চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
তিনি যে সমস্ত শব্দ ও বাক্য পছন্দ করতেন না তার অন্যতম হচ্ছে, ‘খাবুছাত নাফসী’ অর্থাৎ আমার চরিত্র নোংরা হয়ে গেছে। এর পরিবর্তে তিনি ‘লাকিসাত নাফসী’ বলার উপদেশ দিয়েছেন। উভয় বাক্যের অর্থ কাছাকাছি। তা হচ্ছে অভ্যাস ও চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। নাবী (সাঃ) খাবুছ শব্দটি প্রয়োগ করা অপছন্দ করেছেন। কারণ তা কদর্যতা ও নোংরামীর মাত্রাতিরিক্ত অর্থ প্রকাশ করে। তিনি আঙ্গুর ফলকে কারাম বলতেও নিষেধ করেছেন। কারণ কারাম হচ্ছে মুমিনের গুণ। তিনি কাউকে এ কথা বলতে নিষেধ করেছেন যে, ‘মানুষেরা ধ্বংস হয়ে গেছে’। নাবী (সাঃ) বলেন- যে ব্যক্তি এরূপ বলল, মূলতঃ সেই যেন লোকদেরকে ধ্বংস করে দিল। এমনি ‘লোকেরা নষ্ট হয়ে গেছে, যামানা খারাপ হয়ে গেছে’ বলাও অপছন্দনীয়। তিনি অমুক অমুক তারকার কারণে বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি বলতেও নিষেধ করেছেন। আর তিনি ‘আল্লাহ্ যা চান’ এবং ‘তুমি যা চাও’ বলতেও নিষেধ করেছেন। রসূল (সাঃ) আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল সে শিরক করল। এমনি শপথের মধ্যে এ কথাও বলা নিষিদ্ধ যে, সে যদি এমন করে তাহলে ইহুদী হয়ে যাবে। তিনি বাদশাহকে মালিকুল মুল্ক তথা শাহানশাহ বা রাজাধিরাজ বলতে নিষেধ করেছেন। চাকর ও খাদেমকে আমার বান্দা বা আমার বান্দী বলাও নিষিদ্ধ। বাতাসকে গালি দেয়া, জ্বরকে (রেসূকে) দোষারোপ করা, মোরগকে গালি দেয়ার ব্যাপারেও নিষিদ্ধতা বর্ণিত হয়েছে।
আইয়্যামে জাহেলীয়াত তথা অন্ধকার যুগের সকল আহবান ও শ্লোগানকে তিনি বর্জন করার আদেশ দিয়েছেন। মুসলিমদেরকে গোত্র, বংশ এবং জাতীয়তাবাদের দিকে আহবান করতে এবং এর ভিত্তিতে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন। এমনি মুসলিমকে গালি দেয়া, তিনজন এক সাথে থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দুইজন মিলে গোপনে আলাপ করা এবং মহিলাকে তার স্বামীর কাছে অন্য মহিলার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি হে আল্লাহ! তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা কর- এইভাবে দু’আ করতে নিষেধ করেছেন এবং আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে দৃঢ়তার সাথে চাওয়ার আদেশ করেছেন। তিনি বেশী বেশী শপথ করা, কাওসে কাযাহ (রংধনু) বলা, আল্লাহর চেহারার উসীলায় কিছু চাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বিনা প্রয়োজনে কোন লোককে এ কথা জিজ্ঞেস করতে নিষেধ করেছেন যে, কেন সে তাঁর স্ত্রীকে প্রহার করেছে। তবে প্রয়োজন বশত জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। আমি পূর্ণ রমযান মাস রোজা রেখেছি এবং পূর্ণরাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছি- এ কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সমস্ত কাজ (সহবাস বা অন্যান্য বিষয়) হয় তা মানুষের মাঝে বলে বেড়ানো নিষিদ্ধ। যেমনটি করে থাকে নির্বোধ ও নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা। আরও যে সমস্ত অপছন্দনীয় শব্দ লোকেরা উচ্চারণ করে থাকে তার মধ্যে এও রয়েছে যে, তারা ধারণা করে থাকে, তারা বলে থাকে, তারা আলোচনা করে থাকে ইত্যাদি।
আমি, আমার, আমার নিকট ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করা থেকে সতর্ক থাকা উচিৎ। কেননা এই তিনটি শব্দ বলার কারণেই ইবলীস, ফেরাউন এবং কারুন ধ্বংস হয়েছে। ইবলীস বলেছিল-‘আমি তার (আদম) থেকে শ্রেষ্ঠ। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে। আর তাঁকে সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে’। (সূরা আরাফ-৭:১২)। ফেরাউন বলেছিল-‘মিশরের রাজত্ব কি একমাত্র আমার নয়?’। (সূরা যুখরুফ-৪৩:৫১)। কারুন বলেছিল- ‘এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছি’। (সূরা কাসাস-২৮:৭৮)।
‘আমি’ শব্দটি সবচেয়ে অধিক সুন্দর হয়ে ফুটে উঠেছে ঐ বান্দার কথার মধ্যে, যে বান্দা বলেছিল- ‘আমি অপরাধী, পাপী, অপরাধ স্বীকারকারী ক্ষমাপ্রার্থী একজন বান্দা’’। ‘আমার’ শব্দটিও খুবই সুন্দর রূপে ব্যবহৃত হয়েছে ঐ বান্দার কথায়, যে বলেছিল- ‘গুনাহ, অপরাধ, অভাব, দারিদ্র এবং হীনতা এ সবের সবই আমার মধ্যে রয়েছে’। এমনি ‘আমার নিকট’ কথাটিও নিম্নের দু’আয় অতি সুন্দরভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘হে আল্লাহ্! তুমি আমার অসতর্কতা বশতঃ কৃত গুনাহ, অজ্ঞতা বশতঃ অপরাধ, আমার কাজের ক্ষেত্রে সীমালংঘন এবং তুমি আমার ঐ সমস্ত অপরাধও ক্ষমা করে দাও যে সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক অবগত আছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমার উদ্দেশ্যমূলক, হাসি-ঠাট্টা প্রসূত, ভুলবশত এবং ইচ্ছাকৃত সকল গুনাহ্ মা’ফ করে দাও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।