ভিতর ইখলাস কাজ করে। সে পদর্শনেচ্ছা থেকেও মুক্ত থাকে।
৮. ব্যক্তিগত দাওয়াতে নতুন নতুন পথ উন্মুক্ত হয়। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও তার দাওয়াতের পদ্ধতি প্রকাশের সুযোগ পায়। ৯. ব্যক্তিগত দাওয়াতের মাধ্যমে দায়ীর মধ্য থেকে হীনমন্যতা দূর হয়। ১০. এই দাওয়াতে স্বাধীন পরিবেশে যে কথাবার্তা হয় সেখানে মানুষ নিজের সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করতে যথেষ্ঠ স্বাধীনতা পায় এবং পারস্পরিত আলোচার মাধ্যমে তা দূর করে নেওয়া যায়।
১১. ব্যক্তিগত দাওয়াতের পথ কোন প্রতিকুল পরিবেশের কারণে বন্ধ হয়না। শাসক গোষ্ঠী একে যত বেশি দমানোর চেষ্টা এটা ততবেশি বেড়ে যায়। ১২. দাওয়াতে এই পদ্ধতিতে নবী রাসূলগণ তাদের দাওয়াতী মিশন শুরু করেন। তাদের সারা জীবনে দাওয়াতের এই পদ্ধতিই অনুসরণ করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: হে চাদরাবৃতকারী ! উঠুন, সতর্ক করুন, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন, (সূরা মুদ্দাস্সির ১-৩) ১২. ব্যক্তিগত দাওয়াতে দায়ী নিজকে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করার সুযোগ পান । আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। (সূরা মায়েদা: ৫৪)
১৩. ব্যক্তিগত দাওয়াতী কাজে দায়ী কোন প্রতিদান কামনা করেনা। তাই আহবানকৃত ব্যক্তির উপর এর প্রভাব অনেক বেশি কার্যকর। আল্লাহ তায়ালা বলেন: অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।(সূরা ইয়াসীন: ২১)
তাই আমি-আপনি যদি আমার-আপনার জায়গা থেকে ব্যক্তিগত দাওয়াত অব্যহত রাখি তবে সমাজ থেকে সকল পাপাচার একদিন দূর হতে বাধ্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দাওয়াতের পদ্ধতিগুলো আরো সহজ করে দিন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।