Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাসার ‘ইকোস্ট্রেস’ দেখাল কখন, কী ভাবে গাছের ঘুম ভাঙে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৫:৩৬ পিএম

সারা রাত ঝিমিয়ে থাকার পর ভোরে বিভিন্ন এলাকায় দিনের কোন সময়, কী ভাবে ঘুম ভাঙে গাছেদের, শুরু করে খাবার বানানোর তোড়জোড়, এবারই প্রথম মহাকাশ থেকে তা দেখাল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা নাসার ‘ইকোস্ট্রেস’। দেখা গেল আমাদের মতো গাছেরাও কেউ কেউ কর্মঠ, তারা সকালে উঠে। কেউ অলস, ধীরে সুস্থে দেরি করে উঠে।

ইকোস্ট্রেসের মাধ্যমে জানা গেছে, আগে জেগে উঠবে নাকি পরে, গাছেদের সেই অভ্যাসটা নির্ভর করে তারা কোন এলাকার বাসিন্দা, তার উপর। কোনও একটি এলাকায় গাছেরা সকলেই আর্লি রাইজার। আবার কোনও কোনও এলাকায় তুলনায় দেরিতে ঘুম ভাঙে গাছেদের। আমাদের যা আগে জানা ছিল না। এর ফলে, বিভিন্ন ধরনের বীজ রোপনের সময় কৃষকদের অনেক আগেভাগে বলে দেয়া যাবে সেই এলাকার গাছগুলোর কতটা পানি ও বিশ্রামের প্রয়োজন। সেগুলো কতটা সূর্যের আলো আর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস চাচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ অনেক আগেই হিসাব করে বলে দেয়া যাবে। বলে দেয়া যাবে ফসলের গুণমানও। তাতে লাভবান হবেন কৃষকরাও।

যেটি গাছেদের এই ঘুম-রহস্য উদঘাটন করেছে, সেটির পুরো নাম- ‘ইকোসিস্টেম স্পেসবোর্ন থার্মাল রেডিওমিটার অন স্পেস স্টেশন (ইকোস্ট্রেস)’। নাসা এটিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছিল ২০১৮-র জুনে। মহাকাশ থেকে ইকোস্ট্রেস নজর রেখেছিল আমেরিকা ও কানাডার সীমান্তে একটি সুবিশাল হ্রদ ‘লেক সুপিরিয়র’ আর তার সংলগ্ন এলাকায়। ইকোস্ট্রেস দেখেছে, লেক সুপিরিয়র আর তার গা ঘেঁষা এলাকাগুলির গাছেদের ঘুম ভাঙে সবার আগে। সকাল ৭টায়। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই। নিয়মিত। কোনও দিন কোনও পরিস্থিতিতেই গাছেদের সেই রুটিন বদলায় না। লেক সুপিরিয়র থেকে একটু দূরে থাকা গাছেরা সকালে ঘুম থেকে ওঠে ৮টায়। আর তার চেয়েও দূরে থাকা গাছেদের ঘুম ভাঙে সকাল ৯টায়।

দেখা গিয়েছে, কাছেপিঠে হ্রদ বা জলাশয় থাকলে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে জেগে উঠতে চায় গাছ। নেমে পড়তে চায় বেঁচে থাকার জরুরি লড়াইয়ে। শুরু করে দেয় রান্নাবান্নার তোড়জোড়। জলাশয় ততটা কাছেপিঠে না থাকলে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে উঠতে আগ্রহ দেখা যায় না গাছেদের মধ্যে। তবে রাতে আমরা যেমন ঘুমাই, গাছেরা কিন্তু সেই ভাবে ঘুমায় না। বলা যেতে পারে, রাতে গাছ ঝিমায়। অনেকটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব!

গাছের ভিতরেই থাকে ‘অ্যালার্ম ক্লক!’ যাকে বলা হয়, ‘প্ল্যান্ট সারকাডিয়ান রিদম্‌স’। এটি আদতে একটি কম্পন। তৈরি হয় গাছের ভিতরেই। সেই ঘড়িই গাছকে জানিয়ে দেয়, আশপাশে এখন কোন ঋতু। জানিয়ে দেয়, শাখায় শাখায় ফুল ফোটানো বা ফল ধরানোর সময় এসে গিয়েছে। এই রিদম্‌সই গাছেদের জানিয়ে দেয়, বেলা পড়ে আসছে বা সন্ধ্যা নেমে এল। জানায় রাত গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। বা ভোর হয়ে আসছে অথবা সকাল হয়ে গেছে!

গাছের রান্নাবান্নাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, সালোকসংশ্লেষ বা ‘ফোটোসিন্থেসিস’। গাছ সেই প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে পানি আর কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ভেঙে তৈরি করে গ্লুকোজ আর অক্সিজেন। গ্লুকোজ গাছের আনাজপাতি, শাকসব্জি। যা বদল গিয়ে তৈরি হয় ‘অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট (এটিপি)’। গাছের খাবার। তার টিকে থাকার যাবতীয় শক্তি। সঙ্গে তৈরি হয় অক্সিজেনও। সেটা বর্জ্য। লাগে না বলে গাছ সকালে সেটা পরিবেশে ছেড়ে দেয়।

সেই রান্নাবান্নার সময় পানির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে সমস্যা হয় গাছেদের। তখন তারা ‘ঘামতে’ শুরু করে। আর সেই ভাবেই শরীর থেকে বাড়তি জল বের করে দেয় গাছেরা। পাতায় থাকা অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে। ঘামলেই শরীর জুড়িয়ে আসে গাছেদের। কিছুটা আরাম হয়! বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয়, ‘এভাপোট্রান্সপিরেশন’।

গাছেদের পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন খুব সাহায্য করেছে, করে চলেছে ইকোস্ট্রেসকে। কারণ, সারা দিনে বেশ কয়েক বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। তাই তারই মধ্যে থাকা ইকোস্ট্রেস পৃথিবীর একই এলাকার উপর সারা দিন ধরে নজর রাখার সুযোগ পায়। ফলে, ইকোস্ট্রেসের পাঠানো তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে দিনভর রাতভর গাছেদের আচার, আচরণ বোঝার কাজটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের। সূত্র: টেক এক্সপ্লোরিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ