Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের হিন্দুত্ববাদী বন্দুকবাজ আপের সদস্য, দাবি পুলিশের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৪:৩৯ পিএম

দিল্লির জামিয়া মিলিয়ায় সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে যে হিন্দুত্ববাদী বন্দুকবাজ হামলা চালিয়েছিল, সে আম আদমি পার্টির (আপ) সদস্য বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের এই দাবির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন দল আপ।

দিল্লি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি পুলিশকেও ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করে আপ নেতৃত্ব বলেন, পুলিশকে দিয়ে মিথ্যে কথা বলিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপি।

গত সপ্তাহে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রদের মিছিলে হামলা চালিয়েছিল এক বন্দুকবাজ। গুলিতে আহত হয়েছিলেন এক ছাত্র। অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশের সামনেই কপিল গুজ্জর নামে ওই বন্দুকবাজ ছাত্রদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধেয়ে যায়, কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তবে গুলি চালানোর পরে কপিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, গুলি চালানোর সময় কপিল একাধিকবার ‘জয় শ্রীরাম’ বলেছিল। শুধু তাই নয়, বলেছিল, ‘ভারতে কেবল হিন্দুদের কথা চলবে। অন্য কারও কথা নয়।’ পরে দেখা যায়, রাস্তায় নামার আগে হাতে বন্দুক নিয়ে ফেসবুকে লাইভও করেছিল কপিল। সেখানেও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথা বলেছে সে। শাহিনবাগ, জামিয়া মিলিয়াতে আন্দোলনকারীদের ‘দেখে নেয়া’র হুমকিও দিয়েছে। গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের পক্ষেও সওয়াল করেছে।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বর্তমান ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির যে জোয়ার দেখা দিয়েছে, কপিলের কথা এবং আচরণে তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। বস্তুত, কপিল গুলি ছোড়ার দুই দিন আগে বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ‘গদ্দার’দের গুলি করার হুমকি দিয়েছিলেন।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসি-র নামে কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের অবমাননা করছে বলে অভিযোগ। ছবিতে সে কথাই বলছেন জামিয়া মিলিয়ার ছাত্ররা। তাদের আন্দোলন সংবিধানকে বাঁচানোর।

কপিল যতই হিন্দুত্ববাদী কথা বলুক, মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশ দাবি করেছে, বন্দুকবাজ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপের সদস্য। কয়েকটি ছবি দেখিয়ে প্রকাশ্যে এই দাবি করা হয়েছে দিল্লি পুলিশের তরফ থেকে। পরে পুলিশের দেখানো ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভাইরাল হয়ে যায়। বিজেপি দিকে দিকে প্রচার করতে শুরু করে, জামিয়ার বন্দুকবাজ আপের সদস্য।

আপ তো বটেই, কপিলের পরিবারও দিল্লি পুলিশের এই দাবি অস্বীকার করেছে। কপিলের বাবা জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় আপ যখন প্রচারে এসেছিল, সে সময় সাদা-নীল টুপি পরেছিলেন পাড়ার সকলেই। কপিল এবং তার বাবাও পরেছিলেন। কিন্তু তারা কখনও আপে যোগ দেননি। বরং কপিলের বাবার দাবি এক সময় মায়াবতীর দল বিএসপি-র হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরে আর কখনও সরাসরি রাজনীতি করেননি। ইদানীং, বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিলেন তারা। বিজেপির প্রার্থীকে মালা দিয়ে সম্মানও জানিয়েছেন।

কপিলের বাবার এই বক্তব্যকেই হাতিয়ার করেছে আপ। দলের নেতা এবং সাংসদ সঞ্জয় সিংহের অভিযোগ, ‘বিজেপি বুঝে গিয়েছে, দিল্লি নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে। তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুলিশকে দিয়ে মিথ্যে বলিয়ে শেষ মুহূর্তে আপকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ ভাবে মিথ্যের রাজনীতি করে আপকে হারানো যাবে না।’

দিল্লির শাসক দল আপ হলেও রাজ্যের পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ, পুলিশের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় সরকার। বস্তুত এর আগেও দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে বিজেপির কথায় চলার একাধিক অভিযোগ উঠেছে। কিছু দিন আগে হিন্দুত্ববাদীরা আক্রমণ চালিয়েছিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু পুলিশ সাংবাদিক বৈঠক করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল, তাদের অধিকাংশই বামপন্থি ছাত্রছাত্রী। ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে যাদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, পুলিশ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, তারাই কী ভাবে আক্রান্ত হলেন?

মঙ্গলবার পুলিশের দাবি শোনার পরেও নাগরিক সমাজে একই প্রশ্ন উঠেছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং সমাজকর্মী আশিস গুপ্তের বক্তব্য, ‘দিল্লি পুলিশ বার বার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে। দেখা যাচ্ছে, তারা খোলাখুলি ভাবে বিজেপির হয়ে সওয়াল করছে। এতে পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে।’ সূত্র: এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ