Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এক্সকেভেটর মাটি কাটায় ঝুঁকিতে ২শ’ পরিবার

মো. মোজাম্মেল হক, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের ফেলু মোল্লার পাড়া গ্রামে অবৈধভাবে এক্সকেভেটর (খনন যন্ত্র) দিয়ে জোরপূর্বক মাটিকাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে ওই গ্রামটি বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জমির মালিক ও স্থানীয়রা একাধিক বার বাঁধা দিয়েও মাটি খেকোদের রোধ করতে পারেনি।
স্থানীয় ফরমান শেখ জানান, ২ সপ্তাহ আগে আমার নিজের জমিতে আমাকে না জানিয়ে স্থানীয় বেলায়েত, খোকন, ফারুক, ওহাবসহ কয়েকজন খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। আমি বাঁধা দিলে তখন তারা চলে যায়। আবার দুইদিন ধরে আমার জমিতে তারা জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কোন বাঁধাই তারা মানতে নারাজ।
স্থানীয় আ. সালাম মোল্লা, রহমান খানসহ অনেকেই জানান, গত বছর বর্ষায় ভয়াবহ নদী ভাঙন হয়। এ অবস্থায় গ্রামটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে। এই শুষ্ক মৌসুমে এখানে মাটি খনন করা হলে আগামী বছর হয়তো এই গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতির মধ্যে গ্রামের অন্তত ২শ’ পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলে অবৈধভাবে মাটি খনন করা হচ্ছে। এটা বন্ধ না হলে আগামী বর্ষায় গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারি খাস জমি ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমিতে একাধিক খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে লোড করা হচ্ছে। এর মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরে মূল পদ্মা নদী। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে গেলেও বর্তমানে সেখানে হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ। এখান থেকে কাটা মাটি ট্রাকে করে পরিবহনের জন্য করা হয়েছে অস্থায়ী রাস্তা। এ সময় সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকটি ট্রাক দ্রæতগতিতে পালিয়ে যায়। আটক করা হয় দুইটি খনন যন্ত্র ও একটি ট্রাক। গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কিয়ামউদ্দিন পাড়া গ্রামের জয়নাল মোল্লার ছেলে ফারুক মোল্লা (৩০), উত্তর দৌলতদিয়া ৬নং ওয়ার্ডের তারক আলীর ছেলে বেলায়েত মন্ডল (৫০), সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া গ্রামের ইমরান হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৩), রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর খানখানাপুর গ্রামের আক্কাছ মোল্লার ছেলে লিটন মোল্লা (২৭), মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার বর্ধমানকান্দি গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল আওয়াল (২২), ফরিদপুর সদর উপজেলার আড়োয়াডাঙ্গি গ্রামের ইউছুফ খানের ছেলে জসিম খান (৩১)। এদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেয় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন।
দন্ডপ্রাপ্ত বেলায়েত হোসেন দাবি করেন, জমির মালিকদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাটি কিনে তা খননযন্ত্র দিয়ে কাটা হচ্ছিল। জোরজবরদস্তি করে কারো মাটি কাটা হয়নি। তিনি আরো বলেন, গত বর্ষায় জমিজমা ভেঙে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন তারা জমির মাটি বিক্রি করে কিছু নগদ টাকা হাতে পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরকারি খাস জমি অথবা মালিকানাধীন জমিতে ইচ্ছে মতো মাটিখনন করা আইনত অপরাধ। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে খনন কাজ বন্ধ করাসহ একটি ট্রাক, দুইটি এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) জব্দ করা হয়। এছাড়া এই বেআইনী কাজে জড়িত থাকার দায়ে ৬ জনকে দন্ড প্রদান করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাটি


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ