Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনাভাইরাস : আতঙ্ক নয় সচেতনতাই কাম্য

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি নোভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এ আতঙ্ক ভাইরাসের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। উহানসহ বেশ কয়েকটি চীনা শহরে বহিরাগতদের প্রবেশ ও বাসিন্দাদের চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপসহ ভাইরাস শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধে নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণের পরও চীনের গন্ডি পেরিয়ে ভাইরাস এশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ার খবরে আতঙ্ক বেড়ে যাচ্ছে। তবে এটা কিছুটা স্বস্তির ব্যাপার যে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসে ইতিমধ্যে সাড়ে চার হাজার মানুষ আক্রান্ত হলেও মৃতের সংখ্যা শতাধিকের বেশি নয়। এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১০৬ জন বলে জানা যায়। প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দুই সপ্তাহে দেড়শর কম। এতে এটাই প্রমান হয়, ভাইরাস সংক্রমন ছড়িয়ে পড়া রোধে চীনা প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো কার্যকর ভ‚মিকা রাখছে। বিষয়টি নিয়ে লুকোচুরি বা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা না করে চীনা সরকার শুরু থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে এবং নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রতিরোধ মূলক পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নিয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলো একইভাবে কার্যকর উদ্যোগ নিলে ভাইরাসের ব্যাপতা প্রতিরোধ করা অসম্ভব নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সার্স ভাইরাস, সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা ভাইরাসের মত মারাত্মক প্রাণঘাতি ভাইরাসের বিস্তার রোধে সফল হয়েছে বিভিন্ন দেশ।

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে কড়া নির্দেশ জারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীন আমাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশিদার ও বিনিয়োগকারী দেশ। চীন ও বাংলাদেশের শত শত নাগরিক প্রতিদিন এই দুই দেশে যাতায়াত করেন। এখনো বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত না হলেও চীনসহ যে সব দেশ থেকে অসংখ্য যাত্রী প্রতিদিনই বাংলাদেশে যাতায়াত করেন তেমন বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর এবং প্রতিবেশী দেশ নেপালেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যাওয়ায় আমাদের জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। এহেন বাস্তবতায় চীনে শত শত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কর্মী ও পর্যটক আটকা পড়েছেন। তাদেরকে উপযুক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শীঘ্রই দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং বেশ কিছুদিন উপযুক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখতে হবে। দেশের বিমানবরাতগেুলোতে ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার বিমান যাত্রিকে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বলে গতকাল প্রকাশিত খবরে জানা যায়। একইভাবে দেশে ২৪টি প্রবেশ পথে হেল্থ ডেস্ক চালু করা হয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থে এ ধরনের ব্যবস্থা ও সর্তকতা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি বা অবহেলা করার সুযোগ নেই।

দেড়যুগ আগে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল চীন। সে সময়ে ভাইরাস সংক্রমন রোধে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়ে মাত্র ৭ দিনে তা সম্পন্ন করার অনন্য রেকর্ড তৈরী করেছিল চীন সরকার। এবং অত্যন্ত সফলভাবেই সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করেছিল চীনা স্বাস্থ্য বিভাগ। এবার চীন আরো বেশি সতর্ক এবং উদ্যোগী এবং তৎপর। করোনাভাইরাসের এপিসেন্টার উহান শহরে হাজার সয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মানের কাজ অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বলে জানা যায়। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ২৫ হাজার বর্গমিটার আয়তনের হাসপাতাল নির্মান শেষ করতে যাচ্ছে চীনা প্রকৌশলীরা। চীনা সীমান্তবর্তি দেশগুলো ভাইরাসের ভয়ে সীমান্ত সিলগালা করে দিয়েছে।তবে বিশ্বায়ণের এই যুগে চীনের মত দেশের সাথে সব ধরনের লেনদেন ও যোগাযোগ বন্ধ রাখা অসম্ভব। তা ছাড়া চীনের সব শহরে এখনো এই ভাইরাস ছড়ায়নি। তবে মহাসাগরের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা মহাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চীনের অভিজ্ঞতা ও পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে আরো সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা ভাইরাস মানবদেহে প্রকাশিত হতে বেশকিছুদিন সময় নেয়। অতএব সম্ভাব্য ব্যক্তিদের উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক নির্দেশনা সময়োপযোগী। ইতিমধ্যে গৃহিত স্বাস্থ্য বিভাগের পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট কিনা তা মূল্যায়ণসহ বাড়তি উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে রোগ বা ভাইরাসের সংক্রমনের চেয়ে সৃষ্ট আতঙ্ক এবং ভীতির কারণে ব্যাপক সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। করোনাভাইরাস মহামারি আকারে দেখা দেয়নি। আতঙ্ক বা ভীতিকর প্রচারনা নয়, করোনাভাইরাসের হুমকি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সব দেশকে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ একযোগে ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। জনসচেতনতা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষত দেশের সব বিমানবন্দর, নৌ ও স্থল সীমান্তপথগুলোতে কড়া নজরদারি রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন