Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজেপি’র বিরুদ্ধে একাই লড়ছেন কেজরিওয়াল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৬:০৮ পিএম

কয়েকদিন পরেই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। দিন রাত এক করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লিতে তার অসম্ভব জনপ্রিয়তা থাকলেও তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে এবার কিছুটা বেগ পেতে হতে পারে তাকে। কারণ হচ্ছে বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদ ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, সাথে জোর প্রচারণা। একদিকে মোদি-শাহ, ৭০ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ২৪০ জন সাংসদ, দশজন মুখ্যমন্ত্রী, অন্য রাজ্য থেকে আসা কর্মীদল, মেরুকরণ, অন্যদিকে কার্যত একা কেজরিওয়াল।

গতকাল কেজরিওয়ালের রোড শোর পিছনে দেখা প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা মিছিল। আপ সদস্য ও সমর্থকদের। তার মধ্যে প্রচুর ব্যাটারি চালিত অটো, দিল্লিতে যাকে বলা হয় টোটো। গতবার আম আদমি পার্টির বাহন ছিল অটো, এ বার তা বদলে হয়েছে টোটো। ‘লাগে রহো কেজরিওয়াল’ গানের সঙ্গে হাততালি দিতে দিতে চলেছিলেন দলের কর্মী, সমর্থকরা। রীতিমতো বিশাল মিছিল। পাঁচ বছর আগে এই ধরনের প্রচারে বা আপের অফিসে দেখা মিলত দেশ এমনকি, বিদেশ থেকে আসা সমর্থকদের। বহুজাতিক সংস্থার চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে তারা এসেছিলেন কেজরিওয়ালকে জেতাতে। এ বার তারা কেউ নেই। নেই প্রশান্ত ভূষণ, দেবেন্দ্র যাদব, মায়াঙ্ক গান্ধী, সন্তোষ হেগড়ে, কুমার বিশ্বাসরা। গত পাঁচ বছরের সব চেয়ে বড় পরিবর্তন হল, আপ মানে এখন শুধুই কেজরিওয়াল। দেশের এক নেতা বা নেত্রী শাসিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপও একই সারিতে দাঁড়িয়ে।

গত সাত-আট বছর ধরে ভোট এলেই রোড শো হয়ে দাঁড়িয়েছে জনসংযোগের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কয়েক ঘন্টার মধ্যে হাজার হাজার লোকের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ। তবে এখানে নেতা বা নেত্রীর ভাষণ সচরাচর থাকে না। শুধু তাদের ক্ষণিকের দর্শন মেলে। কেজরিওয়ালের দর্শনের জন্য দৌড় লাগিয়েছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের অমিতাভ। বাজারে নিজের দোকান ফেলে। কেন দৌড় লাগালেন? প্রশ্নের জবাব আসতে দেরি হল না। আবেগতাড়িত অমিতাভ বললেন, ‘গরিবদের জন্য প্রচুর করেছেন কেজরিওয়াল। বিদ্যুৎ, জলের জন্য তো পয়সা লাগে না। মহল্লা ক্লিনিকে চিকিৎসা, ওষুধ ফ্রি। আমার ছেলে সরকারি স্কুলে পড়ে। একবার গিয়ে দেখে আসবেন, সেই স্কুলকে কী বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাকে ভালো করে দেখব না?’ পাশে দাঁড়ানো জনা পাঁচেক লোক সম্মতিসূচক মাথা নাড়তে থাকলেন। গরিব মানুষের এই মনোভাব হল কেজরিওয়ালের শক্ত জমি, যার জোরে তিনি তৃতীয়বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। যার জোরে বলতে পারছেন, ‘৭০ বছরে প্রথমবার কোনও সরকার শুধু নিজের সাফল্যের প্রচার করছে ভোটে।’

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি কি ঠিক? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও সন্দেহ নেই, শুধু সাফল্যের প্রচার দিয়েই শুরু হয়েছিল কেজরিওয়াল তথা আপের প্রচার। পুরোপুরি ইতিবাচক। কিন্তু বিজেপি দিল্লিতে মেরুকরণের লক্ষ্যে যতই সুর চড়িয়েছে, ততই তার প্রভাব পড়েছে জনমানসে, ততই বদলে গিয়েছে কেজরিওয়ালের প্রচারের ধরণ. কথাবার্তাও। যার পরিষ্কার ছবি দেখা গেল, বুধবার রাতে কেজরওয়ালের নির্বাচন কেন্দ্র নয়াদিল্লিতে। দিল্লি জুড়ে প্রচারের পর নিজের কেন্দ্রে এসেছেন কেজরিওয়াল। সামনে ঠাসা ভিড়। মঞ্চে উঠতেই বিশাল মালা পরানো হল তাকে। হাতে ধরিয়ে দেয়া হল গদা। যা শোভা পায় রামভক্ত হনুমান বা বজরঙ্গবলীর হাতে। গদা ওপরে তুলে ধরলেন কেজরিওয়াল। তার কথায় এখন হামেশাই উঠে আসছে হনুমান চালিশার কথা। তিনি বুধবারও বলেছেন, ‘আমি হনুমান চালিশা পড়ি। মন শান্ত হয়। আমি তো বিজেপি নেতাদের বলব, হনুমান চালিশা পড়তে। পড়লে তাঁরা কুকথা বলা বন্ধ করবেন।’ এমনকী কেজরিওয়ালের মুখে এখন উঠে আসছে শাহিনবাগের কথাও। তিনি বলছেন, ‘বন্ধ রাস্তা খুলে দিন অমিত শাহ। চাইলে তিনি পনেরো মিনিটেই তা করতে পারেন। আধঘন্টায় যে জায়গায় যাওয়া যেত, রাস্তা বন্ধ থাকায় স্কুল বাস, অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে সব ধরনের বাহন যেতে সময় লাগছে তিন ঘন্টা।’

বোঝা যাচ্ছে, বিজেপির প্রচারের জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছেন কেজরিওয়াল। নিজের সাফল্যের বাইরে গিয়ে বজরঙ্গবলীর গদা হাতে তুলতে হচ্ছে। নয়াদিল্লির জনসভায় এসেছিলেন, বিজেপির সমর্থক রমেশ। বরাবর তার ভোট পড়ে পদ্মে। কেজরিওয়ালের হাতে গদার প্রসঙ্গ তুলতেই তার জবাব, ‘লড়াই অত সহজ নয়। বিজেপির প্রচার গতি পেতেই দেখুন কী অবস্থা হয়েছে। হাতে হনুমানের গদা, মুখে হনুমান চালিশা। কেজরিওয়ালের হলটা কী? এই প্রথম রীতিমতো কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়েছেন কেজরিওয়াল। কথাটা মিলিয়ে নেবেন।’

একদিকে সংঘবদ্ধ বিজেপি’র রাজনৈতিক মেরুকরণ, অন্যদিকে কার্যত একা কেজরিওয়াল। এরপরেও দিল্লি দখলের লড়াইয়ে যদি জিততে পারেন এই ছোটখাট চেহারার আপ নেতা, তা হলে তার রাজনৈতিক উচ্চতা বেড়ে যাবে অনেক গুণ। সূত্র: ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ