পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চীনে নব আবির্ভূত ব্যাধি করোনাভাইরাস যা চীনের ‘গ্রেট ওয়াল’ টপকিয়ে বিশ্বব্যাপি মহামারীর আকার নিয়েছে। বিশ্ববাসী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত খবর মতে, চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা প্র্রায় ছয় হাজার। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। চীন ছাড়া, বিভিন্ন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ জন। লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে, তখন এই তথ্য ঠিক থাকবে না, অনেক বেড়ে যাবে। কারণ, এই ব্যাধিটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। আক্রান্ত রোগী মৃত ও দেশের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ব্যাধি এতই সংক্রমিত যে, রোগীর সেবাকারীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। সর্বোপরি এই ভাইরাস নিরাময়ী ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি। বিজ্ঞানীরা এর নিরাময়ী ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। তাতে সফল হবেন কি-না তা বলা কঠিন। সফল হলেও কবে হবেন তার কোন নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নেই। ইতোমধ্যেই প্রাণহানী ও আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে এবং এটিই হতে পারে এই শতকের শ্রেষ্ঠ ট্র্যাজিডি। বিষয়টি এখন টক অব দি ওয়ার্ল্ডে পরিণত হয়েছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির বিস্তার রোধে গত ২৭ জানুয়ারি বেইজিংয়ে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার প্রধান। সে সময় চীনা প্রেসিডেন্ট করোনা ভাইরাসকে ‘শয়তান’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, চীনের আত্মবিশ্বাস রয়েছে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস। উপরন্তু চীন থেকে বিভিন্ন দেশ যেন তাদের নাগরিকদের সরিয়ে না নেয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছে হু। করোনাভাইরাস যেন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে না পড়ে, সেই লক্ষ্যেই এ ধরনের বার্তা দিয়েছে সংস্থাটি। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রাদুর্ভাবটি শীর্ষে উঠতে আরো ১০ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ, চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে গত ৩১ ডিসেম্বরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত: বিষধর চাইনিজ ক্রেইট বা চাইনিজ কোবরা করোনাভাইরাসের মূল উৎস হতে পারে।উহানে এবং চীনের যেসব স্থানে এই ভাইরাস দেখা দিয়েছে, সেসব স্থান শিল্ড করে দিয়ে যানবাহন চলাচল এবং বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । বেইজিং ও সাংহাইয়ের খ্যাত সব পর্যটন কেন্দ্রও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সারাদেশে বন্যপ্রাণী কেনাবেচায় অনির্দিষ্টকালীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে । ভাইরাস আক্রান্ত এলাকার মানুষ বাইরে যেতে পারছে না, আর বাইরের মানুষ সেখানে ঢুকতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশের ৫০০ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী চীনে আটকা পড়েছে। তারা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছে। দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে তারা। বাংলাদেশি এক ছাত্রী তার ফেসবুকে লিখেছে, আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। এদিকে, চীনের বিভিন্ন শহরে আমদানি-রফতানি না হওয়ায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। এতে খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে সেখানে থাকা বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় তাদের আত্মীয়-স্বজনরা চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে চীন থেকে তাদের নাগরিকদের ফেরত আনার ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, চীন থেকে ফেরত আসা তাদের ৬০০ নাগরিককে মূল ভূখন্ডে নেওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখবে, যা মূল ভূখন্ড থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই অবস্থায় চীন সরকার উহান থেকে শত শত বিদেশী নাগরিক উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে গত ২৯ জানুয়ারি। অন্যদিক, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশের সব সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আপাতত; দেশের আটটি বিভাগের সকল জেলাসদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ইউনিট খোলা হবে। গত ২৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ভাইরাস সনাক্ত করার তেমন ব্যবস্থা নেই এদেশে। এছাড়া, বাংলাদেশে চলমান বড় নির্মাণ প্রকল্পগুলোর প্রায় সবগুলোতেই জড়িত আছেন অনেক চৈনিক। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় লাখেরও বেশি চীনা কর্মী কর্মরত রয়েছেন। এদের বেশির ভাগই ছুটি নিয়ে আসা-যাওয়া করেন। এসব চীনা নাগরিকের অনেকেই এখন নববর্ষের ছুটিতে চীনে অবস্থান করছেন। ফেরত আসার পর তাদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তাদেরকে ফেরত আসতে নিরুৎসাহী করা হচ্ছে। কিন্তু এটা হলে পদ্মা সেতুসহ বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বেড়ে যেতে পারে ।
২০১৯ এনসিওভি ভাইরাসের বিশ্লেষণে ধরা পড়েছে যে, নতুন প্রজাতির ভাইরাসটি তৈরি হয়েছে দুটো করোনাভাইরাসের সমন্বয়ে। এ দুই ভাইরাসের একটি এসেছে বাদুড় থেকে। এছাড়া চীনা বিজ্ঞানীদের দলটি যে সব, তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তাতে দেখা যায়, মানুষের ওপর হামলার আগে শেষ বারের মতো এ ভাইরাসের দেখা মিলেছে সাপের শরীরে। ভাইরাসের গায়ের কিছু জৈব আমিষ বা বায়োলজিক্যাল প্রোটিনের ভিত্তিতে এটি শনাক্ত করা গেছে। এসব আমিষের কারণেই ভাইরাস পোষক বা হোস্টের দেহকোষে হামলা চালাতে পারে। এ ভাইরাসের রূপান্তরিত রূপটিই হলো ২০১৯-এনকোভি এবং এটি সহজেই মানুষের দেহকোষে হামলার সক্ষমতা রাখে। করোনাভাইরাস ভাইরাসেরই একটি পরিবারের সদস্য, যা শ্বাসযন্ত্রের প্রক্রিয়ায় সংক্রমণ ঘটায়। নতুনটিসহ সাতটি করোনাভাইরাস রয়েছে। ডবিøউএইচও অস্থায়ীভাবে নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে ‘২০১৯-এনসিওভি’। ২০০২ ও ২০০৩ সালে মারাত্মক প্রাদুর্ভাবের পেছনে সার্স করোনাভাইরাস ছিল। সার্সে প্রায় নয় হাজার মানুষ আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়। সার্স প্রাদুর্ভাবের এক দশক পর ২০১২ সালে মার্স প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, যা এখনো চলমান। মার্স ভাইরাসে ২,৪৯৪ জন আক্রান্ত হয়। তন্মধ্যে মারা যায় ৮৫৮ জন, যার বেশির ভাগ ঘটে আরব উপদ্বীপে। উহানের নতুন করোনাভাইরাস এ ভাইরাসগুলো থেকে আলাদা। তবে আগে কখনো এর প্রাদুর্ভাব মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। করোনাভাইরাস কতটা মারাত্মক, তা আসলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। বলা হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তো বটেই, হাঁচি-কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। এদিকে, চীনের এক দল বিজ্ঞানী বলেছেন, প্রাণঘাতী ভাইরাস ২০১৯ এনসিওভি সম্ভাব্য উৎস হচ্ছে সাপ। জেনেটিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি একটি চীনা রেস্তোরাঁয় বাদুরের স্যুপের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সন্দেহ করা হচ্ছে যে এ ভাইরাস ছড়ানোর সঙ্গে বাদুড়ে যোগসাজশ রয়েছে। জার্নাল অব মেডিকেল ভাইরোলজিতে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাজারে কেনাকাটার সময়ে নানা বুনো প্রজাতির সংস্পর্শে এসেছেন। এসব বাজারে জীবিত হাঁস-মুরগি, সমুদ্রজাত খাদ্য বা সি ফুড, বাদুড় এবং সাপসহ অনেক কিছুই বেচাকেনা হয়। অপরদিকে দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বলা হয়েছে, সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড এই আরএনএ ভাইরাসকে তৈরি করা হয়েছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ছোবলে শত শত প্রাণনাশ করা সম্ভব। উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল দীর্ঘ সময় ধরেই। হয় সেখান থেকেই ভাইরাস কোনভাবে বাইরে চলে গেছে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবেই সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের ব্যাপারে গত ২৬ জানুয়ারি বিবিসির খবরে প্রকাশ,’চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘সংক্রমিত মানুষের দেহে কোন লক্ষণ দেখা দেয়ার আগেই করোনাভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। করোনাভাইরাস এর আগেকার সার্স বা ইবোলা রোগের ভাইরাসের মতো নয়। তাই এটি মোকাবিলা করা কঠিন। কারণ, মানুষের দেহে এটি ঢোকার পর দু›সপ্তাহ পর্যন্ত কোন লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু তখনও এটা একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে। তাই করোনাভাইরাস অনেক বেশি বিপজ্জনক এবং মোকাবিলা করা অনেক বেশি কঠিন। চীনের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বলছেন, বিজ্ঞানীরা সাফল্যের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের একটি প্রজাতি চিহ্নিত করতে পেরেছেন এবং এর একটি টিকা তৈরির জন্য কাজ করছেন। ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী এবছরে ১১ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের অনুমান সত্যি হলে এই সংখ্যা সার্স ‘এ আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে বেশি’। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে চীনে চান্দ্র নববর্ষের ছুটির মেয়াদ তিনদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে । এছাড়া, করোনাভাইরাস আতঙ্কে চীনে বেশ কিছু ক্রীড়া প্রতিযোগিতা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু প্রতিযোগিতা বাতিল করা হয়েছে এবং ভেন্যু বদল করা হয়েছে কয়েকটির।
যুক্তরাজ্যের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশাস ডিজিস অ্যানালাইসিসের বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চীনের ভেতরে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। তারা বলছেন ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, যেটি এই ভাইরাসের এত বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারার ‘একমাত্র যৌক্তিক ব্যাখ্যা।’ বিজ্ঞানীদের অনুমান, একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে আড়াইজন মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বে এ নিয়ে মহাআতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে । মানুষ চলাচল হ্রাস করেছে । ফলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পর্যটন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়ে বিশ্বের চলমান মন্দা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। ইতোমধ্যেই চীনের হুবেই প্রদেশের পাঁচটি শহরে রেস্টুরেন্ট ও স্টোরগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে ম্যাকডোনাল্ড’স ও স্টারবাকস। ম্যাকডোনাল্ড’স জানায়, ২৪ জানুয়ারির মধ্যে উহান, ইঝু, হুয়াংগ্যাং ও কিয়ানজিয়াং ও শিয়ানতাও শহরের সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের হুমকি এবং বেশকিছু এলাকায় গণপরিবহন সেবা বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ম্যাকডোনাল্ড’স। ২০১৮ নাগাদ চীনে তিন হাজার রেস্টুরেন্ট ছিল ম্যাকডোনাল্ড’সের । এছাড়া, চীনে একটি স্টোর বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা অ্যাপল। একই সঙ্গে চীন ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সতর্ক করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ব্যাপারে অ্যাপলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চীনে তাদের ভোক্তার সংখ্যা কমে গেছে। লোকজন এখন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। এছাড়া কর্মীদের এই ভাইরাসে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকায় তারা স্টোর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। ফিচ রেটিংস জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তীব্রভাবে বাড়তে থাকলে এশিয়ার সেবা খাতের কার্যক্রম, বিশেষ করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। এশিয়ার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও হংকংয়ের মতো অর্থনীতিগুলো এ ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অন্যদিকে, এশিয়ার শেয়ারবাজার ও সয়াবিনের দামেও ধস নেমেছে। ভয়ে ও আতঙ্কে চীনের সঙ্গে থাকা সীমান্ত সিলগালা করে দিয়েছে মঙ্গোলিয়া। সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। স্থগিত করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। স্থলবেষ্টিত এ দেশটি গত ২৭ জানুয়ারি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যা’হোক, করোনাভাইরাস হচ্ছে এক ধরনের ভাইরাস, যার কারণে শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। মার্স এবং সার্সও করোনা ভাইরাস গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। অন্য এক খবরে প্রকাশ, করোনাভাইরাসের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রে তীব্র সংক্রমণ দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত এর কোনও সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক পাওয়া যায়নি। যে কারণে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। তবে করোনাইরাসে মৃতদের সিংহভাগই বয়স্ক বা যাদের আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, এমন ব্যক্তি। করোনাভাইরাসের লক্ষণ: জ্বর দিয়ে এ রোগের লক্ষণ শুরু হয়। জ্বরের সঙ্গে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীরে ব্যথা থাকতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। সাধারণ ফ্লুর মতোই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। কারও ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও হতে পারে। মানুষের দেহে ভাইরাসটি সংক্রমণের পর ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু কিডনি, ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্র কিংবা ফুসফুসের রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে এটি নিউমোনিয়া, রেসপিরেটরি ফেইলিওর অথবা কিডনি অকার্যকারিতার দিকে মোড় নিতে পারে। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। তবে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু সম্ভাবনা আছে। সেই সতর্কগুলো হচ্ছে: ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করা। গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা। প্রচুর ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা। ঘরে ফিরে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়া। কিছু খাওয়া কিংবা রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া । ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ করা। ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলা। এসব করা গেলে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। উল্লেখ্য যে, গত ২৪ জানুয়ারি এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রস্ততকারক মোদার্না ঘোষণা দিয়েছে, নতুন এই ভাইরাসের জন্য একটি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করতে তারা কোয়ালিশন ফর ইপিডেমিক প্রিপার্ডনেস ইনোভেশন থেকে অনুদান পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই স্ট্রেনের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছেন। যেভাবে করোনাভাইরাস রুখতে ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, তাতে কয়েক মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলক কিছু ভ্যাকসিন প্রস্তুত হতে পারে। যদিও ব্যাপক ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আরও সময় লাগবে। অপরদিকে,অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে প্রথমবারের মতো গবেষণাগারে করোনাভাইরাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে মনে করছেন তাঁরা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।