পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ (জুলাই-ডিসেম্বর) মাসে বাণিজ্য ঘাটতির আকার দাঁড়িয়েছে ৮২ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার অংক দাঁড়ায় ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি। জানুয়ারিতেও নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এর মধ্য দিয়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে রফতানি বাণিজ্যের এই ভারসাম্যহীনতা অব্যাহত থাকলেও এ থেকে উত্তরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ২ হাজার ৭০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার আমদানি ব্যয়ের বিপরীতে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৭৮০ কোটি ডলার বা ৪২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে রফতানি কমেছে ৫.৮৯ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ২.৭২ শতাংশ। পদ্মাসেতুসহ মেগাপ্রকল্পগুলোর জন্য আমদানিকৃত কাঁচামালের হিসাব বাদ দিলে রফতানি বাণিজ্যের পাশপাশি মূলধনী কাঁচামাল আমদানির হারও বহুলাংশে কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ নয়। তবে বৈধ পথে রেমিটেন্স ট্রান্সফারের উপর ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনার সুফল হিসেবে রেমিটেন্স প্রবাহে এখনো ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।
রফতানি বাণিজ্যে ঘাটতি ক্রমবর্ধমান হারে অব্যাহত থাকার সাথে সাথে রাজস্ব আহরণেও অস্বাভাবিক ঘাটতি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার ধারা অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেখানে সরকার অব্যাহতভাবে দেশি-বিদেশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ, বাণিজ্য বহুমুখীকরণ এবং রফতানি বাজার বিস্তৃত করার কথা বলছে, সেখানে বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলেও বাস্তবে তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। অর্থবছরের প্রথম মাসে রফতানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ শতাংশ হারে যাত্রা শুরু করলেও দ্বিতীয় মাস থেকে নিম্নহারের যাত্রা সপ্তম মাসে ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশি-বিদেশি অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বেশ কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতির দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতা সম্পর্কে যেসব সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা যাই হোক বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং রাজস্ব আয়ের ঘাটতিসমূহ দূর করা অসম্ভব ছিল না। প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা এখনো অসম্ভব নয়।
অস্বাভাবিক হারে ঋণখেলাফ, কু-ঋণ, ব্যাংক জালিয়াতির মধ্য দিয়ে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর অনিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছে। বছরব্যাপী শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক ধস, মূলধন হারানোসহ লেনদেনের খরা শেষে বর্তমানে শেয়ারবাজারে এক প্রকার উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ নানাবিধ উদ্যোগের পরও শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ও আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ে অস্বাভাবিক ঘাটতি সরকারের উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। সরকারি ব্যয়ে ব্যাংকিং সেক্টরের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হওয়ায় তফশিলি ব্যাংকগুলোর বেসরকারি বিনিয়োগ তথা ঋণপ্রবাহে ভাটা পড়েছে। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগই হচ্ছে অর্থনীতির মূল প্রাণশক্তি। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ চলতি অর্থবছরে গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। কোনো তেজি বা ইতিবাচক অর্থনীতিতে এটি অস্বাভাবিক। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে আত্মম্ভরিতাপূর্ণ কথাবার্তা বললেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রাজস্ব আয় এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ধারাক্রমে কোনো ইতিবাচক খবর নেই। শুধুমাত্র জিডিপির পরিসংখ্যানগত হিসাব-নিকাশ নিয়ে রাজনৈতিক গলাবাজি চলছে। অব্যাহতভাবে অর্থপাচার বেড়ে চলেছে। গার্মেন্ট কারখানার মালিকরা যেমন পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, একইভাবে কৃষকরা উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য থেকে বঞ্চিত হলেও সাধারণ ভোক্তারা ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছেন। এভাবে দারিদ্র্য বেড়ে যাচ্ছে। সর্বত্র যেন সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাব দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন অংশীদার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, ব্যাংকিং সেক্টরের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ভোটের প্রতি জনগণের আস্থা হারানোর মত কৃষি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব খাতের অংশীজনদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিকে টেনে তোলা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।