মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দিল্লির হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় প্রবল শৈত্যপ্রবাহও যেন হার মেনে যায় ওদের উষ্ণশোণিত তেজস্বীর কাছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এমন প্রতিবাদ চিত্র প্রায় মাসাধিক কাল অতিক্রম করে আজও সমানভাবে দুর্দমনীয় ও দীপ্যমান।
শাহিনবাগ যেন আজ সিএএ-বিরোধী দেশজোড়া আন্দোলনের সমস্ত শক্তির কেন্দ্র। সেখানে ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সততা ও অদম্য সাহসকে সঙ্গী করে, ‘আজাদি’র স্বপ্নকে বুকে নিয়ে রাজপথের মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন সদ্যোজাত শিশু থেকে নবতিপর বৃদ্ধারাও। প্রশ্ন উঠতেই পারে, স্বাধীন দেশে আবার নতুন করে কিসের আজাদি? তাদের কাছে এই আজাদি— সরকারি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থেকে নিশ্চিন্তের খোঁজে।
১৫ ডিসেম্বর থেকে শত শত মুসলিম মহিলা শাহিনবাগ নামে পরিচিত নয়াদিল্লির নিকটবর্তী একটি চৌরাস্তায় এই আন্দেলন শুরু করেছেন। গত ১২ ডিসেম্বর পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধন আইন অনুযায়ী, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। আইনটি সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছে, এদের মধ্যে অনেক বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে শাহিনবাগের বিক্ষোভ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কারণ এটি একটি খণ্ডিত সমাজের মহিলাদের নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ সমাবেশে পরিণত হয়েছে।
শাহিনবাগের বিক্ষোভ লক্ষণীয়ভাবে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আকর্ষণ করেছে। এই মহিলারা প্রায় ৬০ কোটি ভারতীয় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব করে যারা বাকস্বাধীনতা, সাম্যতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে বিশ্বাসী - এমন আদর্শ যেগুলি নাগরিকত্ব আইনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। গত ১২ জানুয়ারী, বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষ এই চৌরাস্তায় জমায়েত হয়ে তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছিল। তাদের দেখে ভারতের বিভিন্ন অংশের মহিলারাও উদ্বুদ্ধ হয়ে উত্তরপ্রদেশ, কানপুর, এলাহাবাদ ও পাটনায় একই রকম বিক্ষোভ শুরু করে।
শাহিনবাগের প্রতিবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভারতের ধর্মীয়ভাবে নিরপেক্ষ সমাজকে এক-ধর্মের জাতিতে পরিণত করা অসম্ভব। যারা প্রতিবাদ করছেন তারা ধর্মীয়ভাবে বৈচিত্র্যময় দেশ হিসাবে ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসের জন্য লড়াই করছেন। এই প্রতিবাদটি বিভিন্ন শ্রেণীর মুসলিম মহিলাদের দ্বারা শুরু করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে হিজাব পরেন; অনেকেই পরেন না। কেই অবিবাহিত, কেই সন্তানের জননী, কেউ বৃদ্ধা। কেউ উচ্চ শিক্ষিত, কেই অশিক্ষত।
প্রতিবাদকারীদের মধ্যে বিশিষ্ট হলেন তরুণ, শিক্ষিত মুসলিম মহিলারা যারা তাদের দেশপ্রেমের মাধ্যমে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরোধিতা প্রকাশ করেন এবং এটি ভারতের জন্য একটি নতুন সংজ্ঞা বিকাশ - যুবতী মহিলাদের উত্থান।
এই আন্দোলনের পুরোভাগে রয়েছেন মহিলারা। এই অবস্থান-বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সাময়িক ভাবে ঘুচে গিয়েছে ধনী-দরিদ্রের শ্রেণিবৈষম্যের বিস্তর ব্যবধান। আসমা বিবি, অশীতিপর বিলকিস বেগম বা ৭৫-এর নূরুন্নেসারা যেন এই আন্দোলনের চালিকা শক্তি। তাদের অভিভাবকত্বের স্নেহময়তায় চলতে থাকে সদাসতর্ক সুতীক্ষ নজরদারি। ছোট-বড় যে কোনও বিষয় তাঁদের ঘোলাটে, ছানি পড়া, ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন চোখের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। কে অভুক্ত, কে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল— সব কিছুই তারা দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন। বাড়ির কাজকর্ম ফেলে, নিশ্চিন্ত আশ্রয় থেকে অনেক দূরে, প্রবল শীতে লেপ কম্বলের উষ্ণতার ওমে আয়েশি রাত্রিযাপনকে ছুটি দিয়ে, দাদি আম্মার মতোই অগণিত মহিলারা তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে হাজির হচ্ছেন কোজাগরির এই রাজপথে। জীবনের অন্তিমকালে পৌঁছে শাহিনবাগের এই রাজপথই যেন এই মানুষগুলোর কাছে এখন অস্থায়ী বসত।
অচেনার ভিড়ে সারা দিনের কাজকর্ম সেরে সন্ধ্যায় একে একে হাজির হচ্ছেন কারখানার শ্রমিক থেকে শুরু করে অফিস ফেরত কর্মী, স্কুল শিক্ষক, অধ্যাপক, ডাক্তার, আইনজীবী ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকেরা ছোটদের পড়াশোনার দিকে লক্ষ রাখছেন, দেখিয়েও দিচ্ছেন তাদের স্কুলের হোমওয়ার্ক। প্রথিতযশা যে চিকিৎসককে দেখানোর জন্য তিন মাস ধরে অপেক্ষা করতে হত, আন্দোলনের ভিড়ে উপস্থিত তিনিও। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি নিজে হাতে সব সামলাচ্ছেন। যে শপিংমলের মালিকেরা প্রাচুর্যের চূড়ায় অবস্থান করেন, তিনিও নেমে এসেছেন রাস্তায়। শ্রমিক কর্মচারীদের থেকে খাবার ভাগ করে একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন রাতের আহার। ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচের অপূর্ব মেলবন্ধনের বিরল চিত্র দেখা যাচ্ছে শাহিনবাগের রাজপথের ধর্না মঞ্চে। এই ভাবে রাত বাড়তে থাকে, ক্লান্তিতে ঘুম জড়িয়ে আসে চোখে। সেই সময়ে অকস্মাৎ মাইক্রোফোন হাতে তুলে নেয় বাচ্চারা। গেয়ে ওঠে সমস্বরে আজাদির গান। ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে ছোটদের উদ্দামতায় নতুন করে জেগে ওঠে শাহিনবাগ। স্লোগান, কবিতায় ও গানে আবার মুখরিত হয় রাজপথের ধর্নামঞ্চ।
তারা জানেন, সিএএ-বিরোধী আন্দোলন শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আবদ্ধ থাকলে ধর্মীয় মেরুকরণ আরও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তারা এ-ও জানেন, অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা যোগ না দিলে, এই আন্দোলন অচিরেই নিষ্প্রভ হয়ে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা। শাহিনবাগের শান্তিপূর্ণ ধর্না-অবস্থানের এই আন্দোলন এইখানেই অন্য আন্দোলনের চেয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এখানে মুসলিম অমুসলিম বিবিধ মানুষের একত্র সহাবস্থানই আন্দোলনের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে। এই অরাজনৈতিক আন্দোলনকে হাতিয়ার করে কোনও রাজনৈতিক দল মাইলেজ কুড়োবে, কোনও ভাবেই সেটা হতে দেয়া যাবে না। শাহিনবাগ আন্দোলনের এই ধারা সংক্রামিত হয়েছে কলকাতার পার্কসার্কাস ময়দানেও। পার্কসার্কাসও যেন এখন হয়ে উঠেছে ‘মিনি শাহিনবাগ’। নাগরিকত্ব আইনের পুনঃসংশোধন ঘটিয়ে ধর্মীয় সমতা আনাই একমাত্র লক্ষ্য হোক। সূত্র: দ্য হিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।