পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটির পর একটি বিস্ময়কর উদ্ভাবন হচ্ছে। উপরন্তু ক্রমান্বয়ে তার অনেকগুলোর উন্নতকরণ হচ্ছে। তাতে কল্পনাজগতের শিরোমণি কবি, সাহিত্যিক ও জ্যোতিষবিদরা পর্যন্ত হতবাক হচ্ছেন। তারা নীরবে-নিভৃতে ভাবছেন, এও কি সম্ভব? না, এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে তুলছেন আধুনিক বিজ্ঞানী-প্রযুক্তিবিদরা। তাদের এই জয়যাত্রা শুধুমাত্র ধরিত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পৃথিবী ছেড়ে চাঁদ, সূর্য, মঙ্গল ইত্যাদি গ্রহ-নক্ষত্রেও বিস্তৃত। দূর অতীতের বিষয় বাদ দিয়ে অতি সা¤প্রতিক বিষয়গুলোর অন্যতম হচ্ছে: পিউ রিসার্চ’র গবেষণা রিপোর্ট মতে, ‘২০৬০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ৯৬০ কোটিতে দাঁড়াবে।’ সে মতে, এই শতকের শেষপ্রান্তে বিশ্বের মোট লোকসংখ্যা হাজার কোটির মতো দাঁড়াবে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের খাওয়া-পরা, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির সংকুলান নিয়ে বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ, বর্তমানে ৭০০ কোটির মতো লোকেরই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ৮০ কোটির মতো মানুষ এখনও দরিদ্র। তারা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থায় লোকসংখ্যা বর্তমানের চেয়ে দেড়গুণ বৃদ্ধি পেলে মহাসংকট সৃষ্টি হবেই। তাই তাদের চিন্তিত না হয়ে উপায় কি? কিন্তু না, যিনি এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, তার দায়িত্ব সৃষ্টির কল্যাণ করা। তাই সৃষ্টির কল্যাণে একটির পর একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হচ্ছে। এসব মহান ¯্রষ্টার সৃষ্টি মানুষ দ্বারাই সম্পাদিত হচ্ছে। যেমন: মানুষের বাসোপযোগী একটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে স¤প্রতি। নাসা গত ৬ জানুয়ারি জানিয়েছে, ‘পৃথিবীর অদূরেই একটি বাসযোগ্য গ্রহের খোঁজ পাওয়া গেছে। নতুন এই গ্রহ পৃথিবী থেকে মাত্র ১০০ আলোকবর্ষ দূরে। পৃথিবীর আকৃতির এই গ্রহের নাম দেওয়া হয়েছে ‘টিওআই৭০০ডি’। এটি ‘টিওআই৭০০’ নামের একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় তিন লাখ কিলোমিটার। সেই হিসাবে এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাই এক আলোকবর্ষ। নাসার গ্রহ অনুসন্ধানকারী কৃত্রিম উপগ্রহ টেস নতুন এই গ্রহ আবিষ্কার করেছে। ২০১৮ সালে টেস উৎক্ষেপণ করা হয়। টিওআই৭০০ডি গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে ২০% বড় এবং ৩৭ দিনে টিওআই৭০০ নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। এ ছাড়া পৃথিবী সূর্য থেকে যে শক্তি পায়, তার ৮৬% শক্তি এই গ্রহ তার নক্ষত্র থেকে পায়। এর উপরিভাগে রয়েছে সমুদ্র ও বায়ুমÐলে রয়েছে কার্বনডাই অক্সাইডের আধিক্য। গ্রহটির এক অংশ সবসময় তার নক্ষত্রের দিকে কাত হয়ে আছে, অনেকটা পৃথিবী ও চাঁদের মতো। স্মরণীয় যে, এর আগে চাঁদ ও মঙ্গলে মানুষের বাসস্থান গড়ে তোলার ও ভ্রমণ করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এসব গ্রহ-নক্ষত্রে খাদ্যেরও অভাব হবে না এবং তা পৃথিবী থেকেও নিতে হবে না। চীন ইতোমধ্যেই মহাকাশে কৃষি কাজ শুরু করেছে। এছাড়া, বিজ্ঞানীরা অফুরন্ত বাতাস থেকে খাদ্য উৎপাদনে সফল হয়েছে। ‘বাতাস দিয়ে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য’ তৈরি করেছেন ফিনল্যান্ডের কয়েকজন বিজ্ঞানী। তারা বলেছেন, ইলেক্ট্রোলাইসিস ব্যাবহার করে পানি থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করা হয়। তারপর সেই হাইড্রোজেন, বাতাস থেকে নেয়া কার্বন ডাইঅক্সাইড ও খনিজ পদার্থ মাটিতে পাওয়া যায় এমন এক প্রকার ব্যাকটেরিয়াকে খাইয়ে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য তৈরি করা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘সোলেন’। যা খেতে একদম স্বাদহীন। এই প্রোটিন সরাসরি খাওয়া নয়, বরং অন্য ধরনের খাবারের সাথে এটি যুক্ত করে পুষ্টিগুণ বাড়ানো যায়। এটিকে ব্যাবহার করে বিস্কুট, পাস্তা, নুডুল বা রুটি এমনকি কৃত্রিম মাংস বা মাছ তৈরি করা সম্ভব। এই প্রোটিন গবাদিপশুর খাবারও হতে পারে। ফ্যাক্টরি পর্যায়ে সোলেন তৈরির কাজ তারা শুরু করতে চান ২০২৫ সালে। অপরদিকে, মঙ্গলের বায়ুমÐলে এই প্রথম হদিস মিলেছে অক্সিজেন অণুর, যা পৃথিবীতে প্রাণের বেঁচে থাকার প্রধান জ্বালানি। ফলে, এই আবিষ্কার ভিন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করে তুলেছে। নাসার রোভার ‘কিউরিওসিটি’র পাঠানো তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে লেখা সেই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ: প্ল্যানেটস’-এর গত নভেম্বরের সংখ্যায়।
মহাকাশে রোবটের জন্য হোটেল নির্মাণ করেছে নাসা। এই হোটেলের সার্বিক তত্ত¡াবধান ও সেবায়ও নিয়োজিত থাকবে রোবট। এই হোটেলটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বাইরে অবস্থিত। ভবিষ্যতে সেখানে নভোযাত্রীরা গেলে তাদের সহায়তা ও থাকার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে এই রোবটগুলো। উপরন্তু, তারা মহাকাশ গবেষণার নানা কাজে ব্যবহৃত হবে। রোবটের ধাতব শরীরটা এবার মানুষের মতোই অনুভূতিতে ভরিয়ে দিতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। এ রোবটের শরীরে থাকবে মানুষের মতোই চামড়া। তাতে ব্যথা-বেদনা-ভালোবাসা অর্থাৎ সব অনুভূতিই থাকবে ষোলো আনা। এটাকে জড়িয়ে ধরলে লজ্জা পেয়ে ভালোবাসা জানাবে। ঠাÐা-গরম, হাসি-কান্না আদ্যোপান্ত মানুষের মতোই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি থাকবে। বিশ্বের প্রথম এমন মানবিক রোবট তৈরি করছেন মিউনিখ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রোবটিক্স জানিয়েছে, এমন কৃত্রিম চামড়া তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার মধ্যে থাকবে মানুষের ত্বকের মতোই সেন্সর। ছোট ছোট কৃত্রিম কোষ দিয়ে তৈরি হয়েছে সেই বিশেষ চামড়া। অনুভূতি আদান-প্রদানের জন্য তার মধ্যে থাকবে কৃত্রিম স্নায়ুতন্ত্র। কোষের মাধ্যমে বার্তা চলে যাবে মস্তিষ্কে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ ষ্টেশনের যন্ত্রপাতিও মেরামত করা হচ্ছে মানুষের ওপেন হার্ট সার্জারির মতো। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের যাবতীয় কাজকর্ম- স্পেস সংক্রান্ত বিভিন্ন ডেটা সংগ্রহ, ন্যাভিগেশন ও যোগাযোগের জন্য কম্পিউটারগুলো খুবই প্রয়োজনীয়। এসব কম্পিউটারে ত্রুটি দেখা দিলে স্পেস স্টেশন অকেজো হয়ে যাবে। এমনকি স্টেশন নিজের কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্নও হয়ে যেতে পারে। কম্পিউটারগুলোকে পৃথিবীতে এনে মেরামত করা সম্ভব নয়। কারণ পুরো সেটআপ এমনভাবে করা, ওগুলো স্পেস স্টেশন থেকে বিচ্ছিন্ন করলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে। এ অবস্থায় কম্পিউটারের ত্রুটি সারাতে ইউরোপীয় প্রকৌশলী ও রাশিয়ার মহাকাশচারীরা ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’র পদ্ধতি বের করেছেন। অনেকটা মানবদেহে হৃৎপিÐকে উন্মুক্ত করে তার শিরা-ধমনী, পেশিতে অস্ত্রোপচারের মতোই কম্পিউটারগুলোর সার্জারি করা হয়। ২০১৮ সালের শেষে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি ও নভেম্বরে তিন ধাপে এই ‘অস্ত্রোপচার’ করা হয়। নাসা জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পর্যটক পাঠাবে। সেখানে থাকা-যাওয়া-আসা, সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৫.৮০ কোটি ডলার! তবে খুব অল্প সংখ্যক পর্যটকই প্রতি বছর সেখানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তারা সেখানে তিরিশ দিন পর্যন্ত থাকতে পারবেন। ‘স্পেস এক্স’ ও বোয়িং তাদেরকে নিয়ে যাবে। ২০২০ সাল হতে পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা মহাকাশে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রাত কাটাতে পারবেন। এই মুহূর্তে নাসার কোন নভোচারী যখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান, তাদের পেছন খরচ পড়ে আট কোটি ডলার। এখন যদি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নাসা সেখানে পর্যটক পাঠাতে শুরু করে, তখন গড়ে খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫.৮০ কোটি ডলার। অপরদিকে, ভার্জিন গ্যালাকটিক জানিয়েছে, তাদের মহাকাশ ফ্লাইটের উদ্বোধন হবে এবছরই। এ পর্যন্ত ৬০০ লোক তাদের মহাকাশ ভ্রমণের টিকেট কিনেছে। এছাড়া, ‘বøু অরিজিন’ আশা করছে, তাদের মহাকাশ ফ্লাইটও এবছরই শুরু হবে।
মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, ‘মানবসভ্যতার ইতিহাস হয়তো এই শতক পর শেষ হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ মানবজাতি তার নিজের তৈরি অত্যাধুনিক আবিষ্কারের নিচে চাপা পড়তে পারে’। ড. হকিং এর কথা অমূলক নয়। বিশ্বে এখন যে পরিমাণ পরমাণু বোমা আছে তাতে ৩৩ বার পৃথিবীকে ধ্বংস করা যাবে। তথাপিও পরমাণু বোমা তৈরির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমনকি এটি বহনের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের প্রচÐ প্রতিযোগিতাও চলছে। সর্বশেষ নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্রের গতি শব্দের চেয়ে বিশ গুণ বেশি। এটি নির্মাণ করেছে রাশিয়া। গত ২৭ ডিসেম্বর এটি চালু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গত ২৮ ডিসেম্বর বিবিসির খবরে প্রকাশ, শব্দের চেয়ে বিশ গুণ গতিতে চলতে সক্ষম অত্যাধুনিক হাইপারসোনিক মিসাইলের প্রথম রেজিমেন্ট মোতায়েন করেছে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এই মিসাইলগুলো শব্দের চেয়ে বিশগুণ গতিতে ছুটতে পারবে এবং রাশিয়াকে অন্যান্য দেশের চেয়ে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। এসব মিসাইলে গাইড সিস্টেম থাকছে, যা এগুলোর চলার সক্ষমতা বাডড়য়ে দেবে এবং প্রতিরোধ করা অসম্ভব করে তুলবে। এর আগে তিনি বলেছেন, এই মিসাইল ব্যবস্থাটি বর্তমান বা ভবিষ্যতের যেকোনো মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পারবে। বিশ্বের আর কোন দেশের কাছে সুপারসনিক অস্ত্রও নেই, আন্তঃ-মহাদেশীয় মিসাইল দূরের কথা। অপরদিকে, মহাকাশে স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ বাহিনী গঠন করেছে গত বছরের শেষ প্রান্তে। নতুন গঠিত এই বাহিনীর নাম ‘মার্কিন মহাকাশ বাহিনী’। মার্কিন বিমানবাহিনীর সেক্রেটারি বারবারা ব্যারেট বলেছেন, বিমানবাহিনী ও বেসামরিক ১৬ হাজার কর্মকর্তা নিয়ে এই সামরিক বাহিনী গঠিত হবে। এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এয়ার ফোর্স জেনারেল জে. রেমন্ড, যিনি বর্তমানে মার্কিন স্পেস কমান্ডের প্রধানের দায়িত্বে আছেন। প্রথম বছরে নতুন এই বাহিনীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর পুরো সামরিক বাহিনীর জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নতুন এই বাহিনী মার্কিন বিমানবাহিনীর অধীনে কাজ করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২০ ডিসেম্বর এই নতুন বাহিনীর অনুমোদন দিয়ে বলেছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে মহাকাশই হবে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। জাতীয় নিরাপত্তা যখন গুরুতর হুমকির সম্মুখীন, মহাকাশে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা তখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, মহাকাশের পরিস্থিতি গত প্রজন্মে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এক সময় যেটি শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ছিল, সেই মহাকাশ এখন তুমুল প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বাহিনী গঠনে চীন-রাশিয়া চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সেখানেই তারা সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে হয় না। পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে তারাও মহাকাশ বাহিনী গঠন করবেই। তেমনি অন্য কিছু দেশও। ফলে মহাকাশেও পৃথিবীর মতো শুরু হয়ে যাবে শক্তিমত্তা, তথা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জোর লড়াই!
রাশিয়া ইন্টারনেটের মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। একটা একক নেটওয়ার্কে যুক্ত থেকে বিশ্বজুড়ে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে ইন্টারনেট। এবার ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের ধারণাটিকেই বদলে দিতে যাচ্ছে রাশিয়া। দেশটি জানিয়েছে, তারা এমন ধরনের নেটওয়ার্ক নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে, যাতে তারা একক নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘বিকল্প ইন্টারনেট’ ব্যবস্থায় থাকতে পারে। এই ‘বিকল্প ইন্টারনেটে’র সফল পরীক্ষাও চালিয়েছে দেশটি। রাশিয়া তাদের নতুন নেটওয়ার্ককে বলছে ‘আনপ্লাগড ইন্টারনেট’। দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এ পরীক্ষার সময় কোনও ধরনের পরিবর্তন টের পাননি। এ ঘটনার পর বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের মতো বিকল্প পথেই হাঁটছে রাশিয়া। নিজেদের তথ্যের নিরাপত্তায় বিকল্প ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করছে দেশটি। এখন বিভিন্ন দেশ সমুদ্রের তলদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া তারের মাধ্যমে বৈশ্বিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত। যার বিভিন্ন জায়গায় গ্রন্থির মতো এক ধরনের সংযোগস্থল রয়েছে। সেখান থেকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ডাটা স্থানান্তর হয়। কিন্তু রাশিয়া যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, তাতে বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সেই সংযোগ স্থলগুলোকে বন্ধ করে অথবা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদেশি ডাটার আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। চীন আবার মহাকাশে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এ ব্যাপারে গত ২ ডিসেম্বর শিনহুয়ার খবরে প্রকাশ, মহাকাশে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে চীন। এই কেন্দ্র স্যাটেলাইট ও পৃথিবীতে দুর্যোগ আক্রান্ত দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের এক নির্ভরযোগ্য সমাধান হবে। এই কেন্দ্রটির ওজন হবে ২০০ টন। ২০৩৫ সালের মধ্যে এর নির্মাণ সম্পন্ন হবে। এটি এ যাবত কালের সবচেয়ে বড় মহাশূন্য প্রকল্প হতে চলেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে বিশাল একটি উপগ্রহের মতো, যা পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করে পৃথিবীর চারপাশে নিজ কক্ষপথে ঘুরবে। এতে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে, তাকে প্রথমে ক্ষুদ্র তরঙ্গ অথবা লেজার রশ্মিতে রূপান্তরিত করা হবে। পৃথিবীতে তা গ্রাহক যন্ত্রের মাধ্যমে গৃহীত হবে। পরবর্তীকালে তা আবার বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হবে। চীনের গবেষক ওয়াং লি বলেন, ‘মহাকাশ ভিত্তিক সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সূর্যের সেই শক্তিকে আহরণ করবে যা কখনও পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় না। পরে মানুষের ব্যবহারের জন্য সেই শক্তিকে মাইক্রোওয়েভ বা লেজারে পরিণত করে পৃথিবীতে তারহীন মাধ্যমে পাঠানো হবে। স্মরণীয় যে, চীন ইতোপূর্বে জানিয়েছে, তারা কৃত্রিম চাঁদ ও সূর্য তৈরি করেছে। গত ২৬ নভেম্বর শিনহুয়ার খবরে প্রকাশ, নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এই সূর্য অনেকটা সত্যিকার সূর্যের মতোই কাজ করবে। এমনকি উত্তাপ সূর্যের চাইতেও ১৩ গুণ বেশি হবে। এর উত্তাপ হবে ২০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩৬০ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট। যেখানে সূর্যের কেন্দ্রে উত্তাপ ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২৭ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট। ২০২০ সালে এটির কার্যকর হবে। এই কৃত্রিম সূর্যের নাম দেয়া হয়েছে এইচএল-টুএম।
অসংক্রমিত ব্যাধির অনেকগুলো আছে বংশীয় ব্যাধি, যাকে বলে জেনেটিক ডিজিজ, যার অনেকগুলো মারাত্মক-দুরারোগ্য। সহজে নিরাময়ী নয়। এরূপ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ চরম কষ্ট ভোগ করছে। অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে। এই অবস্থা চলছে আদিকাল থেকেই। কিন্তু এই দুর্দিনের অবসান ঘটতে চলেছে। জিন সংশোধন বা পরিবর্তন করতে সফল হয়েছেন চীনের বিজ্ঞানী হে জিয়ানকুই। ইতোমধ্যেই চীনে পৃথিবীর প্রথম সংশোধিত জিন নিয়ে জন্মিয়েছে এইডস-সুরক্ষিত দুই যমজ শিশু৷ বিজ্ঞানী জিয়ানকুই ২০১৮ সালে তাঁর এই গবেষণা নিয়ে একটি ইউটিউব ভিডিও প্রকাশ করেন৷ তাতে তিনি বলেন, ‘সিআরআইএসপিআর’ নামের একটি জিন সিকোয়েন্স ব্যবহার করে তিনি বাচ্চা দুটির জিন সংশোধন করেন। কারণ, তাদের বাবার শরীরে এইডস ভাইরাস রয়েছে। তাদের বাবা-মা ডিজাইনার শিশু চান না। অবশ্য এই অবিস্মরণীয় আবিষ্কারটি অন্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা এখনও স্বীকৃতি পায়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবেও চীন স্বীকৃতি দেয়নি। তাই বিষয়টি বিতর্কিত। আর সে কারণেই চীনের আদালত জিয়ানকুইকে তিন বছরের জেল দিয়েছেন গত ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু মানুষ সুস্থ থাকতে চায়, ব্যাধিমুক্তভাবে বাঁচতে চায়। এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আর সেটা করতে যা দরকার, মানুষ তাই-ই করবে। কোন বাধা-বিপত্তিতে আটকানো যাবে না। তাই জিন সংশোধনের সফলতার প্রসার ঘটবেই।
রোবো-স্যুট পরে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরা এখন নিজে নিজেই খেতে পারছে, মেক-আপ করতে পারছে, তালায় চাবি ঘুরিয়ে খুলতে পারছে, টাকা গুণা-গুণতি করতে পারছে এবং কম্পিউটারে টাইপও করতে পারছে। তাদের শরীরের নার্ভ বা স্নায়ুগুলোকে ‘রিওয়্যার’ করা হয়েছে বা পুনঃসংযোগ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, মস্তিষ্কের দুরারোগ্য রোগ ব্যাটন ডিজিজ-এ আক্রান্ত মিলা মেকাভিচের বোস্টনের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তার ডিএনএ’র পুরো জিনোম সিকোয়েন্স করে তার জেনেটিক কোড বের করেন এবং কোন জেনেটিক মিউটেশনের কারণে তার এই রোগ হলো সেটিও তারা বের করে ফেলতে সক্ষম হন। এরপর তারা একটি বিশেষ ওষুধ তৈরি করে এবং মিলার উপরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে। মিলা এখন আগের চেয়ে বহু-গুণ ভালো রয়েছে। ওষুধটি ব্যাবহারের জন্য মার্কিন ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের অনুমতি পেয়েছে। অন্যদিকে, নতুন ধরণের একটি ওষুধ যেটিকে ডাকা হচ্ছে জিন-সাইলেন্সিং, নিরাময় অযোগ্য অসুখের চিকিৎসা করতে সমর্থ হয়েছে, যা আরএনএকে বিনাশ করে দেয়। জিন হচ্ছে শরীরের ডিএনএ-এর অংশ। জিনের মধ্যেই থাকে প্রোটিন যেমন হরমোন, এনজাইমের মতন বিভিন্ন প্রয়োজনীয় রসদের বøুপ্রিন্ট। আমাদের ডিএনএ সেলের নিউক্লিয়াসের ভেতরে বন্দী এবং সেলের প্রোটিন উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। যেজন্য আমাদের মানবদেহ ‘শর্ট স্ট্র্যান্ড’ বা ক্ষুদ্রাকৃতির ‘জেনেটিক কোড’ বা বংশানুক্রম তথ্যাদি ব্যাবহার করে। বার্তাবাহক এই জেনেটিক কোডের নাম ‘আরএনএ’। এছাড়া, বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরণের ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যেটি মানুষের মনকে পড়তে পারে এবং সেটিকে কথায় রূপান্তর করতে পারে।এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি ‘ইলেক্ট্রোড’ মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। এই ইলেক্ট্রোডের কাজ হচ্ছে মানুষের ব্রেন থেকে ইলেক্ট্রনিক সিগন্যাল গ্রহণ করে সেটি ঠোঁট, গলা, কণ্ঠনালী ও চোয়াল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। তারপর শক্তিশালী কম্পিউটারের মাধ্যমে এই মুখ ও গলার মুভমেন্ট প্রত্যক্ষ করে বিভিন্ন শব্দ উৎপন্ন করবে। সানফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষক টিম জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি মানুষকে, বিশেষ করে যারা কোনও রোগের কারণে কথা বলার শক্তি হারিয়েছে, আবার কথা বলার সুযোগ ফিরিয়ে দিতে পারে। উপরন্তু আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রমের মতন রোগের তীব্রতাকে কমিয়ে দিতে পারে এমন ওষুধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন ওষুধ-প্রস্তুতকারী বায়োজিন কোম্পানি। যার না দেওয়া হয়েছে ‘এডুকেনাম্ব’। এই ওষুধটি মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে জমা বিষাক্ত প্রোটিন দূর করতে পারে। যারা নিয়মিত সর্বোচ্চ মাত্রায় এই ওষুধ সেবন করছে তারা স্মৃতি ও শব্দ মনে রাখাসহ দৈনন্দিন কাজ যেমন বাজার-সদাই করা, কাপড়-চোপড় ধোওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও ভালোভাবে করতে পারছে। এই ওষুধটিকে এখনো বাজারে ব্যাবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি ওষুধটি অনুমোদন পায় তাহলে আধুনিক ওষুধের ইতিহাসে সেটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।